ভারতে সোমবার করোনায় একদিনেই আড়াই লাখের উপরে আক্রান্ত
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের পরও করোনার সংক্রমণ হ্রাস না পাওয়ায় সম্পূর্ণ লকডাউনের পথে ভারতের মহারাষ্ট্র। ভারতের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ রাজ্য মহারাষ্ট্রে করোনার সংক্রমণ কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। রাজধানী দিল্লির পর এইবার মহারাষ্ট্র রাজ্যেও কঠোর লকডাউন ঘোষণা করা হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন রাজ্যের ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী বিজয় ওয়াদেত্তি ওয়ার।
মহারাষ্ট্রের রাজধানী মুম্ভাই থেকে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছেন,বর্তমানে ভারতের মধ্যে করোনায় সবচেয়ে বেশী সংক্রমিত রাজ্য মহারাষ্ট্র। করোনা প্রতিরোধে দিল্লির পথই কি অনুসরণ করবে মহারাষ্ট্র? এর আগে সংক্রমণ ঠেকাতে রাজ্যে ‘লকডাউনের মতো’ এই মর্মে কঠোর নিরাপত্তা বিধি জারি করেছিল মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকুরের প্রশাসন। তবে তাতে কাজ না হওয়ায় এই বার সম্পূর্ণ লকডাউনের পথেই হাঁটার কথা ভাবছে তারা। বিষয়টি জানিয়েছেন উদ্ধবের মন্ত্রিসভারই এক সদস্য। তবে তিনি জানান, এ ব্যাপারে যে সিদ্ধান্তই নেওয়া হোক, তা আগামী দু’দিনের মধ্যেই নিয়ে নেবে মহারাষ্ট্র সরকার। সে ক্ষেত্রে যদি সম্পূর্ণ লকডাউনের পথে হাঁটতেই হয়, তবে নিরাপত্তা বিধি সংক্রান্ত খুঁটিনাটি বিষয়ে দিল্লিকেই আদর্শ ধরেই চলবে মহারাষ্ট্র।
রাজ্যটিতে বর্তমানে দৈনিক সংক্রমণ প্রায় ৬০,০০০ হাজারের কাছাকাছি। সোমবার ১৯ শে এপ্রিল এই রাজ্যে নতুন করে সংক্রমিত সনাক্ত হয়েছেন ৫৮,৯২৪ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৩৫১ জন।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বহুল প্রচারিত জনপ্রিয় বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা তাদের অনলাইন প্রকাশনায় জানিয়েছেন, মহারাষ্ট্রের ত্রাণ ও পুনর্বাসন দফতরের মন্ত্রী বিজয় ওয়াদেত্তিওয়ার বলেছেন,এর আগে করোনা প্রতিরোধে লকডাউন না হলেও ১৫ দিনের জন্য ‘লকডাউনের মতো’ কঠোর নিরাপত্তা বিধি জারি করেছিল প্রশাসন। কিন্তু তাতে সংক্রমণ রোধে অভীষ্ট ফল মেলেনি। বিজয় বলেন, ‘‘কার্ফু যতটা সংক্রমণ ঠেকাতে পারবে বলে ভাবা হয়েছিল, তা পারেনি। তাই আগামী দুই দিনের মধ্যে রাজ্য জুড়ে সম্পূর্ণ লকডাউনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে তার আগে এ বিষয়ে অন্যান্যদের সঙ্গে আলোচনা করবেন তিনি।’’
পত্রিকাটি আরও জানিয়েছেন,এর আগে মহারাষ্ট্রে সম্পূর্ণ লকডাউনের বিরোধিতা করেছিল ব্যবসায়ী মহল। তবে মন্ত্রী বিজয় জানিয়েছেন, এখন তাঁরাও লকডাউনের পক্ষে রায় দিয়েছেন। আপাতত মহারাষ্ট্রের ত্রাণ ও পুনর্বাসন দফতর দিল্লির লকডাউন পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছে বলে জানিয়েছেন বিজয়। তিনি বলেন, ‘‘দিল্লিতে লকডাউন বজায় রেখে কী ভাবে রেল এবং জরুরী পরিষেবা চালু রাখা হয়েছে তা বিস্তারিত জেনে তারপরেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে লকডাউনের ব্যাপারে।’’
এদিকে ভারতের উত্তর প্রদেশেও বর্তমানে করোনার দৈনিক সংক্রমণ ৩০ হাজারের বেশী। ফলে রাজ্যের হাইকোর্ট ৫ টি শহরকে লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছেন।
উত্তর প্রদেশের রাজধানী লখনউ থেকে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছেন যে,রাজ্যটিতে বর্তমানে করোনার দৈনিক সংক্রমণ ৩০,০০০ হাজারের উপরে। তাই রাজ্যের এমন পরিস্থিতিতে উত্তরপ্রদেশের ৫ টি শহরে লকডাউনের নির্দেশ দিল এলাহাবাদ হাইকোর্ট। লখনউ, প্রয়াগরাজ, বারাণসী, কানপুর এবং গোরক্ষপুর— এই ৫ টি শহরে আগামী ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় এই মুহূর্তে কার্যত ধুঁকছে উত্তরপ্রদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা। হাসপাতালে শয্যা পিছু ২০-৩০ জন সারি দিয়ে রয়েছেন, এমন দৃশ্যও উঠে এসেছে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে। এই পরিস্থিতিতের জন্য সরাসরি যোগী আদিত্যনাথের সরকারকেই দোষারোপ করছে আদালত। বলা হয়, ‘‘রাজ্যের প্রশাসনিক ক্ষমতা যাঁদের হাতে, স্বাস্থ্যক্ষেত্রে এই বিপর্যয়ের দায় তাঁদেরই।’’
করোনায় স্থবির হয়ে পড়ছে ভারতের অর্থনীতির চাকা। করোনার প্রকোপ সামাল দিতে গত এক বৎসরে লকডাউন ও নানান বিধিনিষেধের ফলে দেশের অর্থনীতিতে সঙ্কট নেমে এসেছে। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা যায়, কমপক্ষে ১২ কোটি মানুষ লকডাউনে কাজ হারিয়েছেন।
সোমবার ১৯ শে এপ্রিল ভারতে একদিনেই করোনায় সংক্রমিত সনাক্ত হয়েছেন ২ লক্ষ ৫৬ হাজার ৯৪৭ জন এবং একদিন মৃত্যুবরণ করেছেন ১,৭৫৭ জন।
ভারতে এই পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটি ৫৩ লক্ষ ১৪ হাজার ৭১৪ জন এবং এই পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছেন মোট ১ লক্ষ ৮০ হাজার ৫৫০ জন । করোনার থেকে ভারতে এই পর্যন্ত আরোগ্য লাভ করেছেন মোট ১ কোটি ৩১ লক্ষ ৩ হাজার ২২০ জন । ভারতে সোমবার পর্যন্ত করোনার সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ২০ লক্ষ ৩০ হাজার ৯৪৪ জন মানুষ। বর্তমানে করোনায় আক্রান্ত হয়ে আইসিইউ এবং ক্রিটিক্যাল অবস্থায় আছেন ৮ হাজার ৯৪৪ জন।
কবির আহমেদ /ইবি টাইমস