ইতালি কোয়ার্টার ফাইনালে ২-১ গোলে বেলজিয়ামকে এবং স্পেন ট্রাইব্রেকারে সুইজারল্যান্ডকে পরাজিত করেছে
স্পোর্টস ডেস্কঃ গতকাল রাতে জার্মানির মিউনিখের অ্যালিয়েঞ্জ এরিনায় ইতালি এই ইউরো কাপের শিরোপা প্রত্যাশী বেলজিয়ামকে ২-১ গোলে পরাজিত করে নিজেই এখন ইউরো কাপ বিজয়ের পথে রয়েছে। ইতালি দীর্ঘ নয় বছর পর উয়েফা ইউরোর সেমিফাইনালে উঠেছে।
এর আগে সবশেষ ২০১২ সালে সেমিফাইনালে উঠেছিল তারা। সেবার অবশ্য ফাইনালও খেলেছিল। কিন্তু স্পেনের কাছে হেরে রানার্স-আপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল। এরপর ২০১৬ সালে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিতে হয়েছিল তাদের।
জার্মানির মিউনিখের আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় বেলজিয়ামের বিপক্ষে খেলার ১৩ মিনিটেই জালের নাগাল পেয়েছিল ইতালি। কিন্তু অফসাইডের কারণে সেই গোল বাতিল হয়ে যায়। খেলার ৩১ মিনিটের মাথায় গোল পায় ইতালি। এ সময় সেট পিচ থেকে বেলজিয়ামের দুইজন রক্ষণভাগের খেলোয়াড়কে বোকা বানিয়ে ডান পায়ের শটে গোল করেন নিকোলো বারেলা(১-০)।
খেলার ৪৪ মিনিটের মাথায় গোলের ব্যবধান দ্বিগুণ করেন লরেঞ্জে ইনসিগনি। এ সময় বারেলার কাছ থেকে বক্সের বাইরে বল পেয়ে যান ইনসিগনি। সেখান থেকেই ডান পায়ে শট নেন। তার নেওয়া শট গোলপোস্টের ডান কোণার ওপরের অংশ দিয়ে জালে জড়ায় (২-০)।
অবশ্য বিরতিতে যাওয়ার আগে ঠিক আগে একটি গোল পরিশোধ দেয় বেলজিয়াম। প্রথমার্ধের খেলার অতিরিক্ত সময়ে (৪৫+২) ইতালির জিওভানি ডি লরেঞ্জো বক্সের মধ্যে ফাউল করেন বেলজিয়ামের জেরেমি ডোকুকে। রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজান। পেনাল্টি থেকে গোল করে ব্যবধান কমান রোমেলু লুকাকু। তাতে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় ২০০৬ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
বিরতির পর কিছুটা রক্ষণাত্মক পন্থা অবলম্বন করে খেলে ইতালি। সেই সুযোগে একের পর এক আক্রমণ শানায় বেলজিয়াম। তৈরি করে দারুণ কিছু সুযোগ। ৬১ মিনিটের মাথায় বামদিক থেকে কেভিন ডি ব্রুইনের বাড়িয়ে দেওয়া বল অল্পের জন্য জালে জড়াতে ব্যর্থ হন লুকাকু। গোললাইনের সামনে থেকে তার নেওয়া শট কোনেরকমে ফিরিয়ে দেন ইতালির লিওনার্দো স্পিনাজ্জোলা। ৭১ মিনিটের মাথায় আরও একটি গোলের সুযোগ পেয়েছিলেন বেলজিয়ামের দ্রিস মার্টেন্স। কিন্তু সেটা থেকেও গোল করতে ব্যর্থ হন তিনি।
এরকম গোল মিসের মহড়ায় শেষ পর্যন্ত ২-১ ব্যবধানে হেরে বিদায় নেয় ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে থাকা বেলজিয়াম। ২০১৬ সালের পর ২০২০ সালেও ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিলো রেড ডেভিলস খ্যাত বেলজিয়াম। আগামী শুক্রবার রাতে সেমিফাইনালে লন্ডনের ওয়েম্বলিতে স্পেনের মুখোমুখি হবে ইতালি।
গতকাল ইউরো কাপের কোয়ার্টার ফাইনালের অপর খেলায় স্পেন ট্রাইব্রেকারে পরাজিত করেন সুইজারল্যান্ডকে। স্পেন ও সুইজারল্যান্ডের খেলাটি ১২০ মিনিট পর্যন্ত ১-১ গোলে অমীমাংসিতভাবে শেষ হলে অবশেষে ট্রাইব্রেকারে জয়-পরাজয় নির্ধারণ করা হয়।
রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে খেলার ৮ মিনিটেই প্রথমে গোল করেই এগিয়ে যায় স্পেন (১-০)। এ সময় জর্ডি আলবার নেওয়া শট সুইজারল্যান্ডের ডেনিস জাকারিয়ার গায়ে লেগে নিজেদের জালেই জড়ায়। এই গোলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় স্টার কোচ লুইস এনরিকের শিষ্যরা।
বিরতির পর খেলার দ্বিতীয়ার্ধের ৬৮ মিনিটের সময় সুইস তারকা জারদান শাকিরি স্পেনের রক্ষণভাগের ভুলের সুযোগ নিয়ে গোল করেন (১-১)। খেলার ৭৭ মিনিটে দশজনের দলে পরিণত হয় সুইজারল্যান্ড। এ সময় সরাসারি লাল কার্ড দেখে বিদায় নেন রেমো ফ্রেউলার। বাকি সময় দশজন নিয়েই খেলতে হয় সুইজারল্যান্ডকে।
১০ জন নিয়ে খেলেও ৯০ মিনিট পর্যন্ত নিজেদের জাল অক্ষত রাখে তারা। এমনকি অতিরিক্ত সময়েও স্পেনকে জালের নাগাল পেতে দেয়নি। তাতে খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে।
টাইব্রেকারে প্রথম কিক নেন স্পেনের সার্জিও বুসকেটস। তার নেওয়া শট সাইড পোস্ট কাঁপিয়ে ফিরে আসে। সুইজারল্যান্ডের প্রথম কিক থেকে গোল করেন মারিও গাভরানোভিচ। কিন্তু এরপর ফাবিয়ান ও ম্যানুয়েল আকানজির নেওয়া শট রুখে দেন স্পেনের গোলরক্ষক ইউনাই সিমন। অন্যদিকে স্পেনের দানি অলমো তার শটে গোল করলেও রদ্রির শটটি রুখে দেন সুইজারল্যান্ডের গোলরক্ষক কিন্তু চতুর্থ শটে স্পেনের জেরার্ড মরেনে গোল করেন। অন্যদিকে সুইজারল্যান্ডের চতুর্থ শট নিতে আসেন রুবেন ভার্গাস। কিন্তু তিনি বারের ওপর দিয়ে উড়িয়ে মারেন। আর পঞ্চম শটে মাইকেল ওইয়ারজাবাল গোল করলে ৩-১ ব্যবধানের জয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয় ২০১৬ সালে শেষ ষোলো থেকে বিদায় নেওয়া স্পেনের।
কবির আহমেদ /ইবিটাইমস