অস্ট্রিয়া ১ জুলাই থেকে তার প্রায় সমস্ত করোনভাইরাসের বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করে নিচ্ছে
ইউরোপ ডেস্কঃ অস্ট্রিয়ার বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছেন সমগ্র অস্ট্রিয়ায় করোনার সংক্রমণের বিস্তার দ্রুত হ্রাস পাওয়ায় এবং আইসিইউ ও হাসপাতালে করোনার রোগী সংখ্যা কমে আসায় সরকার আগামী ১ জুলাই শুক্রবার থেকে করোনার প্রায় সকল বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
৩-জি বিধানের মাধ্যমে অস্ট্রিয়া সহজেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার চেষ্টা করছে। থ্রি জি রুল হল, আপনি অস্ট্রিয়ায় করোনার প্রতিষেধক টিকা নিয়েছেন, আপনি করোনার পরীক্ষা করেছেন এবং আপনি করোনা আক্রান্ত হয়ে সুস্থতা লাভ করেছেন। আপনি এই তিনটির যে কোন একটির সনদ বা সার্টিফিকেট দিয়ে অস্ট্রিয়ায় সহজেই স্বাধীনভাবে সর্বত্র চলাচল করতে পারবেন। সরকারের ভাষ্যমতে, যারা অস্ট্রিয়ায় করোনার টিকা নিয়েছেন, করোনার পরীক্ষা করেছেন এবং করোনায় আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়েছেন তাদের জন্য সমগ্র অস্ট্রিয়া উন্মুক্ত। এই বিভাগগুলির মধ্যে একটিতে আপনি কিভাবে প্রমাণ করতে হয় সে সম্পর্কে আপনার যা জানতে হবে তা এখানে।
প্রায় ৬ মাস লকডাউন থাকার পর গত ১৯ মে থেকে অস্ট্রিয়ায় ছোট ইভেন্টগুলি, অপেশাদার খেলাধুলা, হোটেল এবং রেস্তোঁরাগুলিকে আবার খুলে দেয়। “আমরা মহামারীর বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইয়ের চূড়ান্ত প্রান্তে রয়েছি,” অস্ট্রিয়ের চ্যান্সেলর সেবাস্তিয়ান কুর্জ এপ্রিল মাসে এই ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণা দেওয়ার সময় এক সাংবাদিক সম্মেলনে সাংবাদিকদের একথা বলেন। তিনি আরও বলেন,কেবলমাত্র সেই ব্যক্তিরা যারা ভাইরাসের বিরুদ্ধে টিকা প্রদান করেছেন, নেতিবাচক পরীক্ষা করেছেন বা ভাইরাস সংক্রমণ করেছেন এবং পুনরুদ্ধার করেছেন তাদের পুনরায় খোলায় অংশ নেওয়ার অধিকার রয়েছে। এটিই অস্ট্রিয়াতে ‘৩ জি রুল’ নামে পরিচিত।
অস্ট্রিয়ায় বর্তমানে যারা সম্পূর্ণ করোনার টিকা সম্পন্ন করেছেন তাদের অনলাইনে গ্রীন পাস প্রবর্তন শুরু করেছেন অনলাইনের মাধ্যমে। অবশ্য বর্তমানে প্রথম অবস্থায় অনেকের কাছেই ব্যাপারটি বেশ জটিল মনে হচ্ছে। অবশ্য আগামী ১ জুন থেকে ইইউর ২৭টি সদস্য দেশে একসাথে এই পাসের প্রবর্তন শুরু হলে সবকিছুই স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অস্ট্রিয়ার সরকার প্রধান চ্যান্সেলর সেবাস্তিয়ান কুর্জ বলেন, “পরিস্থিতি প্রত্যাশার চেয়ে অনেক ভাল,”। কাজেই এখন আমরা দেশে সবকিছুই খেলে দিতে পারি এবং আমরা চাই আসন্ন গ্রীষ্মের সময় দেশে যেন আর কোন বিধিনিষেধ না থাকে। চ্যান্সেলর সেবাস্তিয়ান কুর্জ জুনের মাঝামাঝি সময়ে এই ঘোষণা দেওয়ার সময় সাংবাদিকদের বলেন, “মজাদার বিষয়গুলি আবার ফিরে আসছে”। যদিও তিনি সতর্ক করেছিলেন, যে লোকেদের টিকা দেওয়া উচিত এবং টিকা না দেওয়া পর্যন্ত তারা “অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী” হয়ে উঠবে না।
আগামী ১ জুলাই থেকে যে সমস্ত বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করা হচ্ছে তা হল,
*ভিড়ের সীমাবদ্ধতা
১ জুলাই থেকে ১০০ জনের ওপরে মানুষ কোনও অনুমতি ছাড়াই একসাথে মিলিত বা ভ্রমণ করতে পারবেন। তবে ৫০০ শত বা তার ওপর হলে স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করতে হবে। ১ জুলাইয়ের পর এই মিলিত হবার ইভেন্টে কোন মাস্ক পড়তে হবে না। কেহ নিজের থেকে পড়লে কোন অসুবিধা নাই। স্টেডিয়াম এবং প্রেক্ষাগৃহ পরিদর্শন করাও সীমাবদ্ধতা ছাড়াই সম্ভব হবে।
* সামাজিক দূরত্বের বিধান বিলোপ
আগামী ১ জুলাই থেকে একজন থেকে আরেকজনের সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলার বা বসার কোন বিধান আর থাকবে না।
* নাইট লাইফ
অস্ট্রিয়ায় আগামী ১ জুলাই থেকে রাত্রিকালীন বার, ডিসকো,রেস্টুরেন্ট এবং বিভিন্ন ক্লাব খুলে দেয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে এবং কোন স্থানের সীমাবদ্ধতা বিধান বাদ দেওয়া হয়েছিল হয়েছে।
* বারে বিভিন্ন পানীয় পান এবং নাচের অনুমতি
১ জুলাই থেকে সমগ্র অস্ট্রিয়াতেই ক্লাব, পাব এবং রেস্তোঁরাগুলি আবার শতকরা ৭৫ শতাংশ সক্ষমতা পর্যন্ত খুলতে পারবে এবং ২২ শে জুলাই থেকে শতকরা ১০০% ক্ষমতায় যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
* নাক ও মুখের সুরক্ষার মাস্ক
অস্ট্রিয়ার সরকার প্রধান চ্যান্সেলর সেবাস্তিয়ান কুর্জ গত ২০ জুন অস্ট্রিয়ার জনপ্রিয় পত্রিকার Österreich এর সাথে এক সাক্ষাৎকার বলেন, তিনি চাইছেন না যে অস্ট্রিয়ায় মাস্ক পড়া“স্থায়ী” হয়ে উঠুক, এবং বলেছিলেন যে এটি এশিয়ার মতো অন্যান্য জায়গার মতো ইউরোপের সংস্কৃতির অংশ নয়।
১ লা জুলাই থেকে, মেডিকেল গ্রেডের মুখোশগুলি আর হাসপাতাল এবং নার্সিংহোস ছাড়া আর কোথাও পরা প্রয়োজন হবে না।সুপারমার্কেট, দোকান-পাট এবং রেস্তোঁরাগুলির জন্য এফএফপি২ মাস্কের নিয়ম শিথিল করা হবে। যদিও এফএফপি২ মাস্কগুলি এখনও হাসপাতাল এবং নার্সিং হোমগুলিতে প্রয়োজন হবে, অন্য ৩ টি ক্ষেত্রে যেখানে ৩ জি বিধি প্রযোজ্য সেখানে সেগুলি বাদ দেওয়া হবে। অর্থাৎ হাসপাতাল ও নার্সিংহোমের বাহিরে যারা ৩-জি বিধানের মধ্যে পড়েন তাদের মাস্ক পড়তে হবে না।
নন-মেডিকেল গ্রেড মুখ সুরক্ষা, অর্থাত্ সুতির মুখোশ বা স্কার্ফ, বার, রেস্তোঁরা এবং পাবলিক ট্রান্সপোর্টের মতো অন্দর অঞ্চলে আবার পর্যাপ্ত হবে। ইভেন্টের আকার নির্বিশেষে বাইরের অঞ্চলে কোনও ধরণের কোনও মাস্কের প্রয়োজন হবে না।
অস্ট্রিয়ার জনপ্রিয় কুরিয়ার পত্রিকা জানিয়েছে যে, মাস্কের নিয়মের আরও শিথিলতা ২২ শে জুলাই থেকে কার্যকর হতে পারে, যদিও এটি এখনও নিশ্চিত হয়নি। সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থাগুলি এখানে সরকারের অফিসিয়াল পৃষ্ঠায় দেওয়া হয়েছে।
আজ অস্ট্রিয়ায় করোনায় নতুন করে সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ১৭৬ জন এবং করোনায় মৃত্যুবরণ(-১) রেকর্ড করা হয় নি ডাটা ক্লিনিংয়ের জন্য। রাজধানী ভিয়েনায় আজ নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ৭৫ জন। অন্যান্য রাজ্যের মধ্যে Kärnten রাজ্যে ৪৩ জন, NÖ রাজ্যে ২১ জন,OÖ রাজ্যে ১১ জন, Burgenland রাজ্যে ১০ জন, Steiermark রাজ্যে ৭ জন, Tirol রাজ্যে ৬ জন, Vorarlberg রাজ্যে ৩ জন এবং Salzburg রাজ্যে আজ কেহ করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হন নি।
অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী আজ করোনার টিকা দেয়া হয়েছে ১,২৩,৫৩৫ ডোজ এবং এই পর্যন্ত মোট টিকা দেয়া হয়েছে ৭৩,৫৯,৩৮২ ডোজ।
অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬,৫০,১৯২ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১০,৬৯৯ জন। করোনার থেকে এই পর্যন্ত আরোগ্য লাভ করেছেন মোট ৬,৩৭,২৩৮ জন। বর্তমানে করোনার সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ২,২৫৫ জন। এর মধ্যে আইসিইউতে আছেন ৭২ জন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ২০১ জন। বাকীরা নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন।
কবির আহমেদ/ ইবিটাইমস