মনপুরায় জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুতের দাবিতে আন্দোলন স্থানীয়দের

ভোলা প্রতিনিধি: সোলার মিনি গ্রিড বিদ্যুতের পরিবর্তে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিড থেকে ভোলার মনপুরাকে বিদ্যুতের আওতায় আনার দাবিতে মানববন্ধন করেছে ভোলাস্থ মনপুরাবাসী। শনিবার (১২জুন) ভোলা প্রেসক্লাব চত্বরে “মনপুরা উন্নয়ন ফোরাম” এর উদ্যোগে আয়োজিত এ মানববন্ধনে অংশ নেন বিভিন্ন পেশার মানুষ।

ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেয়ার সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী মনপুরা উপজেলা সাবমেরিন ক্যাবল এর মাধ্যমে সংযুক্ত হয়নি। ফলে এখানে বাসকরা মানুষের কাছে এখনো পৌছেনি বিদ্যুতের আলো। এই উপজেলায় লক্ষাধিক লোকের বসবাস। বাসিন্দাদের মধ্যে শতকরা ৯০ ভাগ জেলে, কৃষক এবং দিনমজুর। সকল ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত এই জনপদের মানুষের অন্যতম প্রধান সমস্যা বিদ্যুৎ। উপজেলা সদরে প্রায় ৮ শতাধিক গ্রাহক সন্ধ্যা থেকে রাত ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সুবিধা পেয়ে আসলেও উপজেলার বাকি ৩টি ইউনিয়নের বাসিন্দারা বছরের পর বছর ধরে বিদ্যুৎ সুবিধা বঞ্চিত।

ভোলার বেশিরভাগ উপজেলাই সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পাচ্ছে। শুধু ব্যতিক্রম মনপুরা। এই দূর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে প্রথমে উপজেলার উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নে সোলার মিনি গ্রীড স্থাপন করে গ্রাহকদের মাঝে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় বেসরকারি ভাবে। পরে আরো দুইটি ইউনিয়নেও সোলার মিনি গ্রীডের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। সা

ধারন বিদ্যুৎ খরচের তুলনায় এই বিদ্যুতের খরচ কয়েক গুন বেশি। এতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ এর দাম ৩০ টাকা। ফলে বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপ উপজেলার গরীব ও অসহায় মানুষগুলোর মরার উপর খরার ঘা হয়ে চেপে বসেছে সোলার বিদ্যুৎ। মনপুরা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হওয়ায় সেখানে মানুষের জীবেনযাত্রা খুবই শোচনীয় । সামগ্রিক ভাবে জাতীয় গ্রীডের বিদ্যুৎ না থাকায় মনপুরার মানুষের জীবন মানের উন্নতি হচ্ছে না।

মুজিববর্ষে সোলার মিনি গ্রীড বিদ্যুতের পরিবর্তে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিড থেকে ভোলার মনপুরায় শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় আনার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে ছাত্রজনতা। দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লেখালেখির মাধ্যমে আন্দোলন করে আসছে মনপুরা উপজেলার সচেতন মহল এবং ছাত্ররা।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন,সোলার বিদ্যুৎ এখন মানুষের গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্রাহকদের কাছ থেকে ১ ইউনিট বিদ্যুৎ বাবদ খরচ নিচ্ছে ৩০ টাকা। একজন গ্রাহক প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফ্যান ও বাতি এবং একটি ফ্রিজ ব্যবহার করলে তাকে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিল বেশী হওয়ার কারনে অনেকে প্রয়োজন থাকা সত্বেও ফ্যান, লাইট বন্ধ করে রাখে। প্রচন্ড গরমের সময় অধিক বিলের ভয়ে ফ্যান না চালাতেও দেখা গেছে। অনেকে দিনের বেশিরভাগ সময়ে ফ্রিজের লাইন বন্ধ করে রাখেন। বিলের সাথে প্রতি মাসে ৭০ টাকা সার্ভিস চার্জ বাধ্যতামূলকতো রয়েছেই। বিদ্যুৎ বিল দিতে দিতে গ্রাহকদের নাভিশ্বাস উঠেছে।

জাতীয় গ্রীড থেকে বিদ্যুৎ এর দাবী করে বক্তারা আরও বলেন, মনপুরাবাসী কতবড় বৈষম্যের স্বীকার। পদ্মা নদীর তলদেশ দিয়ে ফরিদপুরের দূর্গম চরে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে জাতীয় গ্রীডের বিদ্যুৎ গিয়েছে। সেখানে মাত্র ১০ হাজার পরিবার তবুও সেখানে বিদ্যুৎ গেল। এছাড়া ভোলার চর কুকরি-মুকরি ও মুজিবনগরসহ দেশের ১৬টি চরে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পৌছে দেয়ার কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। অথচ লক্ষাধিক লোকের আবাসভূমি মনপুরা উপজেলা সাবমেরিন ক্যাবলের আওতায় আসেনি।

বক্তারা আরও বলেন, বর্তমান সরকারের বিদ্যুৎ খাতের সাফল্য প্রশংসনীয়। সরকার নিরলসভাবে বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়ন করে যাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে গ্রাম গুলিও বিদ্যুতের আওতায় আসছে। কিন্তু অপরুপ সৌন্দর্যের পুরোনো এই দ্বীপের মানুষ এখনো নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা বঞ্চিত। আমরা সোলার মিনি গ্রীড বিদ্যুৎ চাইনা, চাই জাতীয় গ্রীডের নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ।

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন ভোলাস্থ মনপুরাবাসী ও মনপুরা উন্নয়ন ফোরামের প্রধান উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট এম সালাহউদ্দিন আহমেদ প্রিন্স, শিক্ষা উপ-প্রকোশলী মনির হোসেন, শিক্ষক আবদুর রহিম প্রমূখ। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন,”মনপুরা উন্নয়ন ফোরাম” এর উপদেষ্টা মোঃ মনির আহামেদ, আহ্বায়ক মোঃ রোকন উদ্দিন, যুগ্ম-আহ্বায়ক এম শরীফ আহমেদ, সদস্য সচিব মোঃ মিশকাত, স্বেচ্ছাসেবী আলাউদ্দিন রাফী, এইচ এ শরীফ, মোঃ আজিজ রায়হান সহ বিভিন্ন সংগঠনের সদস্য এবং বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।

সাব্বির বাবু/ইবিটাইমস/এমএন

EuroBanglaTimes

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »