ঐতিহাসিক ২৯ এপ্রিল,অরক্ষিত বেড়িবাঁধ, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় বাঁশখালী উপকূলবাসী,ট্রাজেডির ৩১ বছর

বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধিঃ আজ ঐতিহাসিক ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল। ভয়াল একটি রাত! এদিন ‘ম্যারি এন’ নামক ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় লণ্ডভণ্ড করে দেয় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় পূরো উপকূলীয় অঞ্চল। লাশের পরে লাশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল চারদিকে। নদী-নালা, ডোবায়, খাল-বিল, সমুদ্রে ভেসেছিল মানুষের লাশ আর লাশ। গরু, মহিষ, ভেড়ার মরদেহের স্তুপ যেনো ভয়াল এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য। বিস্তীর্ণ অঞ্চল ধ্বংসস্তপে পরিণত হয়েছিল। দেশের মানুষ বাকরুদ্ধ হয়ে সেদিন প্রত্যক্ষ করেছিল প্রকৃতির করুণ এই আঘাতের নিদারুণ দৃশ্য। প্রাকৃতিক দূর্যোগের এতোবড় অভিজ্ঞতার মুখোমুখি এদেশের মানুষ এর আগে আর কখনো সম্মুখীন হয়নি। পরদিন বিশ্ববাসী অবাক হয়ে গিয়েছিল সেই ধ্বংসলীলা দেখে। কেঁপে উঠেছিল বিশ্ব বিবেক। নির্বাক হয়ে থাকিয়ে ছিলো জাতী। স্বজন হারানোর অস্থিরতায় বোবা কান্নায় ডুকরে ডুকরে কেঁদেছিলো সমগ্রদেশের বিবেক। বাংলাদেশে আঘাত হানা ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের নিহতের সংখ্যা বিচারে পৃথিবীর ভয়াবহতম ঘূর্ণিঝড় গুলোর মধ্যে অন্যতম।

জানা যায়, ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল রাতে বাংলাদেশে-র দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হানা এ ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড়টিতে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘন্টায় প্রায় ২৫০ কিমি (১৫৫ মাইল/ঘন্টা)। ঘূর্ণিঝড় এবং তার প্রভাবে সৃষ্ট ৬ মিটার (২০ ফুট) উঁচু জলোচ্ছাসে আনুমানিক ১ লক্ষ ৩৮ হাজার মানুষ নিহত এবং প্রায় এক কোটি মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছিল। এ ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছিল নোয়াখালী, চট্টগ্রামসহ দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় আর এতে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় পূরো উপকূল। স্মরণকালের ভয়াবহ এ ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৫০ কিলোমিটার। ২০ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে যায় বিস্তীর্ণ এলাকা। সেই ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা ১ লাখ ৩৮ হাজার ২৪২ জন। তবে বেসরকারি হিসাবে এর সংখ্যা আরো বেশি। মারা যায় ২০ লাখ গবাদিপশু। গৃহহারা হয় হাজার হাজার পরিবার। ক্ষতি হয়েছিল ৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি সম্পদ। উপকূলবাসী আজও ভুলতে পারেনি সেই রাতের দুঃসহ স্মৃতি। শতাব্দীর প্রলয়ঙ্করি ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে বৃহত্তর চট্টগ্রাম এবং দেশের উপকূলীয় অঞ্চল মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়। ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয় কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ।

উল্লেখ্য, এই ঘূর্ণিঝড়ে দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় প্রাণহানি হয়েছিলো প্রায় ৮ হাজার লোকের। স্বজন হারানোর বেদনা এখনো ভুলতে পারেনি নিহতের স্বজনেরা। এছাড়াও কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া, মহেশখালী, কক্সবাজার সদর, চকরিয়া, পেকুয়া, উখিয়া ও টেকনাফ সহ উপকূলের বিভিন্ন এলাকার স্বজন হারানো মানুষ গুলো এখনো ভয়াল ২৯ এপ্রিলকে স্মরণ করে দুঃসহ বেদনার মধ্যে দিয়ে। চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার দীর্ঘ ৩৩ কিলোমিটার সমুদ্র সৈকতের কোলঘেঁষে গড়ে উঠা হাজার হাজার উপকূলবাসী বর্ষা মৌসুম আসলে প্রাকৃতিক বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করলে পূর্বের সেই ভয়াল স্মৃতিকে মনে করে স্বজন হারাদের উৎকণ্ঠায় জীবন পার হয়।

বাঁশখালী উপকূলের অরক্ষিত বেড়ীবাঁধ নিয়ে কথা হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাঁশখালী) উপবিভাগীয় প্রকৌশলী প্রকাশন চাকমার সাথে। তিনি বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে অতীব ঝুঁকিপূর্ণ হাছিয়া পাড়া কদমরসূল অংশে উধ্বর্তন কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে পরিদর্শন করেছেন। সিদ্ধান্ত হয়েছে স্থায়ী বেড়ীবাঁধের জন্য মন্ত্রণালয়ে বরাদ্ধ চেয়ে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। তাছাড়া ছনুয়া ও গন্ডামারার কিছু অংশ অরক্ষিত থেকে গেছে তাও যথাসময়ে সম্পন্ন করার ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানান এ কর্মকর্তা।

চ প্র /ইবি টাইমস

EuroBanglaTimes

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »