সিলেটে অল্প সময়ের ব্যবধানে একাধিক ভূমিকম্প শুধু সিলেট না সম্ভবত সারা বাংলাদেশের জন্য এক সতর্ক সংকেত বহন করছে
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ হিমালয় অঞ্চলের ভূমিকম্প সম্বন্ধে বিশ্বের সবচেয়ে নামকরা ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ রজার বিলহ্যাম এর মতে সিলেটের পাশে মেঘালয়ের ডাউকি ফল্টে ৮ মাত্রার অধিক ভূমিকম্প হওয়াটা শুধু সময়ের ব্যাপার। বিশ্ববিখ্যাত নেচার বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধে প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেছেন যদি একটি মাত্র বড় ভূমিকম্পের মাধ্যমে জমা হওয়া সকল সঞ্চিত শক্তি ছেড়ে দেয় তবে তার ফলাফল হবে অকল্পনীয়। আরও নির্দিষ্ট করে বললে বলতে হয় ঢাকা ও সিলেট শহরের অবস্থা হবে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমানবিক বোমার পরে যে ধ্বংশযোগ সাধিত হয়েছিল সেই একই মানের। কিন্তু যদি ছোট-ছোট ভূমিকম্পের মাধ্যমে জমা হওয়া শক্তি ক্ষয় হয় তবে তা হবে বাংলাদেশের মানুষের জন্য আশীর্বাদ।
বিপরীত ক্রমে এই ছোট-ছোট ভূমিকম্প যদি পুরো ডাউকি ফল্টকে অস্থিতিশীল করে দেয় তবে সিলেট কিংবা পুরো বাংলাদেশে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হবে অকল্পনীয়। তাই আগামী ১ সপ্তাহ এই অঞ্চল তথা বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।এই অঞ্চলে সবচেয়ে বড় ভূমিকম্পটি সংঘটিত হয়েছিল ১৮৯৭-এর আসামে।
১৮৯৭ সালের ১২ই জুন ভারতের আসামে সংঘটিত হওয়া ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৮.১ রিখটার স্কেলে।সেই দিনের সেই ভূমিকম্পে প্রায় ১,৫৪২ লোক হতাহত হলেও, এই ভূমিকম্পের আকার অনুযায়ী মৃতের সংখ্যা খুব বেশি ছিল না, তবে সম্পত্তির ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ বিপুল ছিল। ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট ক্ষয়-ক্ষতি কলকাতা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল, সেখানকার ডজন ডজন অট্টালিকা মারাত্মকভাবে ধ্বংস হয় বা আংশিকভাবে ধসে পড়ে। ভারতের উত্তর প্রদেশের আহমেদাবাদ এবং পাকিস্তানের পেশাওয়ারসহ এই ভূকম্পন সারা বাংলাদেশ ও ভারত থেকে অনুভূত হয়। এই কম্পন বার্মা থেকেও অনুভব করা গিয়েছিল।
এই ভূমিকম্পটির সৃষ্টি হয়েছিল ওল্ডহ্যাম ফাটলের এসএসডব্লিউ-নিমজ্জিত বিপরীত(SSW-dipping reverse Oldham fault) অংশে। এই অংশটি হচ্ছে ভারতীয় প্লেট এর অন্তর্গত শিলং প্লেটুর উত্তর অংশে।
প্রধান ফাটলে ন্যূনতম ১১ মি (৩৬ ফু) স্থানচ্যুতি ঘটেছিল, যদিও ১৬ মি (৫২ ফু) পর্যন্ত হিসেব করা হয়েছিল, যা আগে পরিমাপকৃত যেকোন ভূমিকম্পের চেয়ে সর্বাধিক। আকস্মিক স্থানচ্যুতি আঘাতসহ ১৮০ কিমি (১১০ মা) এলাকাজুড়ে গননালব্ধ হয়েছিল এবং ভূপৃষ্ঠ হতে ৯–৪৫ কিমি (৫.৬–২৮.০ মা) নীচ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল, যা সমগ্র ভূত্বকের গভীরতাকে ও নাড়িয়ে তুলেছিল।
মনে করা হয়, এই ভূমিকম্প ২০ মাইল (৩২ কি.মি) ভূগর্ভে সংঘটিত হয়, এতে ৩,৯০,০০০ বর্গকিলোমিটার (১,৫০,০০০ মাইল) ঘরবাড়ি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং বার্মা থেকে দিল্লী পর্যন্ত প্ৰায় ৬,৫০,০০০ বর্গকিলোমিটার (২,৫০,০০০ মাইল) জুড়ে এই ভূকম্পন অনুভব করা গিয়েছিল। এর ফলে প্ৰতিবেশী দেশ ভুটান এর বহু অট্টালিকা মারাত্মকভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। এরপর ডজন-ডজন ছোট্ট ছোট্ট ভূকম্পন অনুভূত হয়েছিল।
ঐতিহাসিক রেকর্ড অনুযায়ী কলকাতায় ৯ই অক্টোবর, ১৮৯৭ গ্রীনিচ মান সময় ০১:৪০ মিনিটে শেষ ভূকম্পন অনুভূত হয়েছিল।।এই ভূমিকম্পে আসামের বর্তমান মেঘালয়ের শিলং প্লেটে তীব্রভাবে ঊর্ধ্বমুখী ধাক্ষার ফলে প্রায় ১১ মিটার উপরে উঠে যায়। এর ফলে সৃষ্ট ফাটলের দৈর্ঘ্য ছিল ১১০ কিলোমিটার। যেখানে ফাটলের স্থানচ্যুতি ছিল প্রায় ১৮ মিঃ (সঠিকটা ৭ মিঃ কম বা বেশি হতে পারে)। এর উপকেন্দ্রে আনুভূমিক ত্বরন ১g বল এবং পৃষ্টের বেগ ৩ মি/সে (m/s) বলে মনে করা হয়।
শিলংয়ে, ভূমিকম্পের ফলে পাথরে তৈরি প্রতিটি বাড়িঘর এবং কাঠের তৈরি অর্ধেক বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে যায়। এর কাঁপুনি সবকিছুকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয় এবং ১৩ জোন লোক মারা যায়। ঐ এলাকায় ফাটল চিহ্নিত করা হয়। চেরাপুঞ্জিতে ভূমিকম্পের ফলে ভূমিধ্বস হয়, যার ফলশ্রুতিতে ৬০০ লোক মারা যায়।
গোয়ালপাড়ায়,এই ভূমিকম্পের ফলে ব্রহ্মপুত্রের পানি এসে জোয়ারের সৃষ্টি করে। এর তীরবর্তী শহরটির বাজার ধ্বংস করে দেয়। নলবাড়িতে, ভূকম্পন ও জলতরঙ্গ দেখতে পাওয়া গিয়েছিল। গুয়াহাটিতে, ভূমিকম্প তিন মিনিট পর্যন্ত ছিল। ব্রহ্মপুত্রের পানি ৭.৬ ফুট ফুলে ফেঁপে উঠেছিল। ভূমিকম্পে উমানন্দ
দ্বীপ মন্দির ও রেললাইনের ক্ষতি হয়। ৫ জন লোক মৃত্যুবরণ করে। নগাঁওয়ে, প্রতিটি ইটের বাড়ি ভেঙ্গে পড়েছিল, যেখানে ঐতিহ্যগতভাবে বানানো কাঠের বাড়ি যেগুলোর ছাঁদ ঘাসের তৈরি, সেগুলো ও বেঁকে যায়। ছোট ছোট অনেক ফাটল/আগ্নেয়গিরি দেখতে পাওয়া গিয়েছিল এবং রাস্তাঘাট গাড়ি চলাচলে অযোগ্য হয়ে পড়েছিল।
কবির আহমেদ/ ইবি টাইমস