ইউরোপ ডেস্কঃ ইউরোপী ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ সপ্তাহান্তে ইইউর নাগরিকদের অবাধে সদস্য দেশ সমূহে ভ্রমণের জন্য ডিজিটাল করোনার সার্টিফিকেট বা গ্রীন পাসপোর্ট প্রবর্তন করতে সম্মত হয়েছেন।
ইইউর সদর দফতর বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলস থেকে ইউরো নিউজ এই তথ্য জানিয়েছেন। ব্রাসেলসে ইইউর সংসদে পর্তুগিজ রাষ্ট্রপতি ইইউর পক্ষে বলেন যে,ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ জুনের শেষের দিকে নিজেদের মধ্যে আগামী গ্রীষ্মের ভ্রমণ আরও সহজ করতে “ডিজিটাল সবুজ সনদ” বা গ্রীন পাসপোর্ট প্রবর্তন করতে ঐক্যমতে পৌঁছেছেন।
অস্ট্রিয়ার দৈনিক পত্রিকা “ডের স্ট্যান্ডার্ড” জানান, অস্ট্রিয়ার পর্যটন মন্ত্রী এলিজাবেথ কস্টিংগার(ÖVP) বলেছেন যে,জুনে অস্ট্রিয়া করোনার সার্টিফিকেট বা গ্রীন পাসপোর্ট তৈরীর কাজ শুরু করবে। তিনি আশা করছেন আগামী জুলাই মাসের ১ তারিখ থেকে সমগ্র ইউরোপীয় ইউনিয়নে করোনার এই গ্রীন পাস প্রচলন করতে যাচ্ছে। মন্ত্রী এলিজাবেথ কস্টিংগার আশা প্রকাশ করছেন যে, এই ডিজিটাল করোনার সনদ প্রচলন শুরু হলে অস্ট্রিয়া তার পর্যটন শিল্পে দ্রুত প্রত্যাবর্তন করতে পারবে।
জার্মানির সংবাদ সংস্থা ডয়েচে ভেলে(DW) জানিয়েছেন যে, করোনামূক্ত মানুষের ভ্রমণ তরান্বিত করতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন জুলাই মাস থেকে অভিন্ন সার্টিফিকেট চালু করতে চলেছে৷ ফলে গ্রীষ্মের ছুটির মৌসুমে ভ্রমণের সুযোগ পেতে পারে ইউরোপের ইউনিয়নের নাগরিকরা।ইইউর সদস্য দেশ সমূহে করোনার সংক্রমণের বিস্তার হ্রাস পাওয়ায় ভ্রমণের অবাধ সুযোগ আবার সম্ভব করার লক্ষ্যে প্রথম পদক্ষেপ নিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ।
করোনার ভ্যাকসিন প্রাপ্ত, করোনাজয়ী ও করোনা পরীক্ষায় নেতিবাচক ফলের প্রমাণ হিসেবে অভিন্ন সার্টিফিকেট তৈরির প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ও ২৭টি সদস্য দেশের সরকার৷ এমন সার্টিফিকেট সব সদস্য দেশেই স্বীকৃতি পাবে৷ জুন মাসের মধ্যেই সেই সার্টিফিকেট প্রস্তুত হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ সে ক্ষেত্রে ১লা জুলাই থেকে নতুন এই কাঠামো চালু হয়ে যাবে৷ তার আগে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের মাধ্যমে গোটা ব্যবস্থায় ভুলত্রুটি দূর করার চেষ্টা করা হবে৷ ফলে গ্রীষ্মের ছুটির মৌসুমে পর্যটনের সুযোগ অনেকটাই উজ্জ্বল হয়ে উঠবে৷ উল্লেখ্য, ইইউ দেশগুলির প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ করোনার ভ্যাকসিন বা টিকার অনন্ত প্রথম ডোজ পেয়ে যাওয়ায় ভ্রমণের চাহিদা আবার বাড়তে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন জার্মানির এই সংবাদ মাধ্যমটি।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই করোনার ডিজিটাল সবুজ সনদ বিনামূল্যেই পাবেন বসবাসকারী সকলেই যারা করোনার ভ্যাকসিন সম্পন্ন করেছেন। নিজেদের স্মার্টফোন অথবা কাগজে সেই কিউআর কোড দেখিয়ে যে কোনো মানুষ নিজেকে করোনা-মুক্ত হিসাবে প্রমাণ করতে পারবেন। এমনকি ইউরোপীয় ইউনিয়নে অনুমোদিত নয়, সার্টিফিকেটের জন্য এমন টিকাও গ্রহণযোগ্য হবে৷ উদাহরণস্বরূপ হাঙ্গেরিতে রাশিয়ান ভ্যাকসিন স্পুটনিক ও চীনের সিনোফার্মের ভ্যাকসিন ব্যাপকভাবে প্রদান করা হচ্ছে যদিও এই ভ্যাকসিন দুইটি এখনও ইইউর অনুমোদন পায় নি।
তবে করোনার এই ডিজিটাল সবুজ সার্টিফিকেট স্বীকৃতি পেলেও যে কোনো সদস্য দেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী নতুন করে করোনা পরীক্ষা অথবা কোয়ারেন্টাইনের মতো সাময়িক নিয়ম চালু করতে পারবে বলে ঘোষণায় বলা হয়েছে। বিশেষ করে করোনা ভাইরাসের নতুন কোনো মিউট্যান্ট ছড়িয়ে পড়ে গণস্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর চাপ সৃষ্টি করলে এমনটা হতে পারে৷ করোনা পরীক্ষার ব্যয় কমাতে ইউরোপীয় কমিশন জরুরি তহবিল থেকে দশ কোটি ইউরো অনুদান হিসেবে দেবে৷ প্রয়োজনে আরও অর্থ ধার্য করা হতে পারে৷ তবে বিনামূল্যে করোনা পরীক্ষার প্রস্তাব ঐকমত্যের অভাবে নাকচ হয়ে গেছে৷
করোনা এই সার্টিফিকেট প্রদর্শন করে কোথায় কী করা যাবে সে বিষয়টিও ইইউ সদস্য দেশগুলোর উপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অস্ট্রিয়া,ইতালি,গ্রীস ও ক্রোয়েশিয়া সহ বেশিরভাগ পর্যটন সমৃদ্ধ ইইউর সদস্য দেশই তাদের পর্যটন শিল্পকে চাঙ্গা করতে ভ্রমণের সুযোগ আবার দ্রুত স্বাভাবিক করতে আগ্রহী।
অস্ট্রিয়া,ইতালি ও গ্রীস সহ ইউরোপের দক্ষিণের পর্যটন সমৃদ্ধ অনেক দেশই এখন কোয়ারেন্টিনের মতো নিয়ম প্রত্যাহার করছে। ইইউর সদস্য দেশগুলো ছাড়া শেনজেন এলাকার বাকি দেশও এই কাঠামোয় অংশ নিচ্ছে। আপাতত এক বছরের জন্য এই সার্টিফিকেট স্বীকৃতি পাবে। সেটির মেয়াদ বাড়াতে হলে ইইউ পার্লামেন্টকে নতুন করে আইন পাস করতে হবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাসিন্দাদের জন্য ভ্রমণের এমন সুযোগের পাশাপাশি অন্য একটি কাঠামোর আওতায় অন্যান্য দেশের মানুষের ইইউতে প্রবেশের সুযোগ সহজ করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এমনকি ইইউর করোনা সার্টিফিকেটের মান বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যান্য দেশ বা অঞ্চল একই মানের ভিত্তিতে নিজস্ব সার্টিফিকেট চালু করে আন্তর্জাতিক স্তরে ভ্রমণের সুযোগ আরও সহজ করে তুলতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে ।
কবির আহমেদ /ইবি টাইমস