করোনার ভ্যাকসিন গ্রহণকারী পর্যটকদের জন্য স্পেন তার বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করে নিয়েছে
ইউরোপ ডেস্কঃ আজ অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনার সিটি হলে ভিয়েনার মেয়র মিখাইল লুডভিগের সাথে এক সৌজন্য সাক্ষাত করেছেন অস্ট্রিয়ায় নিযুক্ত স্পেনের রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টিনা ফ্রেইল জিমনেজ ডি মুনানা।
বৈশ্বিক মহামারী করোনায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশ সমূহের মধ্যে ইতালির পর স্পেনও বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। মেয়র মিখাইল লুডভিগ বলেন, স্পেনের রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টিনা ফ্রেইল ভিয়েনা শহরের করোনা পরিচালনায় ও নিয়ন্ত্রণে রাজ্য প্রশাসনের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
ভিয়েনার রাজ্য গভর্নর ও মেয়র মিখাইল লুডভিগ রাষ্ট্রদূতকে ভিয়েনায় করোনার সংক্রমণ,চিকিৎসা, লকডাউন এবং শিথিলতার বিস্তারিত বর্ণনা বিবৃত করেন। স্পেনের রাষ্ট্রদূত এই প্রসঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সকল সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে সংহতি ও সম্মিলিত কাজের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
অস্ট্রিয়ার সাথে স্পেনের রয়েছে ব্যবসা বাণিজ্যের এক বিশাল সম্পর্ক। অস্ট্রিয়া স্পেন থেকে ফল-ফলাদি, সবজি এবং মাছ আমদানি করে থাকে। তাছাড়াও অস্ট্রিয়ান পর্যটকদের জন্য স্পেনের দ্বীপ সমূহ খুবই পছন্দনীয়।
ওয়ার্ল্ডো মিটারের তথ্য অনুযায়ী স্পেনে এই পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩৬,৯৭,৯৮৭ জন এবং এই পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছেন মোট ৮০,১৯৬ জন।
করোনার থেকে এই পর্যন্ত আরোগ্য লাভ করেছেন ৩৪,৭১,১৬৩ জন। স্পেনে বর্তমানে করোনার সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৭৬,২৮৮ জন।
এদিকে স্পেন থেকে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছেন স্পেন করোনার ভ্যাকসিন গ্রহণকারী পর্যটকদের জন্য বিধিনিষেধ শিথিলতার ঘোষণা দিয়েছে আজ।
সংবাদ সংস্থার খবরে বলা হয়েছে স্পেন বিশ্বব্যাপী ভ্যাকসিনযুক্ত ভ্রমণকারীদের জন্য তার সীমানা খোলা বা উন্মুক্ত করার কথা জানিয়েছে। স্পেন সরকার আশা করছে পর্যটকদের পুনরায় আগমনে করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ তার পর্যটন খাতকে দ্রুত পুনর্জীবিত করতে পারবে।
এএফপির সাথে এক সাক্ষাৎকারে স্পেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ক্যারোলিনা দারিয়াস জোর দিয়ে বলেন, “গ্রীষ্মের পর্যটকদের জন্য স্পেন একটি নিরাপদ গন্তব্য”। তিনি আরও বলেন,পর্যটন ক্ষেত্রে আমরা বিশ্বব্যাপী নেতৃত্ব পুনরুদ্ধারের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
স্পেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, নন-ভ্যাকসিনযুক্ত ইউরোপীয়রা – যারা বর্তমানে ৭২ ঘন্টার মধ্যে নেওয়া নেতিবাচক পিসিআর পরীক্ষা দিয়ে স্পেনে সহজেই প্রবেশ করতে পারবে। তবে স্পেনে আগমনের পর একটি সাধারণ করোনার অ্যান্টিজেন পরীক্ষা দিতে হবে। স্পেনের ট্র্যাভেল এজেন্ট ইউনিয়নের (উনাভ) সভাপতি হোসে লুইস প্রিয়েটো স্পেনে পুনরায়”দর্শনীয় পুনরুদ্ধারের” আশা করছেন বলে জানিয়েছেন সংবাদ সংস্থা এএফপি। তাঁর বর্ণনা মতে, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং জার্মানিতে ট্যুর অপারেটররা – স্পেনের তিনটি প্রধান সমুদ্র সৈকতে প্রচুর পরিমাণে অগ্রিম রিজার্ভেশন পাচ্ছেন বলে জানানো হয়েছে।
তবে,কথা হলো যুক্তরাজ্য এখনও স্পেনকে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলির তালিকা থেকে সরিয়ে দেয়নি, যার অর্থ ব্রিটিশ ভ্রমণকারীদের তাদের দেশে ফেরার ক্ষেত্রে পৃথকীকরণের পাশাপাশি ব্যয়বহুল কোভিড -১৯ পরীক্ষার জন্য অর্থ প্রদান করতে হবে।
স্পেনে আগত পর্যটকদের মধ্যে বৃটিশরা প্রথম। এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে ২০১৯ সালে করোনার আগমনের পূর্বে গ্রীষ্মে স্পেনের ৮৩.৫ মিলিয়ন আগতদের এক-পঞ্চমাংশেরও বেশী ছিল যুক্তরাজ্য বা বৃটেন থেকে আগত পর্যটক।
করোনার পটভূমিতে, বড় ট্র্যাভেল অপারেটর টিইউআই (TUI) ১৩ জুন পর্যন্ত স্পেনের সমস্ত ফ্লাইট বাতিল করেছে। যুক্তরাজ্য আরও তিন সপ্তাহের জন্য তার সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করবে না বল জানিয়েছে।তথাপি স্প্যানিশ পর্যটন খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট এখনও দর্শনার্থীদের গ্রীষ্মের উত্থানের প্রত্যাশা করছেন।
সমগ্র স্পেন জুড়ে, কোস্টা ডেল সোল থেকে ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের কয়েক মাস পর হোটেল এবং রেস্তোঁরাগুলি পুনরায় চালু হচ্ছে এবং মহামারীর সংক্রমণের বিস্তার কমে আসায় বিভিন্ন বিমান সংস্থার বিমানগুলি পুনরায় তাদের যাত্রা শুরু করেছে। স্পেন তার পর্যটন শিল্পের উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল।
স্পেন পশ্চিমা দেশগুলির মধ্যে একটি অন্যতম দেশ যে মহামারী দ্বারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। ২০২০ সালে তার জিডিপিতে ১০.৮% হ্রাস পেয়েছিল। স্পেনীয় সরকার বছরের শেষ নাগাদ ৪৫ মিলিয়ন ভ্রমণকারীদের অঙ্কনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, তবে এপ্রিলের শেষের দিকে দেশটিতে মাত্র ১.৮ মিলিয়ন দর্শনার্থী দেখা গেছে, সরকারী পরিসংখ্যান অনুসারে। স্পেন সরকার আরও জানিয়েছেন সে তার দেশের পর্যটকদের রাশিয়ান ভ্যাকসিন “স্পুটনিক ভি” দেয়াকেও স্বীকৃতি দিয়েছেন।
কবির আহমেদ/ ইবি টাইমস