সাব্বির আলম বাবু, ভোলা: একবেলা মাছ ছাড়া যেন খাওয়াই হয় না। আর তাই ‘মাছে ভাতে বাঙালি’ প্রবাদটি যে বাঙালির পরিচয়কেই তুলে ধরেছে, এতে সন্দেহ নেই। এ পরিচয় হাজার বছরের। আর আমাদের দেশে মাছ শিকারের রয়েছে অনেক পদ্ধতি। জলাশয়ে ছিপ ফেলে বড়শি দিয়ে গেঁথে মাছ ধরাটা গ্রাম বাংলার চিরায়ত দৃশ্য। কিন্তু কালের বিবর্তনে এটি এখন হারিয়ে যাবার পথে।
হঠাৎ কোন হ্যাচকা টানের শব্দ কিংবা নিরব শিকারী বড়শী হাতে পুকুর-খাল ও বাড়ীর পাশের পতিত জলাশয়ের পাশে চুপচাপ বসে আছে ছিপ কেঁপে ওঠার আশায়, গ্রাম বাংলার মেঠোপথের ধারে এমন চিত্র আগে মিলতো হর-হামেশাই। চুবা বা ডুবা কেঁপে উঠলেই আচমকা বড়শীতে টান দেয়, তখন হয়তো উঠে আসে বাহারী কোন রুপালী রঙের মাছ।
জলাশয়ের পানির নীচে ঘুরে বেড়ানো কোন মাছ খাবারের খোঁজে সামনে লোভনীয় টোপ দেখে বড়শীতে গাঁথা খাবার ঠোঁকর দিলে পানির উপরে ভাসা চুবা বা ডুবা নড়ে উঠে। একে স্থানীয় ভাষায় পোটায় বলা হয়। তখন মাছ শিকারী বুঝতে পারে যে মাছ এসেছে। তখন সে হ্যাচকা টান দিলে মাছের মূখে বা কানে বড়শীর তীক্ষ্ণ ফলা গেঁথে যায়। তখন সহজেই এটি শিকার করা যায়।
নগর সভ্যতার বেড়াজালে দিনে দিনে জলাশায় ও পুকুরের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। তবে, যা অবশিষ্ট আছে তাতে কদাচিৎ দেখা মেলে ছিপ-বড়শী আর মাছের খেলা। আগে গ্রামে বড় পুকুর বা দিঘীতে টিকিট কেটে আয়োজন হতো মাছ ধরার প্রতিযোগিতা। কিন্তু গ্রাম বাংলায় এখন এমন আয়োজন নেই বললেই চলে।
শুধু টোপ, বড়শী আর ছিপই নয় মাছ শিকারে কঠিন অধ্যাবসায় আর অপরিসীম ধৈর্যও থাকতে হয়। এই কাজে যারা অভিজ্ঞ তারা জলশয়ের অবস্থা এবং পরিবেশ বুঝে প্রথমে বসার জায়গা নির্ধারন করে মাছের আকর্ষণ করার জন্য বিশেষ ধরনের চারি (মাছের খাবার) ব্যবহার করা হয়। তারপর টোপ, চুবা, ছিপ পানিতে ভেসে থাকা সেই চারির কাছাকাছি পাতা হয়। মাছ চারির ঘ্রানে সেগুলো খাওয়ার জন্য ছুটে এলে ভূল করে বড়শীতে গাঁথা খাবার গিলে ফেলে তখন শিকারী হ্যাচকা টান দিলে মাছ আটকে যায়।
বড়শী দিয়ে মাছ শিকারী ইউনুস জানান, ছোটবেলা থেকেই শখের বশে নিজে বড়শী দিয়ে মাছ শিকারের পাশাপাশি এর সরঞ্জামও তিনি বিক্রি করেন। নানা ধরনের ছোট বড় মাছের জন্য বিভিন্ন রকমের বড়শী, ছিপ, চুবা, সুতা, হুইলার ইত্যাদি তিনি বিক্রি করেন। ধরন অনুযায়ী একেকটার একেক রকমের দাম। গ্রামের দরিদ্র পরিবারের কেউ কেউ বড়শী দিয়ে ছোট ছোট মাছ যেমন- টাকি, পুঁটি, শোল, ঘুইঙ্গা, বাইন, কৈ ইত্যাদি ধরে বাজারে বিক্রি করে সংসার চালায় আবার কেউ বড় বড় পুরনো পুকুর -দীঘিতে সৌখিন ভাবে দলবদ্ধ হয়ে টিকেট কেটে বড় মাছ ধরে। কেউ মাছ ধরে পেটের তাগিদে আর কেউ মাছ ধরে সৌখিনতার জন্য তবে সবগুলোরই মাধ্যম কিন্তু বড়শী।
সময়ের প্রয়োজনে খাল-বিল-পুকুর সহ অন্যান্য জলাশয় ভরাট হয়ে যাচ্ছে। গ্রামে বাড়িতে বাড়িতে পুকুর কাটার দৃশ্য এখন অমাবস্যার চাঁদের মতো। তার জায়গা দখল করেছে হ্যাচারি ও অ্যাকুয়াকালচার। তারপরও শখেরবশে বা প্রয়োজনেই গ্রামে এখনও অনেকে মাছ শিকার করেন বড়শি পেতে।
ভোলা/ইবিটাইমস/আরএন