ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট; পিরোজপুর: পিরোজপুরের নাজিরপুরে এক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্ণীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযুক্ত ওই ইউপি চেয়ারম্যানের নাম উত্তম কুমার মৈত্র। তিনি উপজেলার ৮নং শ্রীরামকাঠী ইউনিয়নের আওয়ামলীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান। তার বিরুদ্ধে ওই ইউনিয়নের ১২ জন মেম্বারের মধ্যে ১১ জন মেম্বাররা জেলা প্রশাসকের কাছে তার বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্ণীতির ব্যাপারে অভিযোগ করেছেন।
ওই ইউনিয়নের ইউপি সদস্যদের দেয়া অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ওই ইউনিয়নের নৈলতলা জ্যোতি প্রকাশ রায়ের বাড়ির নিকট একটি লোহার পুল মেরামত বাবদ ২ লাখ টাকা, খেজুরতলা সপ্তগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন লোহার পুল মেরামত বাবদ ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক বরাদ্দ করে তার কোন কাজ না করে পুরো টাকাটাই আত্মসৎ করেছেন।
এলজিএসপি-৩ এর আওতায় প্রতি বছর বরাদ্দকৃত ১৮-২০ লাখ টাকার কাজের কোন ইউপি সদস্যদের সংশ্লিষ্ট না করে তাদের নাম ব্যবহার করে নিজের খেয়াল-খুশি মতো প্রকল্প দেখিয়ে তা আত্মসাত করেন। এ ছাড়া ওই সব এলজিএসপি’র কাজে পুরাতন অকেজো মালামাল জোড়া তালি দিয়ে ব্যবহার করেন।
গত অর্থ বছরে ৭৮ হাজার টাকায় মধুরাবাদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিকট থাকা লোহার পুল মেরামত প্রকল্পের কাজ গ্রহন করা হয়। কিন্তু তিনি সেখানে কোন কাজ না করে পুরো টাকাটাই উত্তোলন করে আত্মসত করেছেন। এ ছাড়া ইউপি সদস্যদের দেয়া কাজ বাস্তবায়নের জন্য বরাদ্দের ও ইউনিয়নের উন্নয়ন মূলক টিআর-কাবিখা কাজেরও তাকে শতকরা ৩০ ভাগ দিতে হয়। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, পঙ্গু ভাতা, হরিজন ভাতা, মৎস্য ভিজিএস কার্যক্রম, দুস্থ সাহায্যের তালিকা সহ গভীর নলকুপ প্রদানে স্বজন প্রীতি ও বানিজ্যের অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া ওই ইউনিয়নের কাঠালতলা সুনীল সন্যাসীর বাড়ির সামনের লোহার পুল স্থলে ত্রান ও পুর্ণবাসন প্রকল্পের আওতায় কালভার্ট নির্মান কার হলে সেখানে থাকা লোহার ব্রীজটির মালামাল ইউনিয়ন পরিষদে জমা না দিয়ে নিজেই আত্মসাৎ করেছেন।
এ ছাড়া চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নির্বাচিত হয়ে স্থানীয় বিভিন্ন শালিশ-বৈঠক সহ বিভিন্ন ভাবে আর্থিক বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। তিনি নির্বাচিত হওয়ার এক বছরের মধ্যেই শ্রীরামকাঠীর বন্দর সংলগ্ন ভীমকাঠীতে তিন তলা বিশিষ্ট সুদৃশ্য পাকা ভবন নির্মান করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তার নির্বাচন পরিচালনাকারী একাধীক সদস্যরা জানান, তিনি নির্বাচনের সময় নিজের টাকা না থাকায় অন্যের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য এনে নির্বাচন উঠাতে হয়েছে।
জানা গেছে, ওই ইউনিয়নের ৬ বারের চেয়ারম্যান ছিলেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এমএ মালেক বেপারী। গত ২০১৭ সালের ১৪ নভেম্বর তার মৃত্যু হয়। এতে আওয়ামলীগ মনোনীত নৌকা প্রতীক নিয়ে পরের বছর ২০১৮ সালের ১৬ এপ্রিলের অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে
চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন উত্তম কুমার মৈত্র।
ওই ইউনিয়নের বাসিন্দা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি খোকন কাজী জানান, চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে স্থাণীয় একাধীক শালিশ-বৈঠক থেকে টাকা গ্রহন, জমি বিক্রির মধ্যস্থতা করে জমির ক্রেতার কাছ থেকে পুরো টাকা নিয়ে তা মালিককে না দিয়ে আত্মসাৎ করার বহু অভিযোগ রয়েছে। ভুক্তভোগীরা নিরুপয় হয়ে আমার কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। চেয়ারম্যানকে বললে তিনি কোন কর্নপাত করেন না।
এসব অভিযোগের বিষয় নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান উত্তম কুমার মৈত্রের সাথে মুঠো ফোনে কথা হলে তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে ইউপি সদস্যদের সাথে একটি বৈঠকের মাধ্যমে মিট-মাট হয়েছে।
এ ছাড়া তার বহুতল ভবন নির্মানের বিষয় জানতে চাইলে তিনি জানান, তিনি ও তার স্ত্রীর চাকুরি (এনজিও) থেকে অবসর যাওয়ার টাকা ও পিতার জমি বিক্রির টাকা দিয়ে ওই ভবন তৈরী করা হয়েছে। কেহ আমার বিরুদ্ধে টাকা আত্মসতের অভিযোগ করলে তাদের টাকা দিয়ে দিবো।
এইচ এম লাহেল মাহমুদ /ইবি টাইমস