৫৩ জন ক্রুসহ সমুদ্রের ৮৫০ মিটার গভীরে ডুবে গেল ইন্দোনেশিয়ার সাবমেরিন

সাবমেরিনটি গত বুধবার থেকে নিখোঁজ ছিল

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ শনিবার ইন্দোনেশিয়ার সেনাবাহিনী জানিয়েছে যে সেটি ডুবে গেছে ।ধারণা করা হচ্ছে ইন্দোনেশিয়া সাবমেরিন দুর্ঘটনায় ৫৩ জন নাবিকের মধ্যে কেউ আর বেঁচে নেই! পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে ইন্দোনেশিয়ান সাবমেরিন নানগালা (৪০২)। ৫৩ জন ক্রুসহ সমুদ্রের ৮৫০ মিটার গভীরে ডুবে গেল ইন্দোনেশিয়ার সাবমেরিন। নাবিকদেরকে জীবন্ত উদ্ধারের আশা নেই বলে জানাচ্ছে ইন্দোনেশিয়া কর্তৃপক্ষ৷ টর্পেডো মহড়ার সময় থেকেই বালি দ্বীপের কাছ থেকে নিখোঁজ হয়ে যায় সাবমেরিনটি৷ কিন্তু এর পেছনের নির্দিষ্ট কারণ এখনো জানা যায়নি৷

ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনী জানিয়েছে, বিদ্যুৎ পরিষেবা ছিন্ন হবার কারণে চালক হয়ত সাবমেরিনটির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন৷ পরে, সাবমেরিনটির সর্বশেষ স্থানের পাশে দেখা যায় নিঃসৃত তেল ভেসে থাকতে৷ সাবমেরিনটি ছিল সমুদ্রতটের ২ হাজার ৩০০ ফুট(প্রায় ৮৫০ মিটার) নিচে, ফলে পানির চাপে সেটি ভেঙে যাবার সম্ভাবনাও দেখছেন অনেকে৷ স্ক্যানারের সাহায্যে ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনী সমুদ্রপৃষ্ঠের ২ হাজার ৭৮৯ ফুট নিচে সাবমেরিনটির ধ্বংসাবশেষ দেখতে পায়৷ সমুদ্রের অত গভীরে কোন মানুষের বেঁচে থাকার কোনো সম্ভাবনাই থাকেনা বলে জানিয়েছেন তারা৷ সরকারের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে অনেকে বলছেন, ৪৪ বছর পুরোনো এই সাবমেরিনকে পানির অত গভীরে টর্পেডো মহড়ার জন্য পাঠানো ঠিক হয়নি৷ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, জার্মানিতে তৈরি এই সাবমেরিনটি যুদ্ধের জন্য এখনও পুরোপুরি প্রস্তুতছিল ৷

ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো ভিডোডো সাবমেরিনটিকে উদ্ধারের জন্য সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ করেন৷ অস্ট্রেলিয়া, ভারত, মালয়শিয়া, সিঙ্গাপুর ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ বিমান ও নৌসেবা যোগ দেয় সাবমেরিনের খোঁজে৷ ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনীর বক্তব্য, শনিবারেই শেষ হয়ে গেছে ডুবে যাওয়া সাবমেরিনের মজুত অক্সিজেন৷ ফলে, ৫৩ জনের মধ্যে কাউকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধারের আশা দেখছে না তারা৷

ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা থেকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছেন যে,গত বুধবার অর্থাৎ ২১ই এপ্রিল থেকেই ইন্দোনেশিয়ার উপর নেমে এসেছিল প্রবল উৎকণ্ঠা। কারণ আর কিছু নয়, ৫৩ জন ক্রু সহ ইন্দোনেশিয়ান নৌবাহিনীর কেআরআই নানগালা (৪০২) সাবমেরিনটির হারিয়ে যাওয়া নিয়ে। এবার সেই উৎকণ্ঠা এখন রাস্ট্রীয় শোকে রূপ নিল। ইন্দোনেশিয়ান নৌবাহিনীর প্রধান ইয়োদো মারগোনো নিজেই সাবমেরিন ধংস্বের কথা নিশ্চিত করেছেন। একই সাথে ৫৩ জন ক্রুই যে মৃত্যুবরণ করেছে তাও অনেকটাই নিশ্চিত বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার মার্শাল Hadi Tjahjanto বলেন, “সাবমেরিনটির শেষ অবস্থানের কাছ হতে উদ্ধারকৃত জিনিস গুলো সাবমেরিনেরই অংশ এবং এই জিনিস গুলি কোনভাবেই প্রবল চাপ ছাড়া সাবমেরিনের বাইরে আসতে পারে না। তার এই বক্তব্যকে নিশ্চিত করে নৌ-প্রধান ইয়োদো মারগোনো বলেন যে সার্চ টিম সাবমেরিনের ভেতরে থাকা টর্পেডো স্ট্রেইটনার, পেরিস্কোপ পরিষ্কার করার গ্রিজ বটল ও মোটা কাপড়ের টুকরো পেয়েছে। এসব জিনিস সাবমেরিনের একদমই অভ্যন্তরীণ। তাই এটি মোটামুটি নিশ্চিত ভাবেই বলা যায় যে সাবমেরিন সম্পূর্ণ ভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। মারগোনো বলেন, “এই শক্ত প্রমাণ গুলো হাতে পাওয়ার পর আমরা সাবমেরিন হারিয়ে গেছে এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে সাবমেরিন ধ্বংস হয়েছে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি

ইন্দোনেশিয়ার নৌ-প্রধানের ভাষ্যমতে সাবমেরিনটির অস্তিত্ব সমুদ্রপৃষ্ঠের ৮৫০ মিটার গভীরে নিশ্চিত করা গেছে। কিন্তু এই সাবমেরিনটির অপারেটিং ডেপথ মাত্র ২০০-২৫০ মিটার ও ক্রাশ ডেপথ সর্বোচ্চ ৫০০ মিটার। পুরোপুরি ঠিক থাকলেও ৫০০ মিটারের নিচে নামলে এই সাবমেরিন বিধ্বস্ত হওয়ার কথা। সেখানে দুর্ঘটনায় পড়ে ৮৫০ মিটার নেমে গেছে মানে এই সাবমেরিনের হাল তথা মূল কাঠামো ভেঙে চৌচিড় হয়ে গেছে ধরে নেওয়া যায়। এমনিতেও কর্তৃপক্ষের হিসাব মতে গতকাল অর্থাৎ শনিবার ভোর রাতেই সাবমেরিনের সমস্ত অক্সিজেন শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। অর্থাৎ অক্সিজেনের অভাবে ইতোমধ্যেই সব ক্রুর মৃত্যুবরণ করার কথা। তবে ৮৫০ মিটার গভীরতার কথা শুনে মনে হচ্ছে তারা আরো আগেই মৃত্যুবরণ করেছে। কারণ ৮৫০ মিটার গভীরতায় পৌছানোর আগেই সাবমেরিন পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে যাওয়ার কথা।

এ ধরনের ভয়াবহ দুর্ঘটনা শেষবার ঘটেছিল ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর। সেদিন আর্জেন্টিনার এআরএ সান জুয়াননামক একটি সাবমেরিন ৪৪ জন ক্রু সহ হারিয়ে যায়। দুই সপ্তাহ খোঁজ করার পরেও তার কোন খোঁজ মেলে নি। অতঃপর ঘটনার ঠিক এক বছর এক দিন পর ২০১৮ সালের ১৭ নভেম্বর একটি আমেরিকান কোম্পানি আটলান্টিক মহাসাগরের ৮০০ মিটার গভীরে সাবমেরিনটিকে খুজে পায়।

কবির আহমেদ /ইবি টাইমস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »