ভোলায় নৌ-ফায়ার স্টেশনের দাবি

ভোলা প্রতিনিধিঃ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ভোলা এর উপ পরিচালক মো. ফারুক হোসেন সিকদার জানান, ‘অগ্নিঝুঁকি ও নৌ-দুর্ঘটনা হ্রাস করার জন্য ভোলায় ২টি নৌ ফায়ার স্টেশনসহ ৪টি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণ করার জন্য অধিদপ্তরে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে একটি ভোলার ইলিশায় এবং অন্যটি চরফ্যাশনের বেতুয়া নদীতে হওয়ার কথা রয়েছে।’ নদী বেষ্টিত দ্বীপ জেলা ভোলায় কোন নৌ-ফায়ার স্টেশন না থাকায় অগ্নিকান্ডের ঝুঁকি মুখে রয়েছে জেলার ফেরি ঘাট ও চরাঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ। প্রায়ই মাঝ নদীতে ফেরিতে ঘটছে অগ্নিকান্ডের মতো ঘটনা। এতে আগুনে পুড়ে নষ্ট হচ্ছে ব্যবসায়ীদের কোটি টাকার সম্পদ। শুধু তাই নয় বিভিন্ন চরাঞ্চলে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলে গতানুগতিক পদ্ধতিতে আগুন নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হয় দমকল বাহিনীকে।

দীর্ঘদিন ধরে এ অঞ্চলের বাসিন্দারা নৌ-ফায়ার স্টেশনের দাবি জানিয়ে আসলেও এর বাস্তবায়ন হয়নি এখনও। তবে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ভোলা এর উপ পরিচালক মো. ফারুক হোসেন সিকদার জানান, অগ্নিঝুঁকি ও নৌ-দুর্ঘটনা হ্রাস করতে ভোলায় নতুন চারটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নিমার্ন করার জন্য অধিদপ্তরে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

চারদিকে নদী বেষ্টিত এ জেলায় যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে নৌ-রুট ও ফেরি সার্ভিস। সম্প্রতি ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌরুটে মেঘনা নদীর মাঝখানে ‘এমভি কলমীলতা’ নামে একটি ফেরিতে লাগা আগুনে পণ্যবাহী ট্রাকসহ নয়টি গাড়ি পুড়ে যায়। এতে প্রায় ৮ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, শুধু স্থল ফায়ার সার্ভিস দিয়ে আগুন নেভানো সম্ভব না। মাঝ নদীতে আগুন লাগলে সড়ক পথে ফায়ার সার্ভিস আসার আগেই আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়। তাই ব্যবসায়ীদের দাবি জেলায় নৌ ফায়ার স্টেশন থাকলে আগুন দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।

নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি আইনজীবী নজরুল হক অনু বলেন, ‘ঢাকা থেকে বিভিন্ন ট্রাকে মালামাল ফেরিতে করেই আসে। কিন্তু ফেরিতে যদি আগুন লাগে তখন তাৎক্ষনিক আগুন নেভানোর কোন সুযোগ থাকে না। সম্প্রতি কলমীলতা ফেরীতে আগুন লাগাই তার দৃষ্টান্ত উদাহরন। ভোলা শহর থেকে ফায়ার সার্ভিসের টিম নদী পথে মাঝ নদীতে গিয়ে আগুন নিভাতে যে সময় লাগে তাতে সব পুড়ে নিঃশেষ হয়ে যায়। তাই নদী পথে অগ্নি দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি কমাতে ভোলা-লক্ষীপুর ফেরি ঘাটে একটি নৌ ফায়ার স্টেশন নিমার্ণ করা দরকার।

ভোলা ইলিশা এলাকার ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ভোলায় দুটি ফেরিঘাটসহ বিভিন্ন চরাঞ্চল রয়েছে। যে ফায়ার স্টেশনগুলো আছে সেগুলো নদীতে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনা অনেক কষ্ট সাদ্য এবং সময় সাপেক্ষ।’

বিআইডব্লিউটিসির বিভাগীয় প্রধান মো: ইমরান হোসেন জানান, ভোলাসহ ২১ জেলায় ভোলা-লক্ষীপুর ও ভোলা-বরিশাল ফেরি সার্ভিস হয়ে পন্যবাহী ট্রাক চলাচল করে। প্রতিনিয়ত ব্যাবসায়ীরা এ নৌ-রুটের ফেরি গুলোতে অগ্নিকান্ডের ঝুঁকির মধ্যে পণ্য আনা নেয়া করে থাকেন। তাই ইলিশা ফেরি সার্ভিস এর পাশে নৌ-ফায়ার স্টেশন নির্মাণ করার আহবান জানান।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ভোলা এর উপ পরিচালক মো. ফারুক হোসেন সিকদার জানান, ‘অগ্নিঝুঁকি ও নৌ-দুর্ঘটনা হ্রাস করার জন্য ভোলায় ২টি নৌ ফায়ার স্টেশনসহ ৪টি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণ করার জন্য অধিদপ্তরে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে একটি ভোলার ইলিশায় এবং অন্যটি চরফ্যাশনের বেতুয়া নদীতে হওয়ার কথা রয়েছে। এগুলো নির্মাণ করা হলে ভবিষ্যতে দুর্ঘটনা ঘটলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান কমে আসবে। ‘এছাড়া জেলায় ছোট বড় মিলে ৭০ টির মতো চরঞ্চল রয়েছে। সেখানে দ্রুত গতিতে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন পৌঁছাতে হলে অবশ্যই পানি পথে যেতে হবে। সেই কারণেই নৌ-ফায়ার স্টেশন খুবই জরুরি। জেলায় বর্তমানে ৭ ফায়ার সার্ভিস স্টেশন আছে।’

সাব্বির আলম বাবু/ইবি টাইমস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »