আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ বর্ষীয়ান ভারতীয় অভিনেতা দিলীপ কুমার আজ বুধবার (৭ জুলাই) সকাল ০৭:৩০ মিনিটে মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে এই কিংবদন্তীর তার বয়স হয়েছিল ৯৮ বছর।
মুম্বাইয়ের হিন্দুজা হাসপাতালের পালমোনোলোজিস্ট ডা, জলিল পার্কার, যিনি দিলীপ কুমারের চিকিৎসার তত্বাবধান করছিলেন, টাইমস অব ইন্ডিয়াকে মি. কুমারের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। দিলিপ কুমারের ভেরিফায়েড টুইটার পেইজ থেকে সকাল ৮টার কিছুক্ষণ পর তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়।
১৯২২ সালের ১১ ডিসেম্বর বর্তমান পাকিস্তানের পেশোয়ারে জন্মগ্রহণ করেন দিলীপ কুমার। তার আসল নাম মোহাম্মদ ইউসুফ খান। হ্যাঁ অভিনেতার আসল নাম মহম্মদ ইউসুফ খান, যা অনেকেই জানেন না। তার বাবা লালা গুলাম আলি ছিলেন ফল ব্যবসায়ী। বাগান ও বেশ কিছু জমিও ছিল তাদের । মা আয়েশা বেগম ছিলেন গৃহবধূ ।
ছয় দশকের ক্য্যারিয়ারে তিনি ৬৩টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তাঁর স্ত্রী মুম্বাই চলচ্চিত্রের আরেক অভিনেত্রী সায়রা বানু।
দিলীপ কুমার ওরফে মুহাম্মদ ইউসুফ খান যিনি “ট্রাজেডি কিং” নামে সুপরিচিত এবং সত্যজিৎ রায়ের মতে সর্বশেষ তিনি ছিলেন রচনাশৈলী একজন গুণী অভিনেতা। তিনি ১৯৪৪ সালে “বোম্বে টকিজের” ব্যানারে “জোয়ার ভাটা” চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্র শিল্পে পদার্পণ করেন। তিনি চলচ্চিত্র শিল্প ছয় দশকের অধিক সময় ধরে বিচরণ করেছেন এবং অভিনয় করেছেন ৬০টির বেশি ছায়াছবিতে। তিনি বিভিন্ন ধরনের বৈচিত্রময় ভূমিকায় অভিনয় করেছেন, যেমন- রোমান্টিক ধাঁচের চলচ্চিত্র হিসেবে ১৯৪৯ সালের আন্দাজ, ১৯৫২ সালের বেপরোয়া বা হঠকারী এবং চালবাজ চরিত্রে আন, ১৯৫৫ সালে নাটকীয় চলচ্চিত্র দেবদাস, ১৯৫৫ সালের হাস্যরসাত্মক চলচ্চিত্র আজাদ, ১৯৬০ সালে ঐতিহাসিক চলচ্চিত্র মুঘল-ই-আজম, এবং ১৯৬১ সালের সামাজিক ঘরানার চলচ্চিত্র গঙ্গা যমুনা।
১৯৭৬ সালে, দিলীপ কুমার ছবিতে অভিনয় থেকে পাঁচ বছর বিরতি নেন এবং ছায়াছবি ক্রান্তি প্রধান চরিত্রে অভিয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে নিয়মিত হন এবং প্রধান চরিত্রে নিয়মিত অভিনয় চালিয়ে যান। যেমন: “শক্তি” (১৯৮২), “কর্ম” (১৯৮৬) এবং “সওদাগর” (১৯৯১)। তার সর্বশেষ অভিনীত চলচ্চিত্র ছিল “কিলা” (১৯৯৮)। দিলীপ কুমার অভিনেত্রী “বৈজয়ন্তীমালার” সাথে সবচেয়ে বেশীসংখ্যক চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন, যেখানে তারা উভয়েই একসাথে নিজেদের প্রযোজিত প্রতিষ্ঠান থেকে “গঙ্গা যমুনা” সহ সাতটি ছায়াছবিতে অভিনয় করেন। তাদের দুজনের মধ্যে সবসময়ের জন্য বোঝাপড়া খুবই ভাল ছিল।
ভারত সরকার ১৯৯১ সালে তাকে পদ্মভূষণ পুরস্কারে পদক দিয়ে সম্মানিত করেন এবং ১৯৯৪ সালে ভারতীয় চলচ্চিত্রের প্রতি তার অবদানসমূহের জন্য দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার পদকে ভূষিত করেন এবং রাজ্যসভায় তাকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ভারতীয় পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের সদস্য মনোনীত করা হয়। তিনি ১৯৫৪ সালে ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার প্রথম পদক গ্রহণ করা ব্যক্তি এবং এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশিবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পাওয়ার ইতিহাস তার ঝুলিতে যিনি এখনও পর্যন্ত মোট আটটি বিভাগে পুরস্কার জিতেছেন। সমালোচকরা হিন্দি চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে তাকে প্রশংসিত করেন। একটি ব্লগ পোস্টে অমিতাভ বচ্চন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে দিলীপ কুমারকে বেছে নিয়ে বিবৃতি প্রদান করেন।
কবির আহমেদ/ ইবিটাইমস