বাংলাদেশে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মিউট্যান্ট ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত

বাংলাদেশে চলমান লকডাউন আরও এক সপ্তাহ বাড়ছে

বাংলাদেশ ডেস্কঃ সরকারী সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে দেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছেন যে,করোনাভাইরাস ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট (ধরন) ও ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বাংলাদেশে যাতে বিস্তার ঘটাতে না পারে সেজন্য চলমান লডকাউনের সঙ্গে নতুন কিছু শর্তাবলি যুক্ত করে আরও এক সপ্তাহ লকডাউনের মেয়াদ বাড়াতে পারে সরকার।

রবিবার ৩০ মে বাংলাদেশ সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন এক ভার্চুয়াল বৈঠকে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন,দেশের করোনায় আক্রান্ত রোগীদের জিনোম সিকোয়েন্স করে ভারতীয়, আফ্রিকানসহ বিভিন্ন দেশীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যাচ্ছে।

তিনি বলেন,বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ২৭টি যুক্তরাজ্যের ভ্যারিয়েন্ট, ৮৫টি দক্ষিণ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট, পাঁচটি নাইজেরিয়ান ভ্যারিয়েন্ট এবং ২৩টি ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে।

তিনি আরও বলেন,এর মধ্যে ভারতের মিউট্যান্ট ভাইরাস B.1.617 ভারত থেকে ফেরত এবং তাঁদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে পাওয়া গেছে।

ভ্যারিয়েন্ট প্রাপ্তিতে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘করোনায় যত রোগী শনাক্ত হবে, ততই নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যাবে। সুতরাং ভ্যারিয়েন্ট যা-ই হোক না কেন, আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। যার যখন সময় আসবে, তাকে টিকা নিতে হবে। এভাবে আমরা সংক্রমণ কমাতে পারবো। করোনা মহামারী নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবো।’

প্রসঙ্গত, বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের সংক্রমণের শুরু থেকেই বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্ট ও তার ভয়াবহতা নিয়ে আলোচনা হয়ে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে আফ্রিকান ও ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট জনমনে আতঙ্ক তৈরী করেছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ করে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার করণ হিসেবে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টকে দায়ি করেছেন অনেকেই। ইতিমধ্যেই ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা লকডাউন ঘোষিত করা হয়েছে।

এদিকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে চলমান লকডাউনের মেয়াদ শেষ হয়েছে গতকাল রবিবার ৩০ মে। তাই নতুন করে আগামী আরও এক সপ্তাহ লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর প্রজ্ঞাপনে সীমান্তবর্তী জেলায় কঠোর লকডাউনের আওতায় আসতে পারে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ঠেকাতে দেশের সীমান্তবর্তী জেলায় কঠোর লডকাউনের বিষয়ে আলোচনা শোনা যাচ্ছে। কারণ ইতোমধ্যে সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ করোনার হটস্পট হয়ে ওঠায় গত সোমবার থেকে এক সপ্তাহ বিশেষ লকডাউন দেওয়া হয়েছে। সীমান্তবর্তী জেলায় সংক্রমণ বাড়তে থাকলে জেলাভিত্তিক বিশেষ লকডাউন দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে সরকার।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলা করোনার হটস্পট হয়ে ওঠায় সরকারকে নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে। ফলে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে মানুষের চলাচল সীমিত করতে কঠোর লকডাউন দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হতে পারে। সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর মানুষের সঙ্গে আগামী এক সপ্তাহ যেন অন্য জেলার মানুষের যোগাযোগ কম হয়।

চলতি বছরের করোনাভাইরাস আক্রান্ত ও মৃত্যু বাড়ায় ৫ এপ্রিল লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত ঢিলেঢালা লকডাউন হলেও সংক্রমণ আরও বেড়ে যাওয়ায় ১৪ এপ্রিল থেকে ‘কঠোর লকডাউন’ ঘোষণা করে সরকার। ধাপে ধাপে আগামী ৩০ মে পর্যন্ত লকডাউনের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়।

এর আগে শনিবার ২৯ মে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, করোনাভাইরাস ও ব্ল্যাক ফাঙ্গাস প্রতিরোধে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলায় কঠোর লকডাউন জরুরী হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলা ৩৫টি। সীমান্তবর্তী জেলার লোকজনের যাতায়াত বেশ। ইতোমধ্যে ভারত থেকে দেশে ফিরে আসা বেশ কয়েকজনের শরীরে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। তাই সীমান্তবর্তী জেলায় লকডাউন জরুরী হয়ে পড়েছে।

বিএসএমএমইউ উপাচার্য আরও বলেন, সীমান্তবর্তী জেলার মানুষ অন্য শহরে না যেতে পারে সেজন্য কঠোর লকডাউন বাস্তবায়ন করতে হবে। একইসঙ্গে অন্য জেলার মানুষও যেন সীমান্তবর্তী জেলায় প্রবেশ করতে না পারে। ভারত থেকে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় বৈধ বা অবৈধভাবে বাংলাদেশে যারাই আসুক না কেন তাদের অবশ্যই কোয়ারেন্টাইনে রাখতে হবে।

কবির আহমেদ/ ইবি টাইমস

EuroBanglaTimes

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »