ঢাকা: প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থায়নের মূল উৎস এনবিআরকে দেয়া হয়েছে বাজেটের ৫৪.৭ শতাংশ রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা। তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার আয়ের ৩৮.৭ শতাংশ আসবে ভ্যাট থেকে। আয়কর থেকে আসবে ৩১.৮ শতাংশ অর্থ। বাকি অর্থের ১১.৫ শতাংশ আসবে আমদানি শুল্ক এবং ১১.৫ শতাংশ অর্থ আসবে সম্পূরক শুল্ক থেকে।
এরপরও ২ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা যে ঘাটতি থাকবে তা পূর্ণ করা হবে বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীন উৎস থেকে ঋণ নেয়ার মাধ্যমে। এবার বিদেশি উৎ থেকে ঋণ নেয়ার টার্গেট ধরা হয়েছে ৯৭ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। এরপরও যে অর্থের টান পড়বে তা মেটাতে ব্যাংক থেকে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা ধার নেবে সরকার। অন্য উৎসের মধ্যে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে তোলা হবে ৩২ হাজার কোটি টাকা।
এবারের বাজেটে আয়ের তুলনায় ব্যয়ের পরিকল্পনা বেশি। সামাজিক সুরক্ষার আওতাও বাড়ছে। কর্মসংস্থান বাড়াতে করছাড় দিয়েছেন উদ্যোক্তাদের। এ বিবেচনায় অর্থমন্ত্রির আশা, শিগগিরই ঘুরে দাঁড়াবে অর্থনীতি।
এ বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা আগের তিন লাখ টাকা বহাল রাখা হলেও সাড়ে তিন লাখ করা হয়েছে তৃতীয় লিঙ্গের আয়সীমা। বাণিজ্যের প্রসারে এবার তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয়, এমন কোম্পানির করপোরেট কর হার আড়াই শতাংশ করে কমানোর প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তবে, একক মালিকানার কোম্পানি হলে করপোরেট কর কমবে সাড়ে সাত শতাংশ।
অপ্রদর্শিত অর্থ দিয়ে জমি কেনা ও নগদ টাকায় ব্যাংকে এফডিআর করার সুযোগ বন্ধ করলেও ফ্ল্যাট কিনে সাদা করা যাবে কালো টাকা। ১৬ কোটি মানুষের দেশে মাত্র ২৫ লাখ মানুষ কর দেয়ায় এবার যৌক্তিক আয় থাকা সব করদাতাকে আনতে চান করের আওতায়।
কাগজে-কলমে দেশে চলছে বিনিয়োগের খরা, আবার করোনায় বেশিরভাগ মানুষের আর্থিক অবস্থাও আগের চেয়ে খারাপ- এমন বাস্তবতার মধ্যেও বেড়েছে রাজস্ব আহরনের লক্ষ্য। স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির বাড়তি চাপ সামনে রেখে অর্থমন্ত্রী, লক্ষ্য অর্জনে কষছেন নানা হিসেব-নিকেষ। এবার সরকারের বড় ফোকাস থাকছে কর ফাঁকি রোধ ও করের জাল বিস্তৃতিতে। কালো টাকা সাদা করার সুযোগও বহাল থাকছে এবারো।
দেশে চলমান করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে ব্যবসায়ীমহল দাবি করে আসছেন, এখনো স্বাভাবিক পর্যায়ে নেই ব্যবসা-বাণিজ্য।এদিকে, করোনা ধাক্কায় অনেকই চাকরি হারিয়েছেন, আয় কমে গেছে সাধারণ মানুষের। তারপরও আগের অর্থ-বছরের চেয়ে বেশি বাড়তি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকছে ।
দেশিয় উৎস ও বৈদেশিক অনুদান মিলে এবার ৩ লাখ ৯২ হাজার ৪৯০ কোটি পেতে চায় সরকার। এরমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে এবার টার্গেট দেয়া হয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের। বাকি অর্থ এনবিআর বহির্ভূত কর থেকে ১৬ হাজার কোটি টাকা ও ৪৩ হাজার কোটি টাকা অর্থমন্ত্রী নিতে চান কর বহির্ভূত উৎস থেকে ।
বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ২ শতাংশ, যা টাকা অংকে দাঁড়ায় ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। ঘাটতি সবচে বড় অংশ ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৫৩ কোটি নেয়ার পরিকল্পনা অভ্যন্তরীণ ঋণ থেকে। যারমধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নেয়া হবে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র ৩২ হাজার কোটি টাকা ও ব্যাংক বহির্ভূত খাত থেকে ৩৭ হাজার ১ কোটি টাকা ঋণ অর্থ নেবে সরকার। আর ঘাটতি বাকিটা ৯৭ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে বিদেশ থেকে নেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
শতাংশের হিসেবে সবচে অর্থ পাওয়ার লক্ষ্য মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে, যা মোট ৩৮.৭ শতাংশ। শতাংশ হিসেবে এরপরেই আয়কর থেকে ৩১.৮ শতাংশ, সম্পূরক শুল্ক ও আমদানি শুল্ক থেকে যথাক্রমে ১৬.৫ শতাংশ ও ১১.৫ শতাংশ। ভ্যাট থেকে অর্থ পেতে পাওয়ার লক্ষ্য ১ লাখ ২৭ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। আয়কর থেকে ১ লাখ ৪ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা। এরপর সর্বোচ্চ আদায়ের খাতগুলো সম্পূরক শুল্ক ও আমদানি থেকে।
আগের থেকে আভাস ছিল এবার শেয়ারবাজারে তালিকাভূক্ত কোম্পানি কর্পোরেট ট্যাক্স কমছে। তার ছাপও পাওয়া যাচ্ছিল বাজারে। বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় ডিএসই সূচক ছয় হাজার উপরে অবস্থান করছে। শেয়ারবাজারে তালিকাভূক্ত কোম্পানি কর্পোরেট ট্যাক্স কমানো হয়েছে আড়ায় শতাংশ। একই পরিমাণ কমানো হয়ে তালিকাবহির্ভূত কোম্পানির ক্ষেত্রে।
ক্ষেত্র থাকার পর সঠিকভাবে ট্যাক্স আদায় করতে পারা যাচ্ছে না। তাই সরকারের এবার বড় চেষ্টা থাকছে কর ফাঁকি কমানো ও ট্যাক্সের নেট বাড়ানো।এ কারণেই দোকানে ইলেকট্রনিক ডিভাইস-ইএফডি বসানোর ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। দুই লাখ টাকার উর্ধ্বে সঞ্চয়পত্র কিনতে ও পোস্টাল সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলতে টিআইএন গ্রহণের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হচ্ছে।
ঢাকা/ইবিটাইমস/আরএন