ইউরোপ ডেস্কঃ আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছেন গতকাল শনিবার হাঙ্গেরীর রাজধানী বুদাপেস্টে কয়েক হাজার লোক সরকারের পরিকল্পিত চীনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস স্থাপনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভ জানায়। রয়টার্স আরও জানায় বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী লোকদের হাতের ব্যানারে লেখা ছিল “দেশদ্রোহী”,”রাষ্ট্রদ্রোহী”এবং “হাঙ্গেরীতে চীনের আধিপত্য চলবে না” ইত্যাদি।
হাঙ্গেরীর জাতীয়তাবাদী প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানের বিরুদ্ধে দেশের উদারপন্থীরা তার বিরুদ্ধে চীন পর্যন্ত সমঝোতার অভিযোগ করেছেন এবং আশঙ্কা করছেন যে এই ক্যাম্পাস স্থাপনের ফলে হাঙ্গেরীর উচ্চ শিক্ষার মানকে হ্রাস করতে পারে এবং বেইজিংকে হাঙ্গেরী এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে তার প্রভাব বাড়াতে সহায়তা করবে। বুদাপেস্টে এই চীনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস আসলে চীনা রাজনীতিরও একটি কূট কৌশল বলে দাবী বিক্ষোভকারীদের।
হাঙ্গেরিয়ান রাজধানীতে বিক্ষোভের সময়, ২২ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে রয়টার্সকে বলেন,”চীনের সাথে আমাদের দেশের সামন্ততান্ত্রিক সম্পর্ক জোরদার করার সাথে আমি একমত নই”। সে আরও বলেন,হাঙ্গেরীতে একটি চীনা বিশ্ববিদ্যালয় তৈরীর পরিবর্তে আমাদের নিজস্ব বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উন্নয়নে তহবিল ব্যবহার করা উচিৎ।
বুধাপেস্টের এমন একটি জায়গায় ক্যাম্পাসটি তৈরীর বিষয়ে এপ্রিল মাসে সরকার সাংহাই ভিত্তিক ফুদান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে যেখানে আগে হাঙ্গেরিয়ান শিক্ষার্থীদের জন্য একটি “আবাসিক গ্রাম” পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
হাঙ্গেরিয়ান সরকার বলেছে যে, ফুদান একটি বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠান এবং এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসটি “শিক্ষার্থীদের শ্রেষ্ঠ থেকে শেখার সুযোগ করে দেবে।”
এমটিআই (MTI) নিউজ এজেন্সি হাঙ্গেরিয়ান সরকারের একজন উপমন্ত্রী তমস শান্দার বরাত দিয়ে বলেছে যে, শনিবারের এই প্রতিবাদ অপ্রয়োজনীয় এবং ভিত্তিহীন। তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিরোধীদের পরচর্চা ও মিডিয়া রিপোর্টের অতিরঞ্জিত “রাজনৈতিক হিস্টিরিয়া” দ্বারা আক্রান্ত বলে দাবী করেছেন।
হাঙ্গেরীর বিরোধী রাজনীতিবিদ ও অর্থনীতিবিদরা বুদাপেস্টে এই চীনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস স্থাপনের প্রকল্পের উচ্চ ব্যয় এবং স্বচ্ছতার অভাবের জন্য সরকারের ব্যাপক সমালোচনা করেছেন। বুদাপেস্টের মেয়র Karácsony এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছেন।
“ফিদেসজ হাঙ্গেরীয় শিক্ষার্থীদের আবাসন এবং তাদের ভবিষ্যতের জন্য বিক্রি করে দিচ্ছে, ঠিক তেমনই এটি চীনের স্বৈরশাসনের অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়কে দেশে ফিরিয়ে আনতে পারে,” শনিবারের প্রতিবাদের আয়োজকরা ফেসবুকে এই রকমই স্ট্যাটাস দিয়ে পোস্ট শেয়ার করেন।
এদিকে বেইজিং এই সপ্তাহে অভিযোগ করে বলেছেন যে, “কয়েকজন হাঙ্গেরিয়ান রাজনীতিবিদ” চীন ও হাঙ্গেরির মধ্যে সু-সম্পর্ক ও পারস্পরিক সহযোগিতার পথে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে।
হাঙ্গেরীর রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন হাঙ্গেরীর সরকার প্রধান অরবান ক্রমশ পশ্চিমা দুনিয়া ছেড়ে বর্তমানে চীন, রাশিয়া এবং অন্যান্য পশ্চিমা বিরোধীদের সরকারগুলির সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণার স্বাধীনতা রোধ করে পশ্চিমা মিত্রদের সাথে দূরত্ব তৈরী করে চলেছে।
২০১০ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর হাঙ্গেরীরর প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান (Viktor Orbán) এই প্রথম বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ বিরোধীতার মুখোমুখি হয়েছেন। হাঙ্গেরীতে আগামী বৎসর ২০২২ সালে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন।
কবির আহমেদ /ইবি টাইমস