সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় হত্যা মামলায় জড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে এক লাখ ঘুষের অভিযোগ

ঝালকাঠি প্রতিনিধি : ঝালকাঠির নলছিটির এক কিশোরকে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ছয় দিন আটকে রেখে ভয় দেখিয়ে তার পরিবারের কাছ থেকে এক লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে উপপরিদর্শক জয়নাল আবেদীনের বিরুদ্ধে। ঘুষের বাকি দুই লাখ টাকা পরিশোধ না করায় মহিউদ্দিন হাসানাত নামে ওই কিশোরকে,একটি শিশুকে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামি করে ছয় দিন পরে আদালতে হাজির করা হয়। আজ রবিবার দুপুরে ঝালকাঠি প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন মহিউদ্দিন হাসানাতের বাবা সাবেক সেনা সদস্য মোসলেম আলী খান।

লিখিত অভিযোগে তিনি বলেন, ২০১২ সালের এ ঘটনায় পুলিশের ওই উপপরিদর্শকের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ১১ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন মহিউদ্দিন হাসানাতের বাবা সাবেক সেনা সদস্য মোসলেম উদ্দিন খান। এদিকে হত্যা মামলায় নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালত মহিউদ্দিনকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন। যদিও রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হয়েছে। ষড়যন্ত্রমূলক এ মামলায় পুলিশের ভুলের কারণে ৯ বছর ধরে কারাগারে মহিউদ্দিন বন্দি রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তার বাবা মোসলেম আলী খান।

লিখিত অভিযোগে তিনি বলেন, ২০২১ সালে তঁার ছেলে মহিউদ্দিন হাসানাতকে (১৭)  ফুসলিয়ে নলছিটির মালিপুর গ্রামের তোফাজ্জেল হোসেন ও তার পরিবার মেয়ে ফাতেমাতুজ জোহরা লিজার (১২) সঙ্গে আদালতে নোটারির মাধ্যমে বিয়ে দেয়। মেয়ের বয়স না হওয়ায় এ বিয়েতে মোসলেম উদ্দিন খানের পরিবার রাজি ছিলেন না। বিয়ের এক বছর পর ২০১২ সালের ১০ আগস্ট ঢাকার মণিপুরের বাসার সামনে থেকে তোফাজ্জেল হোসেনের ছেলে ও মহিউদ্দিন হাসানাতের শ্যালক আশিকুর রহমান রিফাতকে (১০) অপহরণ করে দুর্বৃত্তরা। রাতে অপহৃত ছেলে রিফাত মোবাইলফোনে তার বাবাকে অপহরণের বিষয়ে ফোনে জানায়। এর পর থেকে  ওই ফোন নম্বরটি বন্ধ করে রাখে অপহরণকারীরা।

এ ঘটনায় ১১ আগস্ট একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। পরের দিন ১২ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে রিফাতের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই দিনই সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক জামাল হোসেন অজ্ঞাত আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ২১ আগস্ট হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে মহিউদ্দিন হাসানাতকে নলছিটির কাঠিপাড়া গ্রাম থেকে আটক করে। তাকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় নিয়ে আদালতের নির্দেশ ছাড়া ছয় দিন আটকে রেখে নির্যাতন চালায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই জয়নাল আবেদীন। হত্যা মামলায়  মহিউদ্দিনকে জড়ানোর ভয় দেখিয়ে তার পরিবারের কাছে তিন লাখ টাকা ঘুষ দাবি করে ওই এসআই। টাকা দিলে মামলা জড়ানো হবে না বলেও জানান ওই এসআই।

২৪ আগস্ট থানায় বসে মহিউদ্দিনের বাবার কাছ থেকে এক লাখ টাকা ঘুষ নেন এসআই জয়নাল আবেদীন। এর পরেও হত্যা মামলায় আসামি করে ২৬ আগস্ট মহিউদ্দিন হাসানাতকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাকে জেল হাজতে পাঠায়। এ মামলায় ২০১৩ সালের ২ মার্চ আদালতে মহিউদ্দিন হাসানাত ও কুমিল্লার যুবক সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। আদালত ২০১৮ সালের ২ জুলাই দুই আসামিকে ফাসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। সাইফুল পলাতক থাকলেও মহিউদ্দিন হাসানাত ৯  বছর ধরে কারাগারে আছে।

মোসলেম উদ্দিন খানের দাবি, তার ছেলেকে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় আসামি করে ফাসানো হয়েছে। ঘুষের সব টাকা পরিশোধ না করায় এসআই জয়নাল আবেদীন ইচ্ছে করেই  নির্দোশ ছেলেকে আসামি করে চার্জশীট দিয়েছে। ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ এনে তিনি এসআই জয়নাল আবেদীনের নামে নারায়ণগঞ্জ চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক বিচার দাবি ও তার  নির্দোশ ছেলের মুক্তি দাবি করেছেন তার বাবা মোসলেম উদ্দিন খান।

বাধন রায় /ইবি টাইমস

EuroBanglaTimes

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »