সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে গ্রেফতারের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ
বাংলাদেশ ডেস্কঃ বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শারমিন আক্তার জাহানের স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে জানানো হয়, সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার বাদী স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব মো. শিব্বির আহমেদ ওসমানীর দপ্তর বদল করা হয়েছে। তাকে সচিবালয়ে রেখেই শুধু ডেস্ক পরিবর্তন করা হয়েছে। শিব্বির আহমেদকে জনস্বাস্থ্য-১ অধিশাখা থেকে জনস্বাস্থ্য-২ অধিশাখায় বদলি করা হয়।
তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শারমিন আক্তার জাহানের সোমবার ১৭ মে স্বাক্ষরিত এই অফিস আদেশটি মঙ্গলবার ১৮ মে প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। একই আদেশে আরও ৫ উপসচিবকেও বদলি করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সোমবার (১৭ মে) দুপুরের পর স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের একান্ত সচিব মো. সাইফুল ইসলাম ভূঞার কক্ষে রোজিনাকে প্রায় সাড়ে ৫ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের ওই উপসচিব তার বিরুদ্ধে মামলা করেন। সেখানে ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৩৭৯ ও ৪১১ ধারায় চুরি এবং ১৯২৩ সালের ‘অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের’ ৩ ও ৫ ধারায় গুপ্তচরবৃত্তি ও রাষ্ট্রীয় গোপন নথি নিজের দখলে রাখার অভিযোগ আনা হয় এই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে।
এজাহারে বলা হয়েছে,রোজিনা যেসব নথির ‘ছবি তুলেছেন’, তার মধ্যে ‘টিকা আমদানি’ সংক্রান্ত কাগজপত্রও ছিল। পরে মঙ্গলবার সকালে রোজিনা ইসলামকে আদালতে হাজির করে তাকে পাঁচদিনের রিমান্ড নেওয়ার আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন একইসঙ্গে আগামী বৃহস্পতিবার তার জামিন শুনানির দিন ঠিক করে দেন। এরপর তাকে পুলিশের প্রিজন ভ্যানে করে কাশিমপুর কারাগারে নেওয়া হয়।
এদিকে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা ও গ্রেফতারের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। বিশ্ব সংস্থাটি বলেছে, বিষয়টির দিকে তারা নজর রাখছে।
মঙ্গলবার ১৮ মে জাতিসংঘের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের সাংবাদিককে হয়রানি ও গ্রেফতার সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক।
মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেন, বাংলাদেশে সাংবাদিককে গ্রেফতার করার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা নজর রাখছি। বিষয়টি স্পষ্টতই উদ্বেগজনক।
এ বিষয়ে আমাদের অবস্থান খুবই স্পষ্ট উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাংবাদিকদের কোনোভাবেই হয়রানি বা শারীরিক নির্যাতন করা যাবে না। মুক্ত ও স্বাধীনভাবে কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। সেটা বাংলাদেশ কিংবা পৃথিবীর যেকোনো স্থানে হোক।
এখানে উল্লেখ্য যে, গত সোমবার ১৭ মে পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। সেখানে ৫ ঘণ্টার বেশি সময় তাকে আটকে রেখে হেনস্তা করা হয়। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাত ৯টার দিকে তাকে সচিবালয় থেকে শাহবাগ থানায় আনা হয়। রাতেই রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করা হয়।
এরপর মঙ্গলবার ১৮ মে বেলা ১১টার একটু পরে সিএমএম আদালতে তোলা হয় রোজিনাকে। এর আগে তাকে শাহবাগ থানা থেকে আদালতে নেওয়া হয়। সকাল ৮টার দিকে রোজিনা আদালতে পৌঁছান। সে সময় তাকে আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। পরে মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) আরিফুর রহমান সরদার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে রোজিনা ইসলামের ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। বিজ্ঞ আদালত তার রিমান্ড নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আগামী ২০ মে তার জামিন শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। আদালতের আদেশের পর রোজিনা ইসলামকে গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়েছে।
কবির আহমেদ /ইবি টাইমস