চরফ্যাসন(ভোলা) : ঘূর্ণিঝড় ইয়াস এর প্রভাবে অন্তত ১৫ শতাধিক গরু, মহিষ পানির সাথে ভেসে গেছে। ভেসে যাওয়া এসব গবাদি পশু লবনাক্ত বিষাক্ত পানি পান করেছে। তাই প্রতিদিন মারা যাচ্ছে ২৫ থেকে ৩০টি গবাদি পশু। বনের ভিতর পড়ে থাকতে আর পানিতে ভাসতে দেখা গেছে এসব মরা পশু।
বঙ্গোপসাগর মোহনার উত্তাল মেঘনা পাড়ি দিলেই ভোলা চরফ্যাসনের ঢালচর ইউনিয়নের পূর্বের চর। সাগর মোহনার এই চরসহ এমন আরো বেশ কয়েকটি চর রয়েছে। এসব চরে যাওয়ার সময় দেখা যায় উত্তাল মেঘনায় মরা মহিষ ও গরু ভাসতে। শুধু তাই নয় চর গুলোতে নামতেই বনের ভিতর হাটতে গেলে চোখে পড়বে এমন অসংখ্য মৃত গবাদী পশু মৃত পড়ে আছে। এসব গবাদি পশুর মালিকরা হতাশ হয়ে পড়েছে এগুলো অপসারন করতে গিয়ে। শুধু তাই নয় দুর্গন্ধে এসব মৃত পশুর কাছে যেতে পর্যন্ত পারছে না কেউ। এছাড়া কেউ আবার পানিতে টেনে নিয়ে ভাসিয়ে দিচ্ছে মেঘনায়। এমন দৃশ্য এখন প্রতিদিনের।
এই ইউনিয়নের পুবের ঢালচর, চর পিয়াল, বয়ারচর, তারুয়ার চরসহ অন্তত ৪ থেকে ৫টি বিশাল চর রয়েছে। এসব চরে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ হাজার গরু ও মহিষ ছারা অবস্থায় থাকে বিভিন্ন মালিকের। তবে চরে নেই কোন মাটির কিল্লা কিংবা বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা। যে কারনে এসব গবাদি পশু ঝড় জলোচ্ছাসে ঝুকির মধ্যে পড়ে। গবাদি পশু রক্ষা করবে না নিজেকে। এমন অবস্থায় গবাদী পশুর মালিক ও বাতানেররা(রাখাল) গাছের উপর উঠে নিজেকেই রক্ষা করেছেন। মাটির কিল্লা না থাকায় এমন অবস্থার সৃস্টি। এবারের মত এতবড় জলোচ্ছাস আর কখনোই হয়নি। এছাড়া চরগুলোতে কোন সুপেয় পানির ব্যবস্থা না থাকায় লবনাক্ত দুষিত পানি খেয়ে অন্তত ২ থেকে ৩ শতাধিক গবাদী পশু মারা গেছে বলে দাবী করেন গবাদী পশুর মালিকরা। তাই তারা সুপেয় পানি ও মাটির কিল্লা দেয়ার জোরালো দাবী জানান।
ঝড় জলোচ্ছাসের সময় এসব চর থেকে অন্তত ১২ থেকে ১৫ শতাধিক গরু আর মহিষ পানিতে ভেসে গেছে। চোখের সামনে ভেসে যেতে দেখলেও কিছুই করার ছিলো না বলে জানান মো: মনির হাওলাদার। শেষ পর্যন্ত গাছের উপর উঠে নিজেকে রক্ষা করলেও মহিষ, গরু আর ভেড়া রক্ষা করতে পারেনি। শখ করে ভেড়া লালন পালনের জন্য ১৫টি ভেড়া আনলেও ৮টি ভেসে যায় পানির তোরে।
এদিকে একটি মরা মহিষ ভাসিয়ে দিতে দেখা যায় মো: নুরে আলমকে। তার এ নিয়ে অন্তত ১০টা গরু ও মহিষ মারা গেছে। এছাড়া মো: সেলিম এর ১১টি গরু ও ৫টি মহিষ মারা গেছে। কম যায়নি বৃদ্ধ মো: মফিজল বাতানের। ৩০টি মহিষ আর ২৫টি গরু মারা গেছে। ইব্রাহিম,আলী হোসেন,মো: হোসেন, হাসান মুন্সী, মো: লোকমান মুন্সি, মো: মফিজল মোল্লা ও মো: লোকমান পাটোয়ারী, মো: হাফেজ পাটোয়ারী, মো: তৈয়ব মাঝি, হানিফ পাটোয়ারী, ইউসুফ পাটোয়ারীসহ কয়েকশত মানুষেরই একই অবস্থা।
এদিকে এসব বিষয় ক্ষোভ জানিয়ে ঢালচর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মো: মোস্তফা মিয়া বলেন, দীর্যদিন ধরেই বিভিন্ন বিষয় দাবী জানিয়ে আসলেও কোন প্রতিকার হচ্ছে না। জলোচ্ছাসের সময় ঢালচরের অন্তত ১৫ শতাধিক গবাদী পশু ভেসে যাওয়া আর প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০টি বিষাক্ত পানি খেয়ে মারা যাওয়ার কথা স্বীকার করে এসব গবাদী পশু রক্ষায় মাটির কিল্লা ও সুপেয় পানির জন্য পুকুর খনন করে দেয়ার দাবী জানান সরকারের কাছে।
জেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা ইন্দ্রজীত কুমার মন্ডল জানান,ভোলা জেলার ৫৭টি ইউনিয়নে ঘুর্নীঝড় ইয়াসে ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে ৫হাজার ৫শত ৫৭টি গরু,৩৬৫৯টি মহিশ,১১৬১২টি ছাগল এবং ২০৫১টি ভেড়া নিখোজ রয়েছে।এছাড়া মারা গেছে ৯৪টি গরু,৯৭টি মহিষ,৪৫টি ছাগল ও ১৭৬টি ভেড়া। এছাড়া হাস এবং মুরগী রয়েছে আরো কয়েক হাজার।
জামাল মোল্লা /ইবি টাইমস