উয়েফা ইউরো ২০২০ এ সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটালো সুইজারল্যান্ড
স্পোর্টস ডেস্কঃ গতকাল সোমবার রাতে রুমানিয়ার রাজধানী বুখারেস্টে ইউরো কাপের নকআউট রাউন্ডে সুইজারল্যান্ড বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে ট্রাইবেকারে পরাজিত করে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে বিশ্বের ফুটবল প্রেমিকদের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। কেননা বিশ্ব ফুটবলের অধিকাংশ বিশ্লেষকরা এই ইউরো কাপে শক্তিশালী ফ্রান্সকে সম্ভাব্য শিরোপা প্রত্যাশীদের মধ্যে সবচেয়ে প্রথমে রেখেছিলেন। সুইজারল্যান্ড আজ তাদের সেই স্বপ্ন চুরমার করে দিল।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছেন ইউরো কাপের নকআউট রাউন্ডের এক শ্বাসরুদ্ধকর খেলায় টাইব্রেকারে ফ্রান্সকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে সুইজারল্যান্ড। আজকের ইউরো কাপের বিকালের খেলায় স্পেন ও ক্রোয়েশিয়ার ৮ গোলের রোমাঞ্চ ছড়িয়ে স্পেনের কাছে হেরে যায় ক্রোয়েশিয়া। বিদায় নেয় গত বিশ্বকাপের রানার্স আপ ক্রোয়েশিয়া।
সেই টানটান উত্তেজনার রেশ না কাটতেই ফ্রান্স ও সুইজারল্যান্ড ম্যাচে আরেকটি অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনের নজির স্থাপন করল সুইজারল্যান্ড। এগিয়ে থাকা সুইশরা দুই গোলে পিছিয়ে পড়েও ঘুরে দাঁড়ায়। নির্ধারিত সময় শেষ হয় ৩-৩ গোলের ব্যবধানে।
অতিরিক্ত সময়েও স্কোর পাল্টায়নি, টাইব্রেকারে ৫-৪ গোলে জিতে ফ্রান্সকে হারিয়ে ১৭ বছর পর কোয়ার্টার ফাইনালে উঠল সুইজারল্যান্ড। আগামী ২ জুলাই রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে কোয়ার্টার ফাইনালে সুইজারল্যান্ড খেলবে স্পেনের সাথে। টানা দুই দিনে গত বিশ্বকাপ ও ইউরো কাপের তিন ফাইনালিস্টের বিদায় হলো মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চ থেকে। রোববার (২৭ জুন) বেলজিয়ামের কাছে পরাজিত হয়ে বিদায় নেয় বর্তমান চ্যাম্পিয়ন পর্তুগাল। পরের দিন স্পেন বিদায় করলো বিশ্বকাপের রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়াকে। কয়েক ঘণ্টা পর এই আসরের সবচেয়ে বড় অঘটনের শিকার হয়ে ইউরোর স্বপ্ন শেষ হলো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ও গত আসরের ইউরো কাপের রানার্স আপ ফ্রান্সের।
গতকাল সোমবার রাতে ইউরো কাপ ফুটবলের নকআউট রাউন্ডে রুমানিয়ার বুখারেস্টের ন্যাশনাল এরেনায় দারুণ আক্রমণে শুরুতেই এগিয়ে যায় সুইজারল্যান্ড। ১৫ মিনিটে সেফেরোভিচ বক্সের বাইরে থেকে গোল লক্ষ্যে শট নেন। প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে বল যায় জুবেরের কাছে। ততক্ষণে বক্সে ঢুকে গেছেন সেফেরোভিচ। জুবেরের মাপা ক্রসে লাফিয়ে দুর্দান্ত হেড করেন তিনি, ফ্রান্সের গোলরক্ষক হুগো লরিস বল আটকাতে পারেননি। শুরুতেই লিড নিয়ে ২০০৪ সালের পর প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার স্বপ্ন দেখা শুরু করে সুইজারল্যান্ড।
প্রথমার্ধে ফ্রান্স কোনও সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। কিলিয়ান এমবাপ্পে, র্যাবিওট শট নিলেও তা লক্ষ্যে ছিল না। ১-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় সুইশরা। দ্বিতীয়ার্ধে ফিরে ব্যবধান দ্বিগুণ করার বড় সুযোগ পায় তারা। ৫২ মিনিটে ফরাসির বক্সে ঢুকেই বেঞ্জামিন পাভার্দের ফাউলের শিকার হন জুবের। সুইজারল্যান্ডের আবেদনে সাড়া দিয়ে ভিএআর যাচাই করে পেনাল্টি দেন রেফারি।
৫৫ মিনিটে পেনাল্টি কিক নিতে যান রিকার্ডো রদ্রিগেজ। বাঁ দিক দিয়ে কোনাকুনি নিচু শট নেন তিনি। বলের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে দুর্বল শট এক হাতে রুখে দেন লরিস। অধিনায়কের এই বীরত্বের পর যেন গা ঝারা দিয়ে ওঠে ফ্রান্স। মাত্র ৯০ সেকেন্ডের ব্যবধানে জোড়া গোল করেন করিম বেনজেমা। ৬ বছর পর ফ্রান্সের জাতীয় দলে পুনরায় ফিরে এসেছেন তিনি। পর্তুগালের বিপক্ষে জোড়া গোল করা রিয়াল মাদ্রিদের ফরোয়ার্ড ৫৭ মিনিটে চোখ ধাঁধানো একটি আকর্ষনীয় গোল করেন।
এমবাপ্পের ছোট পাস থেকে দারুণভাবে গোলের সুযোগ তৈরি করে কাজে লাগান বেনজেমা। পিএসজি স্ট্রাইকার বল বক্সের মধ্যে বাড়ান। কিছুটা পেছনে থাকা বল বাঁ পা দিয়ে টেনে সামনে নেন বেনজেমা, তারপর এগিয়ে গিয়ে বাঁ পায়ের শটেই লক্ষ্যভেদ। ৫৯ মিনিটে দলকে এগিয়ে দেন তিনি। আন্তোয়ান গ্রিয়েজমানের উঁচু শটে বল সুইশ গোলরক্ষক সমারের হাতে লেগে দূরের পোস্ট দিয়ে বের হওয়ার পথে ছিল, কিন্তু তার আগেই হেড করেন বেনজেমা। টানা দুই ম্যাচে জোড়া গোল করে গোল্ডেন বুট পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে থাকলেন তিনি। পর্তুগালের অধিনায়ক সুপারস্টার রোনালদো এখনও ৫ গোল করে সবার ওপরে রয়ে গেছেন।
সুইজারল্যান্ডকে দুই গোলে পেছনে ফেলে ফ্রান্স ৭৫ মিনিটে। কিছুটা জায়গা খুঁজে বের করে বক্সের বাইরে থেকে শক্তিশালী শটে স্কোর ৩-১ করেন পল পগবা।
তবে ফ্রান্সকে সহজে ছেড়ে দেয়নি সুইজারল্যান্ড। ৮১ মিনিটে এমবাবুর চমৎকার ক্রস থেকে সেফেরোভিচের শক্তিশালী হেড জালে জড়ায়। আরেকটি গোলের জন্য বুক চিতিয়ে লড়াই করে গেছে ১৯৯২ সালের সেমিফাইনালিস্টরা। ফলও পেয়ে যায় হাতেনাতে। নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে তৃতীয় গোল করে ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে নেয় সুইশরা। গ্রানিত জাকার পাস ধরে প্রেসনেল কিম্পেম্বেকে বোকা বানিয়ে বক্সে ঢুকে ৯০ মিনিটে লরিসকে পরাস্ত করেন বদলি খেলোয়াড় মারিও গাভ্রানোভিচ। অতিরিক্ত সময়ে ম্যাচ গড়াতো না, যদি যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে কোমানের শট ক্রসবারে না লাগতো। বুক দিয়ে বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে দারুণ শট নিয়েছিলেন। কিন্তু গোলপোস্ট হতাশ করে তাকে। ফলে নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলাটি ৩-৩ গোলে ড্র অবস্থায় শেষ হয়। অতিরিক্ত ৩০ মিনিট খেলার পরও খেলায় ফলাফল না আসায় ট্রাইবেকারে যায়।
প্রথম শটে সুইজারল্যান্ডের গাভ্রানোভিচ গোল করেন। ফ্রান্সকে স্বস্তি এনে দিয়ে গোল করেন পগবাও। দ্বিতীয় শুটে সুইশদের উল্লাসে মাতান ফ্যাবিয়ান স্কার। ফ্রান্সের পক্ষে দ্বিতীয় শটে ডানপ্রান্ত দিয়ে জালে বল জড়ান জিরুদ। মানুয়েল আকানজি ঠাণ্ডা মাথায় তৃতীয় শটে লক্ষ্যভেদ করে সুইজারল্যান্ডকে ম্যাচে রাখেন। তৃতীয় শট থেকে ফ্রান্সের হয়ে লক্ষ্যভেদ করেন থুরাম। ভারগাসের শট ডান হাত দিয়ে লরিস ঠেকালেও বল রাখতে পারেননি। কিম্পেম্বে করেন ফ্রান্সের চতুর্থ গোল। লরিসকে ভুল দিকে পাঠিয়ে সুইশদের শেষ শটে সফল হন মেহমেদি। ফ্রান্সের শেষ শট নিতে আসেন এমবাপ্পে, তার উঁচু শট ডান দিকে ঝাঁপিয়ে রুখে দেন সমার। তারপরই অঘটন ঘটিয়ে উল্লাসে ফেটে পড়ে সুইশরা।
কবির আহমেদ/ ইবিটাইমস