১৮০৯ সালে ফ্রান্সের সম্রাট নেপোলিয়ানের সৈন্যদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে এই অস্ট্রিয়ান সৈন্যরা নিহত হয়েছিলেন
ইউরোপ ডেস্কঃ অস্ট্রিয়ার জনপ্রিয় অনলাইন পত্রিকা Heute ভিয়েনার প্রত্নতাত্ত্বিকবিদদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছেন যে, ভিয়েনার Seestadt এ নির্মাণকাজের জন্য মাটি খননের সময় এই সমস্ত হাড় এবং কঙ্কাল গুলি বেড়িয়ে আসে।
উদ্ধারের পর ভিয়েনার ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন যে,এইগুলি পুরুষ মানুষের কঙ্কাল যাদের বয়স ২০ বছর। তাদের দেহের ধ্বংসাবশেষ সাথে তাদের সৈনিক মনোগ্রামও পাওয়া গেছে। তাদের মাটি চাপা দেওয়ার পূর্বে সম্ভবত তাদের সমস্ত মূল্যবান জিনিসপত্র বা সরঞ্জাম ফ্রান্সের নেপোলিয়ানের সৈন্যরা নিয়ে গিয়েছিল। তারপরও একজন সৈনিকের কঙ্কালের পাশে আংটি ও রঙিন কাঁচের মুক্তার নেকলেস ছিল, সম্ভবত স্যুভেনির বা সৌভাগ্য কামনা হিসাবে সৈনিকটি নিজের কাছে রেখেছিল।
তাছাড়াও প্রত্নতাত্ত্বিকেরা আরও জানিয়েছেন,এই গণকবরে থেকে হাড়, গহনা এবং ইউনিফর্মের অবশেষ আবিষ্কার করা হয়েছে।ভিয়েনার প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রধান করিন ফিশার অ্যাসেরার সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
ইতিপূর্বে ২০১৮ সালেও অস্ট্রিয়ায় মাটি খননের সময় নেপোলিয়ান বাহিনী কর্তৃক অস্ট্রিয়ান সৈন্যদের হত্যার পর গণকবরের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। সে সময় অস্ট্রিয়ার জাতীয় সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছিলেন যে, অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনার উত্তর-পূর্বের একটি কৃষিজমির নিচে পাওয়া গেলো নেপোলিয়ন যুগের বিপুল সংখ্যক মানুষের দেহাবশেষ। গবেষকরা বলছেন, দেহাবশেষগুলো ফ্রান্সের সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্টের সৈন্যবাহিনীর করা হত্যাযজ্ঞের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। প্রত্নতাত্ত্বিকরা সেবারই প্রথম যুদ্ধক্ষেত্রটিতে খনন কাজ চালিয়েছিলেন।
ধারণা করা হচ্ছে, অস্ট্রিয়ায় প্রায় ৫৫ হাজার সৈন্যের দেহাবশেষ রয়েছে যারা ১৮০৯ সালের ৫ থেকে ৬ জুনে সংঘটিত ওয়াগ্রামের লড়াইয়ে মৃত্যুবরণ করেন। নিহত সৈন্যদের অধিকাংশের ঠাঁই হয় গণকবরে। গবেষকরা বিশাল আকৃতির একাধিক গণকবর এবং সৈন্যদের রাত কাটানোর ক্যাম্পগুলোর অবস্থান চিহ্নিত করেছেন। আরও পাওয়া গেছে হাজার হাজার মাস্কেট বল, বুলেট, বোতাম ও বিভিন্ন ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ব্যবহৃত জিনিস পত্র। তখন মৃত সৈন্যদের হাড় পরীক্ষা করে গবেষকরা জানতে পারেন, যুদ্ধের সময় তারা প্রচণ্ড পুষ্টিহীনতায় ভুগছিলেন।
হত্যাযজ্ঞের নিদর্শন ১৭৯৯ থেকে ১৮১৫ সালের মধ্যে ইউরোপের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নেওয়ার লক্ষ্যে বেশ কিছু রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জড়িয়েছেন ফ্রান্সের সম্রাট নেপোলিয়ন। ১৮০৯ সালে শুরু হয় ‘ওয়ার অব ফিফথ কোয়ালিশন। এ যুদ্ধে নেপোলিয়নের প্রতিপক্ষ ছিল অস্ট্রিয়ার সম্রাট ও গ্রেট ব্রিটেন।
১৮০৯ সালে ভিয়েনার প্রান্তে অ্যাসপার্ন-এসলিং (Aspern) -এর লড়াইয়ে নেপোলিয়নের সৈন্যবাহিনী প্রথমবারের মতো তাদের সবচেয়ে বড় পরাজয়টি বরণ করে। ছয় সপ্তাহ পর প্রবল ঝড়- দুর্যোগের এক রাতে নেপোলিয়নের সৈন্যরা অস্ট্রিয়ান সৈন্যদের ক্যাম্পে অতর্কিত হামলা চালায়। সম্প্রতি ওই এলাকার ওপর দিয়ে মহাসড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তাই সেখানকার সব মূল্যবান প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
ঐ অঞ্চলে প্রত্নতাত্ত্বিক-খননের দায়িত্বে থাকা ভিয়েনাভিত্তিক কালচারাল-রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান নোভেটাসের প্রধান নির্বাহী আলেকজান্ডার স্তাগ্ল সংবাদমাধ্যমকে জানান, আমরা আগে থেকেই জানতাম লড়াইটি এখানেই হয়েছিল। কিন্তু এতোদিনেও তা নিয়ে কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান চালানো হয়নি। আমরা এখন যুদ্ধক্ষেত্রের সবচেয়ে ঘটনাবহুল স্থানে খনন চালাচ্ছি এবং ইতোমধ্যেই অসংখ্য নিদর্শন খুঁজে পেয়েছি। ২০১৭ সালের মার্চে প্রত্নতাত্ত্বিকরা এ খনন কাজ শুরু করেছিলেন।
আজ অস্ট্রিয়ায় নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ৬৭৩ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৪ জন।
রাজধানী ভিয়েনায় আজ নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ১৮৮ জন। অন্যান্য রাজ্যের মধ্যে NÖ রাজ্যে ১৩২ জন,Steiermark রাজ্যে ১১৮ জন,OÖ রাজ্যে ৯৪ জন,Vorarlberg রাজ্যে ৬৫ জন, Tirol রাজ্যে ৫৮ জন,Kärnten রাজ্যে ৪৩ জন, Salzburg রাজ্যে ৩৪ জন এবং Burgenland রাজ্যে ৮ জন নতুন করে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন।
অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী আজ সমগ্র অস্ট্রিয়ায় করোনার প্রতিষেধক ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়েছে ৫৮ হাজার ৪৬৯ ডোজ। অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনার মোট ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়েছে ৪০ লাখ ২৭ হাজার ৭৩৪ ডোজ।
অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬,৩৭,০৯৭ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন মোট ১০,৪৭৪ জন। করোনার থেকে এই পর্যন্ত আরোগ্য লাভ করেছেন মোট ৬,১৬,১৪৮ জন। বর্তমানে করোনার সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ১০,৪৭৫ জন। এর মধ্যে ক্রিটিক্যাল অবস্থায় আইসিইউতে আছেন ২৯৩ জন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৮৯৭ জন। বাকীরা নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন।
কবির আহমেদ/ ইবি টাইমস