নিজে একা সর্বোচ্চ ৪ গোল এবং আরও পাঁচ গোলের সহায়তার জন্য কোপা আমেরিকার গোল্ডেন বুট পেলেন আর্জেন্টিনার মেসি
স্পোর্টস ডেস্কঃ আর্জেন্টিনার দীর্ঘ ২৮ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটেছে গতকাল শনিবার ১০ জুলাই রাতে ব্রাজিলের মারাকানা স্টেডিয়ামে। আর্জেন্টিনার ডি মারিয়ার একমাত্র গোলে স্বাগতিক ব্রাজিলকে হারিয়ে কোপা
আমেরিকার শিরোপা লাভ করেছেন। রিও ডি জেনরিওর ঐতিহাসিক বিখ্যাত মারাকানা স্টেডিয়ামে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে হারিয়ে ১৯৯৩ সালের পর কোপা আমেরিকার ট্রফি জিতলো আর্জেন্টিনা। সতীর্থরা শূন্যে ভাসিয়ে উৎসব করেছেন দলের প্রাণভোমরাকে; গুরু লিওনেল স্কালোনিকে জড়িয়ে মেসি কেঁদেছেন পাওয়ার আনন্দে। কত কিছুই না সাক্ষী হয়ে থাকলো এই মারাকানা!
খেলা শেষে পুরুস্কার গ্রহণের জন্য গুটি গুটি পায়ে লিওনেল মেসি এগিয়ে চলেছেন মঞ্চের দিকে। অবচেতন মনকে হয়তো বিশ্বাস করাতে পারছিলেন না! কত অপেক্ষা; কত মান-অভিমান। তবুও ট্রফি ধরা দিচ্ছিল না খুদে ফুটবল জাদুকরের হাতে! কতবার হতে হতেও হলো না। এবার লাতিন আমেরিকার মর্যাদার ট্রফিটা হাতে নিয়ে দেরি করেননি; দিলেন গাড় চুম্বন। এরপর উল্লাস করতে করতে গেলেন সতীর্থদের কাছে; লাফিয়ে উঠলেন বেশ কয়েকবার!
স্বপ্ন পুরণের রাতে লিওনেল মেসি ছাড়িয়ে গেলেন নিজেকেও। এবার তার গায়ে যুক্ত হলো আরও একটি পুরস্কারের পালক। ক্লাবের হয়ে রেকর্ড সংখ্যকবার জিতলেও এবার দেশের হয়ে প্রথম গোল্ডেন বুট জেতেন আর্জেন্টাইন সুপারস্টার। এবারের কোপায় চার গোলের সঙ্গে পাঁচটি গোলে অ্যাসিস্ট করেন এলএমটেন। এতেই তার হাতে ওঠে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার। সমান চারটি গোল করেছেন কলম্বিয়ার লুইস দিয়াজ। তবে তার কোনো অ্যাসিস্ট ছিল না। এতেই পিছিয়ে পড়েন মেসি থেকে।
মেসি সর্বোচ্চ দুটি গোল করেন বলিভিয়ার বিপক্ষে। ১টি করে গোল করেন চিলি ও ইকয়েডরের বিপক্ষ। ফাইনাল ও গ্রুপপর্বের তৃতীয় ম্যাচ ছাড়া সব ম্যাচের অ্যাসিস্ট করেছেন। মেসি এর আগে লা লিগায় সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরষ্কার পান ৮ বার। আর ইউরোপিয়ান গোল্ডেন বুটও জেতেন রেকর্ড ৬ বার।
যদিও আর্জেন্টিনার অধিনায়ক মেসি গতকাল ফাইনালের মঞ্চে আলো ছড়াতে পারেননি। তবে শেষ দিকে মাত্র ৬ গজ দূর থেকে একটি সুযোগ পেয়েছিলেন কিন্তু ব্রাজিলের গোলরক্ষক এডারসনের কাছে বুদ্ধিমত্তায় হার মানতে হয়েছে। আর্জেন্টিনার একমাত্র গোলটি আসে ডি মারিয়ার পা থেকে খেলার ২২ মিনিটের সময়।
কোপা আমেরিকার ফাইনাল খেলার ২২ মিনিটে রেনান লোদির ভুলে ডি মারিয়া এডারসনকে ফাঁকি দিয়ে ব্রাজিলের জালে বল জড়ান ১-০ । ব্রাজিল ডিফেন্সের ওপর দিয়ে ডি পলের শট প্রথম সুযোগেই নিজের আয়ত্তে নেন ডি মারিয়া; লোদি থাকলেও তিনি বলের নাগাল পাননি। একা এডারসনকে ফাঁকি দিতে সমস্যা হয়নি অভিজ্ঞ ডি মারিয়ার। তিনি প্রথম আর্জেন্টিনা ফুটবলার যিনি ২০০৪ সালের পর কোপার ফাইনালে প্রথম গোল করেন।
ফাইনালের নায়ক ডি মারিয়া হলেও দলকে এই পর্যন্ত নিয়ে আসার পেছনের মূল কারিগর ছিল এই মেসিই। ছোট একটি পরিসংখ্যানেই তা বোঝা যায়। ফাইনালের আগে ৬ ম্যাচে একাই ৪ গোল করেছেন; আর ৫ গোল করিয়েছেন সতীর্থদের দিয়ে। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে আর্জেন্টিনার গোলে তার একারই অবদান ৬০ শতাংশ।
করোনাভাইরাসের মহামারীর মধ্যে ঘরবন্দী জীবনে রোমাঞ্চ নিয়ে এসেছে ফুটবল। ইউরো-কোপার ডামাডোলে ঘি ঢেলে দিয়েছে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার ফাইনালের মহারণ। মেসির হাতে ট্রফি ওঠায় রোমাঞ্চের আরও পূর্ণতা পেলো। শনিবার (১০ জুলাই) ব্রাজিলের সময় রাতে দুই দলের খেলোয়াড়রা মাঠে নামার আগে মারাকানায় চলে আলোর ঝলকানি। ঝাঁকজমকপূর্ণ লেজার শোতে তুলে ধরা হয় বিভিন্ন বিষয়। যা শেষ হয়েছে কোপা আমেরিকার ট্রফি ও আয়োজক কনমেবলের লোগোর প্রদর্শনীতে।
কবির আহমেদ/ ইবিটাইমস