ভোলা প্রতিনিধিঃ উপকূলীয় দ্বীপ জেলা ভোলার সড়কে সম্প্রতি দুর্ঘটনা উদ্বেগ জনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ভোলার সড়ক ও মহাসড়ক এখন অনেকটাই অনিরাপদ হয়ে ওঠছে। যেন ক্রমেই মৃত্যু ফাঁদে পরিনত হচ্ছে জনসাধারণের চলাচল এ সড়কগুলো। সড়ক দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পাননি পুলিশও।
গত ২ মে বোরহানউদ্দিন উপজেলার কুঞ্জেরহাট বাজারে সরকারি কর্তব্য পালনের সময় ট্রাকের ধাক্কায় নিহত হন পুলিশের এএসআই আকলিমা বেগম।
ভোলার সড়কে অধিকাংশ সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনায় কোন মামলা না হওয়ার কারনে সড়ক দুর্ঘটনা কমছে না বলে মনে করছেন অনেকে। পুলিশ বলছে, দুর্ঘটনার শিকার অনেকেই থানায় মামলা করতে চান না। তাই, বেশিরভাগ সড়ক দুর্ঘটনার মামলা হচ্ছে না। আর কিছু কিছু মামলা হলেও সঠিক বিচার পান না বাদীপক্ষ। এতে করে উদ্বিগ্ন হওয়ার পাশাপাশি অনেকটা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ভোলা-চরফ্যাশন আঞ্চলিক, মহাসড়কসহ জেলার বিভিন্ন সড়কে চলাচলকারী সাধারণ যাত্রী, পথচারী ও সাধারণ মানুষ।
স্থানীয়রা ভোলায় সড়ক দুর্ঘটনার জন্য ভোলা-চরফ্যাশন সড়কে চলাচলকারী যাত্রীবাহী বাসের চালকদের দায়ী করে বলছেন, বাস চালকরা এ সড়কে বেপরোয়া ভাবে বাস চালানোর কারনে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে। আবার কেউ কেউ সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ার কারন হিসাবে এ সড়কে প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চলাচল ও অটোরিকশার অদক্ষ চালকদের দায়ী করছেন।
অন্যদিকে, সড়ক দুর্ঘটনার জন্য ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা মালিক সমিতি ও বাস মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ একে অপরকে দোষারোপ করছে।
ভোলার সড়কে একের পর এক সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিভিন্ন মন্তব্য লিখে পোস্ট করেছেন।
ভোলা জেলা ছাত্র লীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আবিদুল আলম তার ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, ভোলা বাস মালিক সমিতির ড্রাইভারদের লাইসেন্স, অভিজ্ঞতা, বয়স এমন কি মাদক সেবন ডোপ টেষ্ট করানো জরুরি। যে ভাবে বাস দুর্ঘটনায় মৃত্যু হচ্ছে তা দুঃখজনক ও সন্দেহ হচ্ছে। ভোলা সদর উপজেলা ছাত্র লীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান ফাহাদ তার ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, ভোলায় নিরাপদ সড়ক চাই! আর কত রাশেদ এভাবে প্রাণ দিবে!
বাস মালিক সমিতি ও ট্রাফিক আইনের প্রত্যেক চালকের প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা প্রশ্নে জরুরি পদক্ষেপ নেয়া এখন সময়ের দাবি।
স্থানীয় সূত্র ও পুলিশ জানায়, গত ২৭ মে বৃহস্পতিবার থেকে গত ১ জুন মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত ৫ দিনে ৩টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে মারা গেছেন ৬ জন। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন।
সম্প্রতি ভোলায় সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার ব্যাপারে ভোলা জেলা বোরাক ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইলিয়াস চৌধুরী বলেন, ভোলার বাস ড্রাইভারদের বেপরোয়া গাড়ি ড্রাইভিংয়ে একের পর এক তাজা প্রাণ চলে যাচ্ছে। দেখার মত কেউ নেই। তিনি প্রশ্ন করে বলেন প্রশাসন কেন চুপচাপ?
অন্যদিকে, ভোলায় সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ার কারন হিসাবে বেরাকের চালকদের দায়ী করে জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম বলেন, ভোলা শহরে বিগত ১৫ বছরেও সড়ক দুর্ঘটনায় একসঙ্গে ৪ জন মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেনি। তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি বোরাক ও ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চালকদের অদক্ষতার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে।
এ ব্যাপারে ভোলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মোঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, এককভাবে কোন ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠীর কারণে ভোলায় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে না। কখনো সরু রাস্তার কারণে দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। আবার যে সব গাড়ি সড়কে চলার কথা নয়, সে সব গাড়িও সড়কে কিছু কিছু চলছে, যা দূর্ঘটনা কারণ। পাশাপাশি চালকের অদক্ষতাকেও দায়ি করেন তিনি।
ভোলা/ইবিটাইমস/এমএন