২০২১ সালের প্রথম এবং শেষ ‘ব্লাড মুন’ দেখা যাবে আগামী ২৬ মে
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, আগামী ২৬ মে চাঁদকে দেখা যাবে সম্পূর্ণ লাল অবস্থায়,চলতি বছরে সেটাই হবে সবচেয়ে বড় চাঁদ। এইদিন যে চাঁদ আকাশে দেখা যাবে, তাকে বলা হবে ‘সুপার মুন’ বা ‘ব্লাড মুন’।
পৃথিবীর ছায়াঘেরা অংশে যখন চাঁদ প্রবেশ করবে এবং চাঁদের গায়ে একটা লালচে আভা দেখা দেবে, তখন তাকে বলে হয় ‘ব্লাড মুন’। ২০২১ সালে এই প্রথমবার এবং এটাই শেষবার দেখা যাবে ‘ব্লাড মুন’। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা জানিয়েছে ২৬ মে মোট ৩ ঘণ্টা ৭ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হবে এই সম্পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ বা লুনার ইক্লিপস বা ২০২১ সালের ‘ব্লাড মুন’। এর মধ্যেই চলবে আংশিক এবং পূর্ণগ্রাস গ্রহণ। পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ দেখা যাবে মাত্র ১৫ মিনিট।
বাংলাদেশ সময় ২৬ মে বেলা ১ টা ৪৮ মিনিটে শুরু হবে এই গ্রহণ এবং বেলা ৪ টা ১১ মিনিটে একদম সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছবে চন্দ্রগ্রহণ। বেলা ৪ টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত এই সর্বোচ্চ পর্যায় স্থায়ী হবে। এরপর সন্ধে ৬ টা ৪৯ মিনিটে গ্রহণ শেষ হবে।
মূলত, গ্রহণ চলাকালীন সময়ে লালচে কমলা রঙে এবং বেশ বড় আকারে দেখা যায় এই চাঁদ। সেই কারণেই একে বলা হয় ‘ব্লাড মুন’। অন্যদিকে আর পাঁচটা সাধারণ দিনে চাঁদকে যে আকার-আয়তনে দেখা যায়, তার থেকে কিছুটা বড় আকারে দেখা গেলে তাকে বলা হয় সুপারমুন। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, আগামী ২৬ মে যে চাঁদ দেখা যাবে, চলতি বছরে সেটাই হবে সবচেয়ে বড় চাঁদ।
২৬ মে বুধবার পৃথিবীর কোন কোন অংশে দেখা যাবে এই ব্লাড মুন? নাসা জানিয়েছেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, প্রশান্ত মহাসাগর, ভারত মহাসাগর, অ্যাটলান্টিক এবং আন্টার্কটিকায় দেখা যাবে এই পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। অন্যদিকে নরওয়েরর ওয়েবসাইট টাইম অ্যান্ড ডেট- এর প্রতিবেদন অনুসারে হনলুলু, হাউস্টন, লস এঞ্জেলস, ম্যানিলা, মেলবোর্ন, স্যান ফ্র্যান্সিসকো, সিওর, সাংহাই এবং টোকিও থেকে দেখা যাবে এই ‘ব্লাড মুন’।
এছাড়াও আংশিক ভাবে ব্যাংকক, শিকাগো, ঢাকা, মন্ট্রিল, নিউ ইয়র্ক, টরন্টো এবং ইয়াংগং থেকেও দেখা যাবে এই চন্দ্রগ্রহণ। পরবর্তী ব্লাড মুন দেখা যাবে ২০২২ সালের ১৬ মে। ওই দিনও সম্পূর্ণ লুনার ইক্লিপস- ই দেখা যাবে।
আমরা সবাই জানি, চাঁদ যেমন পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছে তেমন পৃথিবীও সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। এইভাবে একটা সময় চাঁদ, সূর্য, পৃথিবী ঘুরতে ঘুরতে এক সরলরেখায় চলে আসে। যখন এই সরলরেখায় পৃথিবী, চাঁদ ও সূর্যের মধ্যে আসে, তখন পৃথিবীর ছায়ার জন্য চাঁদে সূর্যের আলো পৌঁছায় না, ফলে চাঁদকে তখন কিছু সময়ের জন্য দেখা যায় না। অর্থাৎ পৃথিবী পৃষ্ঠের কোন দর্শকের কাছে চাঁদ আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে কিছু সময়ের জন্য অদৃশ্য হয়ে যায়। তখন একে সংক্ষেপে চন্দ্রগ্রহণ বলে।
এই সময় পৃথিবী, সূর্যকে আংশিক ঢেকে নিলে পৃথিবীর জন্য চাঁদকে আংশিক দেখা যায় না একে আংশিক চন্দ্রগ্রহণ বলে। আর পৃথিবী সূর্যকে পুরোপুরি ঢেকে নিলে পৃথিবীর জন্য চাঁদকে পুরোপুরি দেখা যায় না একে পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ বলে। চাঁদের তুলনায় পৃথিবীর ব্যাস অনেক বেশি হওয়ায়, পৃথিবীর ঐ ব্যাসের পথ অতিক্রম করতে চাঁদের অনেকটা সময় লাগে। এই জন্য সূর্যগ্রহনের স্থায়ীত্ত্ব কয়েক মিনিট হলেও চন্দ্রগ্রহণের স্থায়ীত্ত্ব ২ থেকে ৩ ঘণ্টা পর্যন্ত হতে পারে।
পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণের সময় চাঁদ, পৃথিবীর মাঝখানে অবস্থান করে। তখন পৃথিবীর ছায়া চাঁদের উপর পড়ায় প্রচ্ছায়া (Umbra) অবস্থানে (যেখানে চাঁদ পুরোপুরি পৃথিবীর গাঢ় ছায়ায় ঢেকে যায়) চাঁদের প্রায় অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু তখনও সূর্যের আলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের জলীয়বাষ্প, ধূলিকণা ও গ্যাস দ্বারা প্রতিফলিত হয়ে চাঁদের উপর পড়ে। ফলে এটি পৃথিবী পৃষ্ঠে অবস্থিত কোনো ব্যক্তি চাঁদকে কিছুটা হলেও দেখতে পায়।
লাল বর্ণের আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য অন্যান্য বর্ণের আলোর তুলনায় বেশি হওয়ায় এটি সব থেকে কম বিচ্ছুরিত হয়। তাই ওই সময় সূর্যের আলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের দ্বারা প্রতিফলিত হয়ে লাল বর্ণের আলো চাঁদের উপর পড়ে তাই চাঁদকে তখন লাল দেখায়।
কবির আহমেদ/ ইবি টাইমস