এই গণনার মধ্যে অস্ট্রিয়ায় রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থী এবং ভিসা নিয়ে বসবাসকারীরা নেই
ইউরোপ ডেস্কঃ অস্ট্রিয়ার সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছেন যে,অস্ট্রিয়ান আদম শুমারী প্রতিষ্ঠান “পপুলেশন মাইগ্রেশন স্ট্যাটাস্টিক অস্ট্রিয়া” এর গণনা অনুযায়ী বর্তমানে অস্ট্রিয়ার জনসংখ্যা ৮৯ লাখ ৩২ হাজার ৬৬৪ জন।
সংস্থাটির রিপোর্টে বলা হয়েছে অস্ট্রিয়ার জনসংখ্যা কেবল অভিবাসন জনগোষ্ঠীর মাধ্যমেই মূলত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অস্ট্রিয়া মধ্য ইউরোপের যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রজাতান্ত্রিক একটি ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) সদস্য ভুক্ত দেশ। অস্ট্রিয়া নয়টি রাজ্য বা প্রদেশ নিয়ে গঠিত।
অস্ট্রিয়ার রাস্ট্রীয় ভাষা জার্মান। স্থলবেষ্টিত এই দেশের উত্তরে জার্মানি ও চেক প্রজাতন্ত্র, পূর্বে স্লোভাকিয়া ও হাঙ্গেরি, দক্ষিণে স্লোভেনিয়া ও ইতালি এবং পশ্চিমে সুইজারল্যান্ড ও লিকটেন্ষ্টাইন। অস্ট্রিয়া মূলত আল্পস পর্বতমালার উপরে অবস্থিত। দেশটির তিন-চতুর্থাংশ এলাকাই পর্বতময়। অস্ট্রিয়া পূর্ব ও পশ্চিম ইউরোপের মাঝখানে অবস্থিত বলে এর রাজনৈতিক ও ভৌগলিক গুরুত্ব অপরিসীম।
অস্ট্রিয়ায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯২০ সালে তার রাজতন্ত্র বিলুপ্ত করে। অস্ট্রিয়ার রাজপুত্র বর্তমান বসনিয়ার সারায়েভোতে খুন হলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয়। তারপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অস্ট্রিয়া জার্মানির পক্ষ নিলে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন মিত্র বাহিনীর কাছে পরাজিত হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মিত্র বাহিনী যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন,ফ্রান্স ও রাশিয়ান সৈন্যরা অস্ট্রিয়াকে আরও দশ বৎসর দখল করে রেখেছিল। সেই দশ বৎসর যৌথ সামরিক কমান্ড কাউন্সিলের মাধ্যমে অস্ট্রিয়া পরিচালিত হয়েছিল।
১৯৯৬ সালে অস্ট্রিয়া ইইউর সদস্য হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বিশ্বে একটি নিরপেক্ষ দেশ হিসাবে বেশ প্রসিদ্ধ লাভ করেছিল। আর এই নিরপেক্ষতার ফলে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় বহু আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সদর দফতর প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। তাদের মধ্যে অন্যতম অস্ট্রিয়ায় জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি কমিশনের (IAEA) সদরদপ্তর অবস্থিত। তাছাড়াও বিশ্বের তেল উৎপাদনকারী দেশ সমূহের সংস্থা ওপেকের (OPEC) সদরদপ্তরও ভিয়েনায় অবস্থিত।
বাংলাদেশীরা ১৯৭০ এর দশক থেকে অস্ট্রিয়ায় আশা শুরু করেন। সবচেয়ে বেশী আসা শুরু হয় ৮০ দশকের শেষ এবং ৯০ এর দশকের শুরু থেকে। সে সময় অধিকাংশ বাংলাদেশী বংশোদ্ভূতরা স্টুডেন্ট ভিসা এবং ট্যুরিস্ট ভিসায় আসেন। ১৯৯৩ সালের জুলাই মাসের পর অস্ট্রিয়ান সরকার ভিসা স্ট্যাটাস পরিবর্তন বন্ধ করে দেন। অর্থাৎ যে ব্যক্তি অস্ট্রিয়ায় যে ভিসায় আসবেন তাকে সে ভিসা এক্সটেনশন করেই থাকতে হবে। ১৯৯৩ সালের সেই নিয়মের পূর্বে যারা এসেছিলেন তারা তাদের ভিসা স্ট্যাটাস পরিবর্তন করে সহজেই কাজের ভিসায় প্রবেশ করেছিলেন।
ইতিমধ্যে বাংলাদেশী বংশদ্ভুদ মাহমুদুর রহমান নয়ন মুল ধারার রাজনীতিতে প্রবেশ করে ভিয়েনা ডিসট্রিক্ট কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে অষ্ট্রিয়ায় ইতিহাস গড়েছেন । তিনি মুল ধারার রাজনীতিতে প্রবেশের পূর্বে ছাত্র রাজনীতি শুরু করেন । ঐ সময় Higher Technical College এ পরপর দুই বার ভিপি নির্বাচিত হন । এরপর সমগ্র অষ্ট্রিয়ার ১.১ মিলিয়ন এর সেন্ট্রাল স্টুডেন্ট ইউনিয়নের স্পিকার নির্বাচিত হন । মাহমুদুর রহমান নয়ন বলেন, আমাদের প্রজন্মের বাংলাদেশীরা মূল ধারার রাজনীতিতে আসা উচিৎ,তা হলে আমরা অষ্ট্রিয়ায় বাংলাদেশের সুনাম বয়ে আনতে পারবো ।
অস্ট্রিয়ার নিয়ম অনুযায়ী যারা বৈধ ভিসা নিয়ে ১০ বৎসর অস্ট্রিয়ায় কোন বড় ধরনের অপরাধ ছাড়া বসবাস করে আসছেন এবং নিয়মিত আয়কর পরিশোধ করেছেন তারা আবেদনের পর অস্ট্রিয়ার নাগরিকত্ব পেয়েছেন। অস্ট্রিয়ার নাগরিকত্ব পাওয়ার পর অনেক বাংলাদেশী পরিবার বৃটেনে চলে যান। অবশ্য বৃটেন ইইউ থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর এখন সে দেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে।
বর্তমানে অস্ট্রিয়ায় প্রায় ৫,০০০ হাজার বাংলাদেশী বসবাস করছেন। অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় ২০১৬ সাল থেকে বাংলাদেশের দূতাবাস ও স্থায়ী মিশন স্থাপিত হয়েছে।
আদম শুমারী গণনাকারী প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী অস্ট্রিয়াতে অভিবাসীরা নাগরিকত্ব গ্রহণ না করলে দেশটির জনসংখ্যাও কমে যেত। প্রতিষ্ঠানটি আরও জানায় গত এক বছরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৬,৪০০ অস্ট্রিয়ান মৃত্যুবরণ করেছেন। তবুও বৃহস্পতিবার ২৭ মের গণনার পরিসংখ্যান অনুযায়ী অস্ট্রিয়ার জনসংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। গত বছরের শেষে অস্ট্রিয়ার নাগরিক আরও ৩১,৬০০ জন বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। ফলে বর্তমানে অস্ট্রিয়ার জনসংখ্যা (নাগরিক) ৮৯,৩২,৬৬৪ জন।
২০১৯ সালের (০.৪৮ শতাংশ) জনসংখ্যার বৃদ্ধির তুলনায় ২০২০ সালে (০.৩৬ শতাংশ) অস্ট্রিয়ার নাগরিকত্ব কমে গিয়েছে। কারণ ২০২০ সালে মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেশী ছিল। গত বছর অস্ট্রিয়াতে জন্মের সংখ্যাও সাধারণভাবে হ্রাস পেয়েছে, কেবল Kärnten রাজ্যে আগের বছরের তুলনায় সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছিল। ২০২০ সালে অস্ট্রিয়ায় মোট ৮৩,৬০৩ জন শিশু জন্মগ্রহণ করে।জন্মের ভারসাম্যটি ১৯৭০ এর দশকের শেষের চেয়ে কম। কেননা সেই সময়টিতে দেশে করোনা মহামারী ছিল না। অস্ট্রিয়ায় করোনা মহামারীতে মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ১৯০০ এর কাছাকাছি জন্মগ্রহণকারী এবং ১৯৪৫ থেকে ১৯৫৫ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণকারী লোকজনের সংখ্যাই বেশী।
অস্ট্রিয়ার প্রায় তিন চতুর্থাংশ অভিবাসী ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলি থেকে আসা। অস্ট্রিয়ার নতুন ইমিগ্রেশন উদ্বৃত্তে প্রথম স্থানটিতে রয়েছে জার্মানির নাগরিক তারপরে রোমানিয়ান, ক্রোয়েশিয়ান, সিরিয়ান এবং হাঙ্গেরিয়ানরা। নতুন অভিবাসীদের সিংহভাগই রাজধানী ভিয়েনায় বসবাস করছেন।
কবির আহমেদ/ ইবি টাইমস