ভারতের করোনায় দৈনিক সংক্রমণ প্রায় ৩ লাখ ও মৃত্যু ২ হাজার

দৈনিক সংক্রমণের অর্ধেকের বেশি হচ্ছে মাত্র ৫টি রাজ্যে

অন লাইন ডেস্কঃ ভারতের করোনা পরিস্থিতি দিন দিন আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। ভারত বর্তমানে করোনার দৈনিক সংক্রমণে যুক্তরাষ্ট্রকেও পিছনে ফেলে দিয়েছে।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বহুল প্রচারিত দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা তাদের অনলাইন প্রকাশনায় জানিয়েছেন,দেশের দৈনিক সংক্রমণ বুধবার পৌঁছে গিয়েছে ৩ লক্ষের দোড়গোড়ায়। ভারতে একদিনে ২ লক্ষ ৯৫ হাজার ৪১ জন কোভিড-১৯ অর্থাৎ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। করোনা মহামারীর শুরুর পর থেকে বিশ্বের কোন দেশেই করোনার দৈনিক সংক্রমণ ৩ লাখে পৌঁছায় নি। ভারতে বর্তমানে নতুন ডাবল মিউট্যান্ট ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব চলছে। এই সংক্রমণের অর্ধেকেরও বেশী হয়েছে ভারতের পাচঁটি রাজ্যে যথাক্রমে মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, কর্নাটক এবং কেরল রাজ্যে।

করোনা মহামারীর প্রথম প্রাদুর্ভাবের মতো এই দ্বিতীয় প্রাদুর্ভাবেও ভারতের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার মহারাষ্ট্র রাজ্য। এই রাজ্যের দৈনিক সংক্রমণ এখন ৬০ হাজারের উপরে।

আজ এই রাজ্যে নতুন করে করোনায় সংক্রমিত সনাক্ত হয়েছেন ৬০ হাজার ৯৭ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৫১৯ জন। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে উত্তরপ্রদেশের পরিস্থিতিও ভয়ঙ্কর অবনতি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে আক্রান্ত হয়েছেন ২৯ হাজার ৫৭৪ জন। দিল্লিতে বুধবার ২৮ হাজার ৩৯৫ জন নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন। একদিনে আক্রান্তের নিরিখে এই সংখ্যাই সর্বোচ্চ রাজধানীতে। কর্নাটক এবং কেরলেও লাফিয়ে বেড়েছে দৈনিক আক্রান্ত। গত ২৪ ঘণ্টায় কর্নাটকে সাড়ে ২১ হাজার এবং কেরলে সাড়ে ১৯ হাজারের বেশী মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

ভারতের অন্যান্য রাজ্যে মধ্যে আরও কয়েকটি রাজ্যে ক্রমশই বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য রাজ্য সমূহ যথাক্রমে ছত্তীসগঢ় রাজ্যে ১৫,৬২৫ জন, মধ্যপ্রদেশে ১২,৭২৭ জন, গুজরাতে ১২,২০৬ জন, রাজস্থানে ১২,২০১ জন। বাংলাদেশের নিকটতম রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ এবং বিহারেও আক্রান্তে বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। গত ২৪ ঘণ্টায় বিহারে ১০ হাজার ছাড়িয়েছে এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে ১০ হাজারের দোড়গোড়ায় পৌঁছে গিয়েছে।

তাছাড়াও অন্ধ্রপ্রদেশে ৮,৯৮৭ জন, হরিয়ানায় ৭,৮১১ জন, তেলঙ্গানা রাজ্যে ৬,৫৪২ জন, ঝাড়খণ্ড রাজ্যে ৫,০৮০ জন,ওড়িশায় ৪,৭৬১ জন, পঞ্জাবেও ৪,৬৫৬ জন নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। আমাদের প্রতিবেশী আসাম রাজ্যেও এখন করোনার দৈনিক সংক্রমণ হাজারের উপরে রয়েছে।

ভারতের হিমাচল প্রদেশ, গোয়াতেও আক্রান্ত ১ হাজারের গণ্ডি ছাড়িয়েছে। লাদাখ এবং সিকিমেও গত ক’দিনে দৈনিক আক্রান্ত বেড়েছে বলে জানিয়েছে ভারতের জাতীয় সংবাদ মাধ্যম।

ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের অন্যতম কারণ এই  ‘‌ডবল ভ্যারিয়ান্ট স্ট্রেন’। যা আরও বেশি ছোঁয়াচে, খুব তাড়াতাড়ি এক শরীর থেকে অন্য থেকে শরীরে ছড়াতে পারে। ‌অর্থাৎ হিউম্যান ট্রান্সমিশন হতে পারে খুবই দ্রুত।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু’‌র কোভিড দলের টেকনিক্যাল হেড মারিয়া ভ্যান কারকোভে বলেছেন, ‘‌ব্রিটেন, ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকার পাশাপাশি এই ডবল মিউট্যান্ট স্ট্রেনও এখন চিন্তার কারণ। সার্স–কোভিড –২ ভাইরাসের জিন দু’‌বার বদলে গিয়ে এই নতুন প্রজাতি তৈরী করেছে। ভারতের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, জার্মানি, আয়ার‌ল্যান্ড, নামিবিয়া, নিউজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ব্রিটেন, আমেরিকায় হু হু করে ছড়াচ্ছে এই নয়া প্রজাতি। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চের বিজ্ঞানী অপর্ণা মুখার্জি বলেছেন, ‘‌সার্স–কোভিড –২ ভাইরাসের দুটি মিউটেশন হচ্ছে E484Q ‌এবং L452R‌।

দুইবার বদলের ফলে যে নতুন ভ্যারিয়ান্ট তৈরি হচ্ছে, তার নাম দেওয়া হয়েছে B.1.617‌। এই নয়া ভ্যারিয়ান্ট অনেক বেশি ছোঁয়াচে। দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার হার অনেক বেশি। ‌যেহেতু করোনার স্পাইক প্রোটিনে জিনের বিন্যাস বদলেছে, তাই ভাইরাস এখন আরও দ্রুত বিভাজিত হয়ে প্রতিলিপি তৈরি করতে পারে। অর্থাৎ একজন মানুষের শরীরে ঢুকলে নতুন প্রজাতির স্পাইক প্রোটিন তাড়াতাড়ি বিভাজিত হয়ে অসংখ্য প্রতিলিপি তৈরি করে কোষে ছড়িয়ে পড়বে। সংক্রমণ দ্রুত ছড়াবে। আক্রান্ত মানুষের সংস্পর্শে যাঁরা আসবেন, তাঁদের শরীরেও ছড়িয়ে পড়বে ভাইরাস পার্টিকল।’‌ ল্যানসেট মেডিক্যাল জার্নাল তো বলেই দিয়েছে, করোনাভাইরাস বায়ুবাহিত হয়ে ছড়াতে পারে। ডবল মিউট্যান্ট স্ট্রেন তাই পরিবেশেও অনেকটা সময় বেঁচে থাকতে পারে বলে মত বিজ্ঞানীদের।

ভারতে অন্তত শতকরা ৬০% শতাংশ সংক্রমণের কারণ এখন এই ডবল মিউট্যান্ট প্রজাতি। মহারাষ্ট্রের কাউন্সিল অফ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল রিসার্চের ডিরেক্টর অনুরাগ আগরওয়াল বলছেন, ‘‌রাজ্যে শতকরা ৫২% শতাংশ করোনা রোগীর নমুনায় ডবল মিউট্যান্ট স্ট্রেন পাওয়া গেছে। দেশের অন্তত দশটি রাজ্যে এই স্ট্রেন ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে।’

কবির আহমেদ /ইবি টাইমস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »