শর্তসাপেক্ষে দেশীয় গ্লোব বায়োটেকের ‘বঙ্গভ্যাক্স’ টিকার হিউম্যান ট্রায়ালের নীতিগত অনুমোদন

বঙ্গভ্যাক্স ছাড়াও চীন ও ভারতের আরও দুইটি টিকার ট্রায়ালের জন্য শর্ত সাপেক্ষে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে

বাংলাদেশ ডেস্কঃ বাংলাদেশের গ্লোব বায়োটেকের করোনাভাইরাসের টিকা ‘বঙ্গভ্যাক্স’ এবং চীন ও ভারতের দুটি টিকাসহ মোট তিনটি টিকার মানুষের শরীরে পরীক্ষার (হিউম্যান ট্রায়াল) জন্য নীতিগত অনুমোদন দেওয়ার সাথে কিছু শর্ত দিয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল।

বাংলাদেশের জাতীয় সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছেন, আজ বুধবার ১৬ জুন দুপুরে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী শর্তসাপেক্ষে দেশীয় গ্লোব বায়োটেকের ‘বঙ্গভ্যাক্স’ টিকার হিউম্যান ট্রায়ালের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ (বিএমআরসি)।

বিএমআরসির পরিচালক অধ্যাপক ডা. রুহুল আমিন বলেছেন, সরাসরি অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলা যাবে না। তবে শর্ত দেওয়া হয়েছে। ভুল ত্রুটি ঠিক করলে আমরা অনুমতি দিয়ে দেব। শর্ত পূরণ করলে অনুমোদন দেওয়া হবে।  জানা গেছে, বিএমআরসির অনুমতি পেলে খুব শিগগিরই শতাধিক মানুষের ওপর দেশীয় এই টিকার ট্রায়াল চালানো হবে। এ জন্য কিছু বেসরকারি হাসপাতাল নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিএমআরসি বলছে, ‘হিউম্যান ট্রায়ালের’ আগে বিএমআরসির নিয়ম অনুযায়ী সব ধরনের শর্ত পূরণ করতে হবে। আজ বুধবার সকালে বিএমআরসির বিশেষজ্ঞদের সভায় এই অনুমোদন দেওয়া হয়।

বিএমআরসি সূত্র জানিয়েছে, শিম্পাঞ্জি ও বানরের ওপর এই টিকাগুলোর কার্যকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সমস্ত কাগজপত্র বিএমআরসিতে জমা দিতে হবে।

বাংলাদেশে বহুদিন থেকে টিকার ট্রায়াল নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু বিএমআরসির সিদ্ধান্ত বিলম্বিত হওয়ায় বিজ্ঞানীদের একটি অংশের মধ্যে হতাশা ছিল।

আইসিডিডিআরবি’র দুজন বিজ্ঞানী চীন ও ভারতের টিকার জন্য আর গ্লোব বায়োটেক বঙ্গভ্যাক্সের টিকার ট্রায়ালের জন্য অনুমোদন চেয়েছিল।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের মেডিকেল জার্নালে প্রকাশ করা হয় যে, দেশীয় করোনা টিকা গ্লোব বায়োটেকের বঙ্গভ্যাক্স প্রাণীদেহে কার্যকর। এরপর মানবদেহে ট্রায়ালের জন্য বিএমআরসির অনুমোদনের অপেক্ষায় ছিল প্রতিষ্ঠানটি। সবশেষ প্রতিষ্ঠানটিকে শর্তসাপেক্ষে অনুমোদন দেয়া হলো।

যুক্তরাষ্ট্রের মেডিকেল জার্নাল ‘ভ্যাকসিনে’ বলা হয়, বঙ্গভ্যাক্স হলো এমআরএনএ প্রযুক্তিতে তৈরি বিশ্বের প্রথম এক ডোজের কার্যকরী টিকা যা সার্স-কোভিড-২ ভাইরাসের বিরুদ্ধে সফলভাবে মানবকোষ ও প্রাণীদেহে সুরক্ষা দিয়েছে। এ গবেষণাপত্র প্রকাশের পর ফের আলোচনায় আসে দেশীয় প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেকের ভ্যাকসিন।

গ্লোব বায়োটেকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কাকন নাগ বলেছিলেন, রিউমার হয়তো ছিল বাজারে, আমাদের রিসার্স অ্যার্টিকেলটি যুক্তরাষ্ট্রের মেডিকেল জার্নালে প্রকাশের মধ্য দিয়ে এটি প্রমাণিত হলো যে, আমাদের দাবিটি ছিল ভ্যাকসিন আবিষ্কার, সেটি আসলে খাঁটি দাবি।

প্রি-ক্লিনিক্যাল গবেষণায় দেখা যায়, এ টিকাটি মানবকোষ ও প্রাণীদেহে সহনশীল ও নিরাপদ। গ্লোব বায়োটেকের দাবি, এই টিকা অন্তত ৬ মাস সুরক্ষা দেবে মানবদেহে।।তিনি বলেছিলেন, এ টিকাটি মানবকোষ ও প্রাণীদেহে সহনশীল ও নিরাপদ। সেই হিসেবে আমরা বলতে পারি যে, এটি ১০০ ভাগ কাজ করেছে প্রাণীদেহে। প্রতি মাসে আমরা এক কোটি ডোজ ভ্যাকসিন সরবরাহ করতে পারব। এর বাইরেও অন্য কেউ যদি এ ভ্যাকসিন নিয়ে যৌথভাবে কাজ করতে চান, আমরা তাদের সঙ্গে কাজ করতে পারব। এ ভ্যাকসিনটি তৈরি করার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ীই কোনো নির্দিষ্ট ডেডিকেটেড সুবিধার প্রয়োজন নেই।

ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অংশ হিসেবে টিকা উৎপাদনে ওষুধ প্রশাসনের অনুমতি পায় গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর। চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি সেই অনুমোদন প্রাপ্তির জন্য বিএমআরসিতে চিঠি দেওয়া হয়েছিল।

কবির আহমেদ/ ইবি টাইমস

EuroBanglaTimes

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »