চরফ্যাসন(ভোলা): মুজিববর্ষ উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেয়ার ঘোষণা অনুযায়ী ভোলা জেলার ছোট ছোট দ্বীপগুলো সাবমেরিন ক্যাবলের এর মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত হলেও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের দ্বীপ মনপুরা উপজেলা হওয়া সাবমেরিন ক্যাবল এর মাধ্যমে সংযুক্ত হয়নি।এই উপজেলায় লক্ষাধিক লোকের বসবাস। বাসিন্দাদের মধ্যে শতকরা ৯০ ভাগ জেলে, কৃষক এবং দিনমজুর। সকল ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত এই জনপদের মানুষের প্রধান সমস্যা বিদ্যুৎ। উপজেলা সদরে প্রায় ৮ শতাধিক গ্রাহক সন্ধ্যা থেকে রাত ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সুবিধা পেয়ে আসলেও উপজেলার বাকি ৩টি ইউনিয়নের বাসিন্দারা বছরের পর বছর ধরে বিদ্যুৎ সুবিধা বঞ্চিত ছিল।
এই দূর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে প্রথমে উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নে সোলার মিনি গ্রীড স্থাপন করে গ্রাহকদের মাঝে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। পরে বাকি দুইটি ইউনিয়নেও দুইটি সোলার মিনি গ্রীডের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে গ্রাহকদের মাঝে।সাধারন বিদ্যুৎ খরচের তুলনায় এই বিদ্যুতের খরচ কয়েকগুন বেশি। এতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ এর দাম ৩০টাকা। ফলে বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপ উপজেলার গরীব ও অসহায় মানুষগুলোর মরার উপর খরার ঘা হয়ে চেপে বসেছে সোলার বিদ্যুৎ। মনপুরা একটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হওয়ায় সেখানে মানুষের জীবেনযাত্রা খুবই শোচনীয় । সামগ্রিকভাবে জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ না থাকায় মনপুরার মানুষের জীবন মানের উন্নতি হচ্ছে না।
মুজিববর্ষে সোলার মিনি গ্রিড বিদ্যুতের পরিবর্তে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিড থেকে ভোলার মনপুরায় শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় আনার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে চরফ্যাসনস্থ মনপুরাবাসী। দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লেখালেখির মাধ্যমে আন্দোলন করে আসছে মনপুরা উপজেলার সচেতন মহল এবং চরফ্যাসনস্থ মনপুরাবাসী।
অবশেষে ( ৫জুন) শনিবার সকাল ১০টায় চরফ্যাসন সদর রোডে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে অংশ নেয় চরফ্যাসনস্থ মনপুরার কয়েকশ মানুষ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন,সোলার বিদ্যুৎ এখন মানুষের গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্রাহকদের কাছ থেকে ১ ইউনিট বিদ্যুৎ বাবদ খরচ নিচ্ছে ৩০ টাকা। একজন গ্রাহক প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফ্যান ও বাতি এবং একটি ফ্রিজ ব্যবহার করলে তাকে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিল বেশী হওয়ার কারনে অনেকে প্রয়োজন থাকা সত্বেও লাইট বন্ধ করে রাখে। প্রচন্ড গরমের সময় অধিক বিলের ভয়ে ফ্যান না চালাতেও দেখা গেছে। অনেকে দিনের বেশিরভাগ সময়ে ফ্রিজের লাইন বন্ধ করে রাখেন। বিলের সাথে প্রতি মাসে ৭০ টাকা সার্ভিস চার্জ বাধ্যতামূলকতো রয়েছেই। বিদ্যুৎ বিল দিতে দিতে গ্রাহকদের নাভিশ্বাস উঠেছে।
জাতীয় গ্রীড থেকে বিদ্যুৎ এর দাবী করে বক্তারা আরও বলেন, দেখুন আমরা মনপুরাবাসী কতবড় বৈষম্যের স্বীকার। পদ্মা নদীর তলদেশ দিয়ে ফরিদপুরের দূর্গম চরে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে জাতীয় গ্রীডের বিদ্যুৎ গিয়েছে। সেখানে মাত্র ১০ হাজার পরিবার তবুও সেখানে বিদ্যুৎ গেল। এছাড়া ভোলা সদরের ভবানীপুর, মেদুয়া ও কাচিয়া চর। তজুমদ্দিন উপজেলার মলংচরা, সোনাপুর, চর জহিরউদ্দিন, চর মোজাম্মেল ও চর আবদুল্লাহ। চরফ্যাসন উপজেলার চর কুকরি-মুকরি ও মুজিবনগর সহ দেশের ১৬টি চরে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পৌছে দেওয়ার কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। অথচ লক্ষাধিক লোকের আবাসভূমি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মনপুরা উপজেলায় হওয়া সাবমেরিন ক্যাবলের আওতায় আসেনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিব শতবর্ষে সবগুলো চরে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পৌছে দেওয়ার ঘোষনা দিয়েছেন।
কিন্তু অদৃশ্য একটি শক্তির কারনে সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হচ্ছেনা এই উপজেলায়। তারা চাচ্ছেন, পুরো মনপুরায় সোলার মিনি গ্রীডের মাধ্যমে গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে। এটা বাস্তবায়ন হলে এখানকার মানুষ ৩০ টাকা প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিল দিতে না পেরে বিদ্যুতের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলবে। এবং একটা সময় তারা বিদ্যুৎ সুবিধা বঞ্চিত হয়ে পড়বেন বলে আশংকা করছেন সচেতন মহল।
মানববন্ধনে ব্যানার, ফেস্টুন ও লিফলেট নিয়ে কয়েক শ মানুষ অংশগ্রহন করে তারা আরও বলেন, বর্তমান সরকারের বিদ্যুৎ খাতের সাফল্য তাৎপর্যময় ও প্রশংসনীয়। সরকার নিরলসভাবে বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়ন করে যাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে গ্রামগুলিও বিদ্যুতের আওতায় আসছে। কিন্তু প্রায় ৫ শতাধিক বছরের পুরোনো এই দ্বীপের মানুষ এখনো নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা বঞ্চিত। আমরা সোলার মিনি গ্রীড বিদ্যুৎ চাইনা, চাই জাতীয় গ্রীডের নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ।
মানববন্ধনে চরফ্যাসনস্থ মপুরার সন্তান চরফ্যাসন সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম, মনপুরার সাবেক সচিব মোঃ আলম। কায়েস, ছালাহ উদ্দীন, মোশারেফ, নুর আলম শামীম প্রমুখ।
জামাল মোল্লা/ইবি টাইমস