ভোলায় পুলিশকে ঘুষ দিয়ে আসামিকে ছাড়াতে এসে দালাল ও স্ত্রী আটক

ভোলা জেলা প্রতিনিধি: ভোলার ইলিশায় পুলিশকে ঘুষ দিয়ে আটককৃত আসামিকে ছাড়ানোর নাটকের ঘটনায় দুই দালালসহ স্ত্রীকে আটক করেছে পুলিশ । আত্মসাৎকৃত টাকা ও মোবাইল উদ্ধার করা হয়েছে। ইলিশা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ  আনিছুর রহমান জানান, মারপিটের ঘটনায় ভোলা থানার মামলার আসামী মোঃ ইসমাইল (৩২) আটক করে পুলিশ ।

ঐ আটককৃত আসামী ইসমাইল কে ছাড়াতে পুলিশকে ৩ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হবে বলে তার স্ত্রী পপি আক্তার শাহীনাকে জানান দালাল মনির ও ইসমাইল । তখন পপি আক্তার শাহীনা তাদেরকে নিজের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি দিয়ে বলে, “তার কাছে কোন নগদ টাকা নেই, এই মোবাইল ফোনটি বিক্রয় করে দিয়ে তার স্বামীকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করেন”।

কিছুক্ষন পরে তারা পপি আক্তার শাহীনাকে জানায়, “মোবাইল ফোনটি ১ হাজার টাকা বিক্রয় করা হয়েছে। পপি ১ হাজার টাকা করে অজ্ঞাত দুইজনের নিকট হইতে ২ হাজার টাকা ধার করে ৩ হাজার টাকা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে দেওয়ার জন্য দালালের কাছে দেন । দালালরা পপিকে বাইরে রেখে পুলিশ কর্মকর্তার রুমে যায়। কিছু সময় পর তারা বের হয়ে জানান, কথা হয়েছে একটু পরেই ছেড়ে দিবে বলেছে। এর কিছু সময় পর ওই দুলাল ফের ফারীর ভিতর গিয়ে ফিরে এসে পপিকে জানায় পুলিশ আসামীকে ছাড়বে না।

এঘটনায় ভোলা পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানান, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গ্রেফতারকৃত আসামীকে আটকের পর নিয়ম মাফিক বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করেছেন ।

এদিকে ৩ হাজার টাকা ঘুষের বিষয়ে তিনি জানান, ইসমাইল ও মনির হোসেন আসামীর স্ত্রীর থেকে ৩ হাজার টাকা আত্মসাৎ করার প্রয়াশে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে পরিকল্পনা করে। এই লক্ষ্যে ওই মামলার এজাহার ভূক্ত ০২ নং আসামী পপি আক্তার শাহীনাকে বিভিন্ন কু-পরামর্শ প্রদান করে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে মামলার তদন্তকারী অফিসার পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মোঃ আনিছুর রহমান এর বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ও নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে মৌখিক অভিযোগ করে বলেন গ্রেফতারকৃত আসামীকে ছেড়ে দেয়ার কথা বলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ আনিছুর রহমান ৩,০০০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন পপির কাছ থেকে । তাদের তিন জনের কথোপকথনে পুলিশ সুপারের সন্দেহ হলে তিনি ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেন। পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সারের  কৌশলী জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে মোসাঃ পপি আক্তার শাহীনা উল্লেখিত মামলার এজাহারনামীয় ০২নং আসামী বলে স্বীকার করেন।

এছাড়াও শাহীনার সঙ্গীয় ইসমাইল ও মনির হোসেনকে উপস্থিত অন্যান্য পুলিশ অফিসারের সম্মুখে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা এলোমেলো বিভ্রান্তিকর তথ্য উপাত্ত প্রকাশ করতে থাকে। তাদের কারো কথার সাথে কারো কথার মিল না থাকায় পুলিশ সুপারের সন্দেহ আরো তীর্যক হয়। পরবর্তীতে পুলিশ সুপারের নির্দেশে উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের দ্বারা ইসমাইল ও মনির হোসেনকে তল্লাশী করাকালে ইসমাইল হোসেন এর পকেট হতে পপি আক্তার শাহীনার মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়। সেই মোবাইল টি বিক্রি করে পুলিশ কে ঘুষ দিয়েছেন বলে জানিয়েছিলো। পরে পপি আক্তার শাহীনা ওই মোবাইল টি তার বলে জানান। আসামী ছাড়াতে না পেরে দালালদের কাছে থাকা ৩ হাজার টাকা যাতে ফেরত না দিতে হয় এজন্য , ইসমাইল ও মনির হোসেন পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার লক্ষ্যে পপি আক্তার শাহীনা এর মোবাইল ফোন ও টাকা আত্মসাৎ করে পুলিশের উপর দায় চাপানোর চেষ্টা করে।

এ সময় পুলিশ সুপারের নির্দেশে উক্ত মামলার এজাহারনামীয় ০২ নং আসামী পপি আক্তার শাহীনা ও টাকা আত্মসাৎকারী ইসমাইল হোসেন এবং মনির হোসেনকে পুলিশ আটক করে। উদ্ধারকৃত মোবাইল ফোনটি জব্দ করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলেও জানান।

সাব্বির আলম বাবু /ইবি টাইমস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »