আজ ফিলিস্তিনের মহাবিপর্যয়ের “আন-নাকবা” দিবস

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ আন-নাকবা’ অর্থ মহাদুর্যোগ, মহাবিপর্যয়। ফিলিস্তিনি জনগণ ইসরাইল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার এই দিনটিকে জাতীয় বিপর্যয় হিসাবে আখ্যায়িত করে নাম দিয়েছে ‘আন-নাকবা’ দিবস।

আন নাকবার এই দিনে ১৯৪৮ সালের ১৫ মে সংঘটিত ফিলিস্তিন যুদ্ধের সময় ফিলিস্তিনি (Palestinian) আরবদের দেশত্যাগকে বোঝানো হয়। এই সময় ৭,০০,০০০ এর বেশি ফিলিস্তিনি গৃহহীন হয়েছিল। এছাড়াও নাকবা দ্বারা মূল যুদ্ধ এবং ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর থেকে ১৯৪৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ফিলিস্তিনিদের উপর যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ইহুদীদের ফিলিস্তিনিদের উপর কর্তৃক প্রভাব ফেলার ঘটনাবলীকেও বোঝানো হয়।

ইতিহাস থেকে জানা যায় এই নাকবা দিবসের উৎপত্তি ১৯৪৮ সালের ১৫ই মে শুরু হওয়া আরব-ইসরাইল যুদ্ধ থেকে। তার একদিন আগে, ১৪ই মে ইসরাইল নিজেদের স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা করে। সে সময় ওই এলাকা ছিল গ্রেট ব্রিটেনের নিয়ন্ত্রণে। ম্যান্ডেট প্যালেস্টাইন নামে তখন সেখানে এক বিশেষ ব্যবস্থা চালু ছিলো। সেটি যখন প্রায় শেষ হওয়ার পথে তখনই ইসরাইলকে ঘোষণা করা হয় স্বাধীন একটি রাষ্ট্র হিসেবে। যে এলাকায় ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করা হয়,সেখানে ইসরাইলি বাহিনী বেশিরভাগ স্থায়ী স্থানীয় আরব বাসিন্দাদেরকে  বহিষ্কার করে অথবা তারা সেখান থেকে পালিয়ে যায়।

১৯৪৮-১৯৪৯ এই দু’বছরের আরব- ইসরাইলের যুদ্ধের সময় সাড়ে সাত লাখ ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তু হয়ে পড়ে।পরে ১৯৬৭ সালের জুন মাসে আরব ও ইসরাইলের মধ্যে আবারও যুদ্ধ হয় এবং সে সময় জর্ডান নদীর পশ্চিম তীর ও গাজা ভূখণ্ড থেকে আরো হাজার হাজার ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়ে। বর্তমানে প্রায় ৫০ লাখ ফিলিস্তিনি জাতিসংঘে শরণার্থী হিসেবে নিবন্ধিত। তাদের বেশিরভাগই বাস করে জর্ডান, গাজা ভূখণ্ড পশ্চিম তীর, সিরিয়া, লেবানন এবং পূর্ব জেরুসালেমে। তাদের এক তৃতীয়াংশ বসবাস করে শরণার্থী শিবির গুলোতে।

এরপর থেকেই প্রতি বৎসর এই নাকবা দিবসকে কেন্দ্র করে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করে এবং সংগঠিত হয় অনেক হতাহতের ঘটনা।

প্রতিবছরই ফিলিস্তিনিরা এই নাকবা দিবসে প্রতিবাদ বিক্ষোভের আয়োজন করে। দিবসটি উপলক্ষে তারা জড়ো হয় ইসরাইলের সীমান্তের কাছে এবং দিনটিকে ঘিরে ইসরাইলের সাথে ফিলিস্তিনিদের তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। নাকবা দিবসকে কেন্দ্র করে অতীতেও দুই বার বড়ো ধরনের সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।

ফিলিস্তিনিদের প্রধান দাবি- তাদের জমিতে ফিরে যাওয়ার অধিকার। এই দাবির ভিত্তি হচ্ছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ১৯৪৮ সালে গৃহীত এক প্রস্তাব। সেখানে বলা হয়েছে, “যেসব শরণার্থী তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে চাইবে এবং প্রতিবেশীদের সাথে শান্তিতে বসবাস করবে তাদেরকে সেখানে যাওয়ার অনুমতি দিতে হবে।”

ইসরাইলের বক্তব্য -৫০ লাখ শরণার্থীকে ফিরিয়ে নেওয়া অসম্ভব। কারণ সেরকম কিছু হলে তারাই ৮৫ লাখ জনসংখ্যার দেশটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে পড়বে এবং ইহুদি রাষ্ট্র হিসেবে ইসরাইলের সমাপ্তি ঘটবে।

ইসরাইলি ও ফিলিস্তিনি নেতারা উভয়পক্ষের মধ্যে সমঝোতার পরেই শরণার্থী সঙ্কট সমাধানের ব্যাপারে একমত হয়েছেন- কিন্তু সেই শান্তি আলোচনাই এখন অসম্ভব এক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই বৎসরের নাকবা দিবস অন্য বারের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন বলায় যায়। যখন গাজায় ইসরাইল হামলা চালাচ্ছে সে মুহুর্তে ইসরাইলের অভ্যন্তরে অনেক শহর সহ জর্ডান ও লেবানন সীমান্ত থেকেও আল আকসার পক্ষে বিক্ষোভ ও ইসরাইলের তেল আবিবকে লক্ষ্য করে রকেট ছোঁড়া হচ্ছে।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছেন যে,ইসরাইলকে লক্ষ্য করে এই পর্যন্ত প্রায় ১,৮০০ রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছে। অবশ্য ইসরাইল দাবী করছে তার এর সিংহভাগই তারা তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে আকাশের ধ্বংস করে দিয়েছে।

ইসরাইলের সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছেন এই পর্যন্ত ৯ জন ইসরাইলি নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে গাজা থেকে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছেন যে গত ৩ দিনে ইসরাইলের আক্রমণে এই পর্যন্ত ১১৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন তারমধ্যে ৩১ জনই শিশু।

কবির আহমেদ /ইবি টাইমস

EuroBanglaTimes

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »