চরফ্যাসন ( ভোলা) : ভোলার চরফ্যাসন উপজেলার ওসমানগঞ্জ ইউনিয়নে হাসানগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি দখল করে দোকান তৈরি করে বিক্রি করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে এ রকম চারটি ভিটা বিক্রি করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মফিজুল হক এভাবে জমি বিক্রি করছেন। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উপজেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
ওসমানগঞ্জ ইউনিয়নের বাজার ও সড়কের পাশে বিদ্যালয়টির অবস্থান। ১৯৭৫ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন স্থানীয় মফিজুল হক ও তাঁর ভাই আবুল কালাম ৫০ শতাংশ জমি বিদ্যালয়কে দান করেন। ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি সরকারি হয়।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উপজেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তৈয়বা বেগম বলেন, বিদ্যালয় থেকে নিয়মিত খাজনাপাতি পরিশোধ করা হয়। কিন্তু বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য মফিজুল হক জরিপকারীদের সঙ্গে সমঝোতা করে ওই জমিকে বাগান দেখিয়ে, দিয়ারা জরিপ এবং এসএ রেকর্ড অনুযায়ী প্রিন্ট খতিয়ানে নিজের নামে রেকর্ড বহাল রাখেন। এই রেকর্ড জালিয়াতির মাধ্যমেই জমি দখল ও বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু করেন।
প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, আগে টিনের ঘরের শ্রেণিকক্ষ বাদ দিয়ে যে জমি ছিল, সেখানে গর্ত ছিল। সেই জমি সরকারি বরাদ্দ এনে ভরাট করে মাঠ বানানো হয়। রাস্তার পাশের সেই মাঠের জমিটাই (প্রায় ২০ শতাংশ) মফিজুল হক দখল করে দোকানের জন্য ভিটা তৈরি করেন। তখন বিষয়টি লিখিতভাবে ইউএনওকে জানানো হয়। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ ছাড়া মফিজুল হকের দুই ভাইবোন বিদ্যালয়ের জমিতে ঘর তুলেছেন।
এ বিষয়ে সরেজমিন তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) তৃষিত কুমার চৌধুরী এবং উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, চরফ্যাসন কে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এ সম্পর্কে মফিজুল হক বলেন, ওই বিদ্যালয়ের জমিদাতা তিনি ও তাঁর ভাই। তাঁরা ৫০ শতাংশ জমি বিদ্যালয়ে দান করেছেন। বিদ্যালয়ের জমিতে ভবন নির্মাণকাজ চলমান। আর রাস্তাসংলগ্ন জমিতে দোকান নির্মাণ করছেন।
ইউএনও রুহুল আমিন বলেন, ‘প্রধান শিক্ষকের লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর জমি দখল কার্যক্রম বন্ধ রেখে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। তারপর কী হয়েছে, খোঁজ নিতে হবে।’
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তৃষিত কুমার চৌধুরী জানান, এ বিষয়ে সরেজমিন তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) দায়িত্ব দেওয়া হয়।
উপজেলা ভূমি কার্যালয় সূত্র জানায়, ইউএনওর নির্দেশে সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ে গত বছরের ২৮ অক্টোবর ওই জমির মালিকানা নিয়ে শুনানি হয়। এ সময় মফিজুল হক জমি পরিমাপ করে বিদ্যালয়কে পাওনা বুঝিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু ওই আশ্বাস পূরণ না করে তিনি জমি দখল ও বিক্রির প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছেন।
জামাল মোল্লা/ইবি টাইমস