আজ ৩০ মে বাংলাদেশের সাবেক রাস্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪০ তম মৃত্যুবার্ষিকী

১৯৮১ সালের এই দিনে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্যের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন তিনি

বাংলাদেশ ডেস্কঃ আজ ৩০ মে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি,সেনা প্রধান, মহান মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান (বীর উত্তম) এর ৪০ তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৮১ সালের এই দিনে চট্টগ্রামে একদল বিপথগামী সেনাকর্মকর্তাদের হাতে এক নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হন তিনি। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী স্মরণ করতে ১৫ দিনের কর্মসূচি দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী

দল বিএনপি। দিনটি উপলক্ষে বিশেষ বাণী দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সমমনা কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারা।

গতকাল শনিবার ২৯ মে জাতীয় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘জাতির ক্রান্তিকালে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্ব ছিল অবিস্মরণীয়। তিনি সকল সংকটে দেশ ও জনগণের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন। মহান স্বাধীনতার ঐতিহাসিক ঘোষণা, স্বাধীনতা যুদ্ধের ময়দানে বীরোচিত ভূমিকা এবং একটি নতুন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণে তার অনবদ্য অবদানের কথা আমি গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।’

বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রারম্ভে রাজনৈতিক নেতৃত্বের সিদ্ধান্তহীনতায় দেশের মানুষ যখন দিশেহারা ঠিক সেই মুহুর্তে ২৬শে মার্চ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে মেজর জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণা সারা জাতিকে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উজ্জীবিত করেছে। এই ঘোষণায় দেশের তরুণ,যুবকসহ নানা স্তরের মানুষ মরণপণ যুদ্ধে শামিল হয়।

অন্যদিকে লন্ডন থেকে যুক্তরাজ্য বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক এক বিবৃতিতে বলেন,”জাতির ক্রান্তিকালে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্ব ছিল অবিস্মরণীয়। তার অবদানের কথা আমি গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি”। মহান রাব্বুল আলামিন ওনাকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন,আমিন ।

মরহুম সাবেক রাস্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি। দলের দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স জানান, কর্মসূচির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে— ২৯ মে জিয়াউর রহমানের কর্মময় জীবনের ওপর ভার্চুয়াল আলোচনা সভা। ৩০ মে ও ৩১ মে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পতাকা উত্তোলন ও কালো ব্যাচ ধারণ এবং ঢাকা মহানগরীর ৪০টি স্থানে দরিদ্র মানুষদের খাবার দেওয়া হবে। এছাড়া,  জিয়ার জীবনভিত্তিক আলোকচিত্র প্রদর্শনী হবে। ১ থেকে ৮ জুন পর্যন্ত দলের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে আলোচনা সভা হবে। ৯ জুন জিয়ার ওপরে প্রকাশিত বইয়ের প্রদর্শনী। ১ জুন থেকে ১২ জুন পর্যন্ত সারা দেশে সংগঠনের পক্ষ থেকে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান সংবাদ মাধ্যমকে জানান, জিয়াউর রহমানের ৪০ তম শাহাদাতবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা জানাতে রবিবার সকাল সাড়ে ৯টায় তার মাজারে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা পুস্পস্তবক অর্পণ করবেন।

জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীর দিনে দরিদ্র মানুষদের খাবার বিতরণ করবে বিএনপি। ইতোমধ্যে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে গতকাল শনিবার থেকে খাদ্য বিতরণ শুরু হয়েছে। এছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে রবিবার সকাল থেকে খাদ্য বিতরণ শুরু হবে। এদিন বিকালে ভাটারায় খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি উদ্বোধন করবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পাশাপাশি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, উপদেষ্টা জয়নাল আবদীন ফারুকও খাদ্য বিতরণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন। পরদিন সোমবার (৩১ মে) যথারীতি মির্জা ফখরুল ধানমন্ডি এলাকায় মহানগর দক্ষিণ ব্যানারে খাদ্য বিতরণ করবেন। একইদিন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও উপদেষ্টা আবদুস সালাম খাদ্য বিতরণ করবেন।

স্বাভাবিক সময়ে জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকীর দিনে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া খাদ্য বিতরণ করলেও গত কয়েক বছরে তা পাল্টেছে। এবার তিনি শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে রয়েছেন। আজ রবিবার ৩০ মে হাসপাতালে তার ৩৩তম দিন পার হচ্ছে। তার চিকিৎসক টিমের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য জানান, তার শারীরিক অবস্থা ধীরে ধীরে উন্নতি করছে। শুক্রবার রাত থেকে জ্বর আসলেও শনিবার ২৯ মে তা কিছুটা কমে এসেছে।

সাবেক রাস্ট্রপতি ও সেনা প্রধান এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার মরহুম জিয়াউর রহমানের সংক্ষিপ্ত জীবনী :

মরহুম জিয়াউর রহমান ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বগুড়ার গাবতলীর বাগবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইস্ট বাংলা রেজিমেন্ট-ইপিআরের বাঙালি পল্টনের মেজর ছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি তৎকালীন বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত হন। এরপর তিনি সেনাবাহিনীর প্রধান হন। মোশতাক সরকারের ৮১ দিনের শাসনের পর ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর তিনি বাংলাদেশের প্রধান সেনা প্রশাসক ও রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি প্রথমে জাতীয় গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) এবং ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। তার দল বিএনপি গত এক যুগ ধরে ক্ষমতার বাইরে থেকে এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে।

সাবেক মরহুম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের তিনবারের নির্বাচিত

সাবেক প্রধানমন্ত্রী। জিয়াউর রহমানের দুই ছেলের একজন তারেক রহমান,বর্তমানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আরেক সন্তান আরাফাত রহমান কোকো যিনি ২০১৫ সালে মালয়েশিয়াতে মারা যান। মরহুম জিয়াউর রহমানের ছোট ছেলে মরহুম কোকোর পরিবার বড় ছেলে তারেক রহমানের পরিবারের মতো লন্ডনেই বসবাস করছেন।

কবির আহমেদ /ইবি টাইমস

EuroBanglaTimes

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »