করোনার কারণে বন্ধ ভোলা-ঢাকা নৌযান চলাচল,কর্মহীন হাজারো নৌ-শ্রমিক

ভোলা জেলা প্রতিনিধিঃ করোনার প্রভাবে চলমান লকডাউনে স্থবির হয়ে পড়েছে  ভোলা-ঢাকা নৌযান চলাচল। বন্ধ রয়েছে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন। ফলে নৌযানের ওপর নির্ভরশীল শ্রমিক, ঘাট সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরাও পড়েছেন বিপাকে।এই দুর্দিনে মালিক পক্ষ কিংবা শ্রমিক সংগঠন কাউকেই পাশে পাচ্ছেনা তারা। প্রায় এক মাস ধরে লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় কর্মহীন হয়ে মানবেতর দিন কাটছে লঞ্চ এর সাথে জড়িত শ্রমিকরা। বেশির ভাগ শ্রমিকই পায়নি সরকারের সহায়তাও।লঞ্চ মালিকদের দাবি, দিনের পর দিন লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় আয় বন্ধ ও ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে শ্রমিকদের বেতন দিতে পারছেন না তারা। তবে জেলা প্রশাসক বলছেন ক্ষতিগ্রস্ত নৌ শ্রমিকসহ সকল শ্রমিকদের পৌছে দেয়া হবে প্রধানমন্ত্রীর নগদ অর্থ উপহার।

দ্বীপ জেলা ভোলার সাথে রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য রুটে যোগাযোগের অন্যতম সহজ মাধ্যম নৌ পথ।প্রতিদিনও নৌ পথে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার মানুষ লঞ্চে করে ভোলাতে যাতায়াত করে থাকে। আবার ভোলা থেকে হাজারো মানুষ লঞ্চে করে চলাচল করে বরিশাল কিংবা লক্ষীপুর হয়ে বিভিন্ন জেলায় যায়। আর ঈদ মৌসুমে তার দ্বীগুন মানুষ লঞ্চে করে ভাড়ি ফিরে থাকেন। এই জেলার একটি বড় অংশ লঞ্চকে কেন্দ্র করে জীবিকার ব্যবস্থা হতো লঞ্চ শ্রমিক, কুলি, ঘাট ব্যবসায়ী ও ঘাটের ইজারাদারদের। তবে করোনা পরিস্থিতিতে ভোলা-ঢাকা রুটের সকল লঞ্চ বন্ধ থাকায়  ঘাট গুলোতে আগের মতো কর্মচাঞ্চল্য নেই। বন্ধ রয়েছে সব ধরনের নৌযান চলাচল। লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় নৌ সংশ্লিষ্ট শ্রমিকরা পড়েছেন চরম বিপাকে। পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর দিন কাটছে তাদের। এই দুর্দিনে মালিক পক্ষ কিংবা শ্রমিক সংগঠন কাউকেই পাশে পাচ্ছেনা তারা। পায়নি সরকারের কোন সহায়তাও।

ভোলার মেসার্স ব্রাদার্স নেভিগেশন কম্পানীর লঞ্চ কর্ণফুলী-১১ এর স্টাফ আবু সাইদ বলেন, আমরা যার লঞ্চ স্টাফ বা লঞ্চের মালিক তারা দুইটা ঈদের আশায় থাকি। এসময় অনেক যাত্রী লঞ্চে করে যাতায়াত করে থাকেন। সিট ভাড়া দিয়ে বা কাজ করে যাত্রীদের কাছ থেকে টিপস পাই। আবার  মালিক  ঈদ উপলক্ষ্যে  কিছু টাকা বোনাস দিয়ে থাকে। তাই দিয়েই পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদ করি। কিন্তু গত বছর করোনার  কারনে লঞ্চ চলাচল বন্ধ ছিলো।এবছরও ঈদে লঞ্চ বন্ধ। তাহলে আমরা স্টাফ বা লঞ্চ শ্রমিকরা কিভাবে চলমু। যেই বেতন পাই তা দিয়ে সংসার চালানো খুবই কষ্ট সাধ্য হয়ে যাচ্ছে। লঞ্চ বন্ধ থাকায় মালিকরাও লসে আছে। তাহলে আমাদের বেতন দিবো কিভাবে আর বোনাস দিবো কিভাবে। সরকার যদি ঈদের কয়েক দিন আগে এই রুটের লঞ্চ গুলো চালু করে দেয় তাহলে যাত্রীদের উপকার হবে। আমাদের লঞ্চ মালিক স্টাফদেরও উপকার হবে।

এমভি ভোলা লঞ্চের স্টাফ আব্দুল মান্নান বলেন, করোনার কারনে আমাদের লঞ্চ চলাচল বন্ধ। লঞ্চের মালিক ঠিক মতো বেতন দিতে পারেনা। লঞ্চ চলাতে পারেনা। খাওয়া দাওয়ায় অসুবিধা। সামনে ঈদ আসতেছে। কোন কূল কিনারা পাচ্ছিনা। পরিবার পরিজন নিয়ে টিকে থাকা অনেক কষ্ট হচ্ছে। সরকারি কোন সহযোগিতা আমরা পাচ্ছিনা। শুনছি প্রধানমন্ত্রী ঈদ উপহার হিসাবে শ্রমিকদের ২৫০০ টাকা করে দিচ্ছে কিন্তু আমরা সেই টাকা পাই না। সরকার বলছে ত্রান সবার ঘরে পৌছে দিবে। কিন্তু কোন ত্রান পাইনা। চেয়ারম্যান মেম্বার কোথাও  ত্রান পৌছায় না। একই লঞ্চের কোয়ার্টার মাস্টার মো: নুর উদ্দিন বলেন, লঞ্চ চললে আমাদের সংসার চলে। আর লঞ্চ না চললে সংসার খুব অসুবিধা হয়। সামনে তো ঈদ এই সময়  পোলা মাইয়ারে কিছু কিনা দিমু তাও সম্ভব হচ্ছেনা।

ভোলার নিউ শপিং কর্ণার এর স্বত্তাধিকারী মো: জিতু বলেন, লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায়। আমাদের ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বড় সমস্য হচ্ছে। সীমিত পরিসরে দোকান পাঠ খুলে দেয়ায় দোকানে কাস্টমারের জামা কাপড় কিনার চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু রাজধানী থেকে মালামাল আনার ইচ্ছা থাকলেও আনতে পারছিনা। স্থল পথে খরচ বেশি লাগে মালামাল এনে পোষায় না। আমাদের জন্য লঞ্চ যোগে মালামাল আনা নেয়া করা সবচেয়ে সহজ। শুধু নৌ শ্রমিকরাই নন ঘাটে থাকা দোকান ও হোটেল ব্যবসায়ীদেরও একই অবস্থা। খেয়াঘাট এলাকার দোকানদার মাকসুদ জানায়, লঞ্চ চলাচলের উপর আমাদের ব্যবসা অনেকটা নির্ভরশীল। লঞ্চ চললে ব্যবসা ভালো। লঞ্চ না চললে লোকসান। করোনার কারণে লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় আমাদের দোকানের পন্য বেচাঁকেনা কমে গেছে। অনেক পন্যর মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। এখন সরকার থেকে যদি আমাদের প্রণোদনা দিতো ঈদের আগে অনেক উপকার হতো।

ভোলা ইলিশা ঘাটের ইজারাদার সরোয়ারদি মাষ্টার জানায়, লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় আমাদের ঘাট ইজারাদারে অনেক লোকসান হচ্ছে। ঈদ উপলক্ষ্যে অনেক যাত্রী আসতো লঞ্চ ঘাট করলে আমারা ঘাটের টোল আদায় করতে পারতাম। কিন্তু তাও পারছিনা। আমারা যারা ঘাটের ইজারাদার করোনার কারোনে আমাদের বড় লোকসান গুনতে হচ্ছে। লঞ্চ ঘাটে শ্রমিকরা মালামাল উঠিয়ে নামিয়ে অর্থ উপার্জন করতো। এখন তারাও অলস সময় বসে আছে।

মেসার্স ব্রাদার্স নেভিগেশন কম্পানীর লঞ্চ মালিক মো: সালাউদ্দিন বলেন, লঞ্চ ব্যবসা বন্ধ থাকায় ও ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। শ্রমিকদের বেতন দিতে পারছেন না ঠিক মতো। এ অবস্থায় শ্রমিকদের সরকারি সহায়তার দেয়ার দাবি করেন।

ভোলা জেলা প্রশাসক মোঃ তৌফিক-ই-লাহী চৌধুরী বলছেন করোনার লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত নৌ শ্রমিক থেকে শুরু করে দিন মুজুর সহ সকল শ্রমিকদের কে আমরা প্রধানমন্ত্রীর উপহার পৌছে দেয়া চেষ্টা করবো। ভোলা জেলার সাথে ২৩টি ঘাট থেকে ছোট বড় প্রায় ৪৬ টি লঞ্চ প্রতিদিন ঢাকা- ভোলা রুটে চলাচল করে থাকে। এতে ঘাটে কর্মসংস্থান হয় প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিকের।

সাব্বির আলম বাবু /ইবি টাইমস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »