ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে করোনা পরিস্থিতির অবনতি আব্যাহত

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ডাকা ভার্চুয়াল বৈঠকে যোগ দিয়ে অপমানের অভিযোগ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ বাংলাদেশের প্রতিবেশী পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে আজ নতুন করে করোনায় আক্রান্ত ১৯ হাজার এবং মৃত্যু ১৬২ জনের। বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় পত্রিকা আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছেন যে, বাংলাভাষী এই রাজ্যে করোনার দৈনিক মৃত্যু বেড়েই চলেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এই রাজ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ১৬২ জন এবং নতুন করে করোনায় সংক্রামিত শনাক্ত হয়েছেন ১৯,০৯১ জন।

পত্রিকাটি জানায়,প্রতিদিনই রাজ্যে বাড়ছে করোনায় মৃতের সংখ্যা। বুধবার করোনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন ১৫৭ জন। যা এই রাজ্যের গোটা কোভিড পর্বে ছিল একদিনের সর্বোচ্চ মৃত্যুবরণ। তার ঠিক ২৪ ঘণ্টায় মধ্যে করোনায় দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে আজ দাঁড়াল ১৬২ জনে। পাশাপাশি দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যাও বৃহস্পতিবারও ১৯ হাজারের উপরে রইল।

গত ২৪ ঘণ্টায় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলা উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় ৩৭ জন এবং কলকাতায় ৩৬ জন। অন্যান্য জেলার মধ্যে হাওড়া (১২), দক্ষিণ ২৪ পরগনা (১২) এবং পশ্চিম বর্ধমান (১০)-এ গত ২৪ ঘণ্টায় ১০ জনের বেশি প্রাণ হারিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্য দফতরের তথ্যমতে এই রাজ্যে এই পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন মোট ১৩ হাজার ৮৯৫ জন।

এই রাজ্যে আজ করোনার পরীক্ষা করা হয়েছিল ৭০ হাজার ৬৩৮ জনের এবং এর মধ্যে পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন ১৯,০৯১ জন।ফলে দৈনিক সংক্রমণের হার বুধবারের থেকে কিছুটা কমে হয়েছে ২৬.৯১ শতাংশ। আবার মোট সংক্রমণের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০.৩৩ শতাংশ। যা এখনও পর্যন্ত সর্বাধিক। গত ২৪ ঘণ্টায় উত্তর ২৪ পরগনা (৪,১১৮)), কলকাতা (৩,৪৫১), দক্ষিণ ২৪ পরগনা (১,২৮৭), হাওড়া (১,২৭৭), হুগলি (১,১৫৪) এবং নদিয়ায় (১,০৫২) দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজারের বেশি। এর ফলে রাজ্যে মোট আক্রান্তের সংখ্যা এখন ১২ লক্ষ ৯ হাজার ৯৫৮ জনে দাঁড়িয়েছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১৮ হাজার ৯১০ জন। এর ফলে রাজ্যে করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যা এখন ১০ লক্ষ ৬৪ হাজার ৫৩৩ জন। রাজ্যে এই মুহূর্তে সক্রিয় করোনা রোগী রয়েছেন ১ লক্ষ ৩১ হাজার ৫১০ জন। বুধবারের তুলনায় গত ২৪ ঘণ্টায় সক্রিয় করোনা রোগী বেড়েছে মাত্র ১৯ জন। রাজ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় টিকাকরণ হয়েছে ৬৩ হাজার ১১২ জনের। এর ফলে রাজ্যে মোট টিকাকরণ হল ১ কোটি ২৭ লক্ষ ৫৩ হাজার ৯৪৮ জনের। আগামী দিনে দৈনিক টিকাকরণের সংখ্যা আরও গতি পাবে বলেই মনে করছে আনন্দবাজার পত্রিকা।

 

আজ ভারতের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ ১০টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে এক ভার্চুয়াল বৈঠক ডাকা হয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে ৷ সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তবে সেই বৈঠকে উপস্থিত হয়ে তিনি অপমানিত বোধ করছেন বলে অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷

বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর ওই বৈঠক শেষ হওয়ার পরই নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে এই অভিযোগ করেন তিনি ৷ তাঁর দাবি, ১০ টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের ডাকা হয়েছি ৷ কিন্তু কোনও মুখ্যমন্ত্রীকেও একটিও কথা বলতে দেওয়া হয়নি ৷ পুতুলের মতো বসিয়ে রাখা হয়েছিল ৷ শুধু জেলাস্তরের আধিকারিকদের কথা শুনে আর প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের মাধ্যমে ওই বৈঠক শেষ করা হয়েছে ৷

মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গের করোনা পরিস্থিতি ঠিক কেমন ৷ কেন্দ্রের কাছ থেকে কী কী সাহায্য প্রয়োজন ৷ সমস্ত তথ্য তৈরি করে রাখা হয়েছিল ৷ কিন্তু তাঁকে একবারের জন্য কথা বলতে দেওয়া হয়নি ৷ সেই কারণেই তিনি অপমানিত বোধ করছেন ৷ তাঁর বক্তব্য, এতে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আঘাত করা হচ্ছে ৷ তাঁর অভিযোগ, একদিকে মানুষ মরে যাচ্ছে৷ অন্যদিকে বিল্ডিং বানানো হচ্ছে, মোদি ভাষণে বলছেন যে করোনা কমে গিয়েছে ৷ আসলে প্রধানমন্ত্রী মুখ লুকিয়ে পালিয়ে গেলেন ৷

মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় সরকারের অবহেলার জন্যই করোনা বেড়েছে ৷ বাংলায় আট দফায় নির্বাচনের জন্য করোনা বেড়েছে ৷ বাংলার গ্রামে গ্রামে করোনা বাড়িয়ে দিয়ে চলে গিয়েছে ৷ সারা দেশকে বিষাক্ত করে দিয়েছে,গঙ্গায় দেহ ভাসছে ৷

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, করোনার ভ্যাকসিনের দু’টি ডোজ়ের মধ্যে সময়ের ব্যবধান নিয়ে একটা ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে ৷ সেটা নিয়ে তিনি প্রশ্ন করতে চেয়েছিলেন কিন্তু সুযোগ পাননি ৷

কবির আহমেদ/ ইবি টাইমস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »