ভোলায় পানিতে মিলেছে ডায়রিয়ার জীবাণু,এক মাসে ৫ হাজারের অধিক আক্রান্ত

ভোলা প্রতিনিধিঃ হঠাৎ করে ভোলায় বেড়ে গেছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। এর কারণ অনুসন্ধানে স্বাস্থ্য বিভাগ একটি পুকুরের পানি পরীক্ষা করে ডায়রিয়ার জীবাণুর সন্ধান পেয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ভোলার সিভিল সার্জন ডা. সৈয়দ রেজাউল ইসলাম জানান, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য বিভাগের একটি দল ডায়রিয়ায় আক্রান্ত এক ব্যক্তির বাড়ির পুকুরের পানির নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকার আইইডিসিআর-এ পাঠায়। ওই নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টে পুকুরটির পানিতে ডায়রিয়ার জীবাণু পাওয়া যায়।

তিনি বলেন, নদী ও খালের পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে যাওয়া, বৃষ্টি না হওয়া এবং গরমের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার কারণে ডায়রিয়ার সংক্রমণ বেড়েছে। এছাড়া গ্রাম অঞ্চলে গৃহস্থালীর কাজে বিশুদ্ধ পানির ব্যবহার না করা এবং হাইজিং মেনটেন না করার কারণেও ডায়রিয়া প্রকোপ বাড়ছে। ইতোমধ্যে ডায়রিয়া মোকাবিলায় জেলায় জরুরি ভিত্তিতে ৭৬টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। এদিকে, জেলায় প্রতিদিন গড়ে ২০০-৩০০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন।

হাসপাতাল গুলোতে রোগীদের ভিড় বাড়ছে। শয্য সংকটে রোগীদের বাধ্য হয়েই মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়েও হিমশিম খাচ্ছেন রোগীরা।

গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে জেলায় আরো ৩৩৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১২৫ জন। এছাড়া গত এক সপ্তাহে পুরো জেলায় দুই হাজার ৪৭৮ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। অন্যদিকে, এক মাসে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৭৮৯ জনে। এক সপ্তাহে আক্রান্তদের মধ্যে ভোলা সদর হাসপাতালে ৯৩৩ জন,  দৌলতখানে ২৪১ জন, বোরহানউদ্দিনে ৩৭৬ জন, লালমোহনে ২৪২ জন, চরফ্যাশনে ৩৯২ জন, তজুমদ্দিনে ১৫৭ জন ও মনপুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৩৭ জন।

সরেজমিনে ভোলা সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর ডায়রিয়া ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, বেড সংকট থাকায় মেঝেতে বসে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে রোগীদের। আক্রান্তদের মধ্যে নারী-শিশুর সংখ্যাই বেশি। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত বেড়ে যাওয়ায় উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতাল গুলোতে দেখা দিয়েছে স্যালাইন সঙ্কট। কোনো কোনো উপজেলায় আবার রোগীদের বাইরে থেকে চড়াও মূল্যে স্যালাইন কিনতে হচ্ছে।

ভোলা সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে আক্রান্ত রোগীর স্বজনরা জানান, হাসপাতালে বেড না থাকায় মেঝেতে বসে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।

ডায়রিয়া ওয়ার্ডে দায়িত্বরত সিনিয়র স্টাফ নার্স জাকিনুর জানান, ভোলা হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিন গড়ে ৯০-১০০ জন বা তার চেয়েও বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছে। রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তারপরেও আমরা চেষ্টা করিছ পর্যাপ্ত সেবা দিতে।

ভোলার সিভিল সার্জন ডা. সৈয়দ রেজাউল ইসলাম বলেন, ডায়রিয়া মোকাবিলায় আমরা মেডিক্যাল টিম গঠন করেছি। তারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। দুই একটি হাসপাতাল ছাড়া সব হাসপাতালে পর্যাপ্ত স্যালাইন সরবরাহ রয়েছে। যা দিয়ে আরো ১০ দিন চালানো সম্ভব। আমাদের ডাক্তার ও নার্স রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন।

সাব্বির আলম বাবু /ইবি টাইমস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »