২৭ তম রোজার রাতে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় বহু ফিলিস্তিনি হতাহত
ইউরোপ ডেস্কঃ আজ বুধবার ১২ মে দুপুরের পর ভিয়েনা শহরের প্রাণকেন্দ্রে শত শত ফিলিস্তিনি ও অন্যান্য দেশের মুসলমানরা ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলের বর্বর হামলার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন। তারা ফিলিস্তিন ফিলিস্তিন বলে চিৎকার করে ফিলিস্তিনিদের প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করেন। কিছুটা খারাপ (হালকা বৃষ্টি) আবহাওয়া উপেক্ষা করেই শত শত মানুষ এই বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেন।
ভিয়েনা পুলিশ প্রশাসনের মুখপাত্র ক্রিস্টোফার ভার্নজাক সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছেন যে,শান্তিপূর্ণ এই বিক্ষোভে ব্যাপক পুলিশের পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছিল যাতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।তিনি আরও জানান,ভিয়েনার পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সাথে ভিয়েনার মারিয়াহিল্ফার স্ট্রাসে থেকে মানবাধিকার স্কোয়ার পর্যন্ত রোড মার্চে অংশগ্রহণ করেন এবং এখানে চূড়ান্ত সমাবেশ পর্যন্ত নিরাপত্তার জন্য সতর্ক অবস্থায় ছিলেন।
অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখন্ড জেরুসালেমের মসজিদুল আকসায় রমজানের পবিত্র রমজানের ২৭ তম রাতের ইবাদতের জন্য শনিবার রাতে জড়ো হয়েছিলেন প্রায় ৯০ হাজার ফিলিস্তিনি মুসল্লি। কিন্তু ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনীর তাদের ওপর অতর্কিতে হামলা চালায়। সেদিনের রাতে ইসরাইলি চেকপোস্টের বাধা সত্ত্বেও ফিলিস্তিনি মুসূল্লীরা ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম এই স্থানে জড়ো হন।
এশা ও তারাবির নামাজের পর ইসরাইলি বাহিনী ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা শুরু করে। এই সময় অনেক মুসল্লিকে গ্রেফতার করা হয়। অপরদিকে হামলায় অন্তত ৯০ জন আহত হয়েছেন বলে জানায় স্থানীয় চিকিৎসা কর্মীরা। এছাড়াও জেরুসালেমের পুরনো দুর্গ শহরের দামিশক গেটের কাছে জড়ো হওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপরও রাবার জড়ানো ধাতব গুলি, টিয়ার গ্যাস ও স্মোক গ্রেনেড নিয়ে হামলা চালায় ইসরাইলি বাহিনী।
অল্প কিছু দূরেই শেখ জাররাহ মহল্লায় ইসরাইলি আদালতের ফিলিস্তিনি পরিবার উচ্ছেদের আদেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীদের তৈরি শিবিরে তাণ্ডব চালায় ইসরাইলি বাহিনী ও বসতি স্থাপনকারীরা। এর আগে শুক্রবার রাতে ইসরাইলি বাহিনী মসজিদুল আকসাসহ অধিকৃত পূর্ব জেরুসালেমের বিভিন্ন স্থানে ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা চালায়। হামলায় অন্তত দুই শ’ পাঁচ জন আহত হয়েছেন বলে ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সূত্রে জানা যায়। জেরুসালেমে সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হন ২০৫ জন।
গত ২৫ এপ্রিল জেরুসালেমের ইসরাইলি ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট শেখ জাররাহ মহল্লা থেকে ছয় ফিলিস্তিনি পরিবারকে উচ্ছেদ করে তাদের বাড়ি ইসরাইলি নাগরিকদের কাছে হস্তান্তরের আদেশ দেন। এতে করে ১০ শিশুসহ ৪০ ফিলিস্তিনি বাসিন্দা তাদের প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের বাস করা ঠিকানা থেকে উচ্ছেদের শঙ্কায় রয়েছেন। ইসরাইলি আদালতের ওই আদেশের পর থেকেই জেরুসালেমসহ পুরো ফিলিস্তিনে অস্থিরতা বিরাজ করছে। জেরুসালেমে ইসরাইলের হামলার প্রতিবাদে পশ্চিম তীর ও গাজায় বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। একইসাথে ইসরাইলে নাজারেথ ও জাফাসহ ফিলিস্তিনি অধ্যুষিত বিভিন্ন শহরে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে মসজিদুল আকসায় ইসরাইলের সাম্প্রতিক হামলার ঘটনায় সমালোচনা ও নিন্দা জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান। তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় এক সমাবেশে ভাষণে তিনি ইসরাইলকে ‘সন্ত্রাসী রাষ্ট্র’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, জেরুসালেমে হামলা সকল মুসলমানের ওপর হামলা এবং সকল মুসলমানের দায়িত্বই জেরুসালেমের সম্মান রক্ষা করা।
এছাড়াও সৌদি আরব, ইরান, কুয়েত, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিসর সহ আরও অনেক মুসলিম দেশ এবং সংগঠন জেরুসালেমে ইসরাইলের হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে।
কবির আহমেদ/ ইবি টাইমস