ঢাকা: করোনায় বিপর্যস্ত অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখী দাঁড়িয়ে দেশের ৫০ তম বাজেট দিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। জীবন-জীবিকায় প্রাধাণ্য দিয়ে সৃদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশ-শিরোণামে দেয়া এ বাজেট অর্থমন্ত্রীর তৃতীয় বাজেট।
১৫৮ পৃষ্ঠার বাজেট বক্তৃতার বড় অংশই তিনি উপস্থাপন করেন ডিজিটাল পদ্ধতিতে। যেখানে প্রামাণ্য চিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরা হয় বাংলাদেশের ৫০ বছরের অর্জন আর সম্ভাবনার কথা।
জীবন-জীবিকা রক্ষার বড় চ্যালেঞ্জ নিয়ে ছয় লাখ তিন হাজার ৬৮১ কোটি টাকার রেকর্ড বাজেট উপস্থাপন করলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা থেকে স্বাস্থ্যখাতে এবারও দিলেন ১০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ। অর্থনীতি চাঙ্গার আশায় উদারহস্ত অর্থমন্ত্রী বাড়ালেন খরচের খতিয়ান। কিন্তু আয়ের সম্ভাবনা কম থাকায় ঘাটতি মেটাতে ব্যাপক হারে বিদেশি ঋণের প্রস্তাব দিলেন তিনি।
আয় বাড়াতে বিত্তবানদের ওপর করের ভার দেয়ার পাশাপাশি বাড়ালেন মোবাইলে অর্থ লেনদেন সেবাদাতা কোম্পানির করহারও। তবে, সীমিত করলেও একেবারে বাদ দেননি কালো টাকা সাদা করার সুযোগ।
প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ছয় লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা, যা চলতি বাজেটের তুলনায় ছয় শতাংশ বড়। এতে সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হয়েছে দুই লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। যা জিডিপির ৬.২ ভাগ। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৭.২ শতাংশ। আছে পাঁচ দশমিক তিন শতাংশে মূল্যস্ফীতি ধরে রাখার প্রত্যয়।
প্রস্তাবিত বাজেটে চলমান মেগা প্রকল্প এগিয়ে নিতে বরাদ্দ বাড়ানো হলেও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে স্বাস্থ্য খাত। দেয়া হয়েছে ৩২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা বরাদ্দ। মহামারি মোকাবেলায় রাখা হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ।
অর্থনীতি পুণরুদ্ধারে অর্থমন্ত্রী দিয়েছেন চলমান উন্নয়ন প্রকল্প চালু রাখার দিকে বিশেষ নজর। উন্নয়ন বাজেটে রাখা ২ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকার দুই লাখ ২৫ হাজার কোটিই থাকছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি। খাত বিবেচনায় এবার বেশি অর্থ যাচ্ছে পরিবহন ও যোগাযোগে, ২৫.৮ শতাংশ।দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে ১৯.৭ ভাগ। স্থানীয় সরকারে ১৫.১ শতাংশ, বিদ্যুৎ-জ্বালানিতে ১১.৫ শতাংশ আর স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ ৬.৬ শতাংশ অর্থ।
প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থায়নের মূল উৎস এনবিআরকে দেয়া হয়েছে বাজেটের ৫৪.৭ শতাংশ রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা। তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার আয়ের ৩৮.৭ শতাংশ আসবে ভ্যাট থেকে। আয়কর থেকে আসবে ৩১.৮ শতাংশ অর্থ। বাকি অর্থের ১১.৫ শতাংশ আসবে আমদানি শুল্ক এবং ১১.৫ শতাংশ অর্থ আসবে সম্পূরক শুল্ক থেকে।
এরপরও ২ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা যে ঘাটতি থাকবে তা পূর্ণ করা হবে বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীন উৎস থেকে ঋণ নেয়ার মাধ্যমে। এবার বিদেশি উৎ থেকে ঋণ নেয়ার টার্গেট ধরা হয়েছে ৯৭ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। এরপরও যে অর্থের টান পড়বে তা মেটাতে ব্যাংক থেকে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা ধার নেবে সরকার। অন্য উৎসের মধ্যে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে তোলা হবে ৩২ হাজার কোটি টাকা।
এবারের বাজেটে আয়ের তুলনায় ব্যয়ের পরিকল্পনা। সামাজিক সুরক্ষার আওতাও বাড়ছে। কর্মসংস্থান বাড়াতে করছাড় দিয়েছেন উদ্যোক্তাদের। এ এ বিবেচনায় অর্থমন্ত্রির আশা, শিগগিরই ঘুরে দাঁড়াবে অর্থনীতি।
এ বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা আগের তিন লাখ টাকা বহাল রাখা হলেও সাড়ে তিন লাখ করা হয়েছে তৃতীয় লিঙ্গের আয়সীমা। বাণিজ্যের প্রসারে এবার তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয়, এমন কোম্পানির করপোরেট কর হার আড়াই শতাংশ করে কমানোর প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তবে, একক মালিকানার কোম্পানি হলে করপোরেট কর কমবে সাড়ে সাত শতাংশ।
অপ্রদর্শিত অর্থ দিয়ে জমি কেনা ও নগদ টাকায় ব্যাংকে এফডিআর করার সুযোগ বন্ধ করলেও ফ্ল্যাট কিনে সাদা করা যাবে কালো টাকা। ১৬ কোটি মানুষের দেশে মাত্র ২৫ লাখ মানুষ কর দেয়ায় এবার যৌক্তিক আয় থাকা সব করদাতাকে আনতে চান করের আওতায়।
ঢাকা/ইবিটাইমস/আরএন