আগামী ২১ এপ্রিল মধ্যরাত থেকে ২৮ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত বর্ধিত করা হলো
অন লাইন ডেস্কঃ দেশের চলমান লকডাউন আরো এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে। সোমবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সচিবদের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশের সকল প্রধান সংবাদ মাধ্যম।
আজ দুপুরে সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে এ কথা জানিয়েছেন প্রধান তথ্য কর্মকর্তা সুরথ কুমার সরকার। তিনি বলেন, ২২ থেকে ২৮ এপ্রিল এই লকডাউন কার্যকর থাকবে। জানান, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ১২ এপ্রিল জারি করা প্রজ্ঞাপনের ১৩ বিধিনিষেধ এই এক সপ্তাহের জন্যও কার্যকর থাকবে।
এর আগে, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে সরকার সারাদেশে আরও এক সপ্তাহ ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ বাড়ানোর সক্রিয় চিন্তাভাবনা করছে। তিনি বলেন, জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে সরকার ঈদের আগে লকডাউন শিথিলেরও চিন্তা ভাবনা করছে।
জাতীয় সংবাদ মাধ্যমে বলা হয়েছে,দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চলমান লকডউনের মেয়াদ আরও এক সপ্তাহ বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এর ফলে লকডাউনের বিধি-নিষেধের মেয়াদ বাড়ল আগামী ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আগের নির্দেশনার ধারাবাহিকতায় আন্তর্জাতিক বিশেষ ফ্লাইট চলাচল, ব্যাংকিং কার্যক্রম অব্যাহত রাখাসহ আগের সব বিধিনিষেধের আরোপের সময়সীমা আগামী ২১ এপ্রিল মধ্যরাত থেকে ২৮ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত বর্ধিত করা হলো।
এর আগে গত রবিবার ১৮ এপ্রিল রাতে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির এক ভার্চ্যুয়াল সভায় চলমান কঠোর লকডাউন আরও এক সপ্তাহ বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়। জাতীয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লার সভাপতিত্বে কমিটির ওই সভায় সারাদেশে করোনার উচ্চ সংক্রমণ ও ক্রমবর্ধমান মৃত্যুতে উদ্বেগ জানানো হয়। একই সঙ্গে চলমান এক সপ্তাহের লকডাউন শেষ হওয়ার আগে সংক্রমণের হার বিবেচনা করে আবার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়ার পরামর্শ দেয় কমিটি।
গত বছরের আট মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী সনাক্তের তথ্য জানায় সরকার। এর পর করোনায় প্রথম মৃত্যু হয় ১৮ মার্চ। এ অবস্থায় সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার গত বছরের ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিল। কয়েক দফায় বাড়িয়ে টানা ৬৬ দিন সাধারণ ছুটি ছিল। এক পর্যায়ে করোনার সংক্রমণ কমেও গিয়েছিল। তবে এ বছরের মার্চ থেকে করোনার সংক্রমণ আবারও বাড়তে থাকে।
এমন পরিস্থিতিতে করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার গত পাঁচ এপ্রিল থেকে প্রথমে সাত দিনের জন্য গণপরিবহন চলাচলসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ‘কঠোর বিধিনিষেধ’ জারি করেছিল। পরে তা আরও দুদিন বাড়ানো হয়। এতেও পরিস্থিতির অগ্রগতি না আসায় গত ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত আরও ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ শুরু হয়।
বর্তমানে লকডাউনে সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। তবে বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থলবন্দর এবং এ-সংক্রান্ত অফিসগুলো এই নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবে। প্রথম ব্যাংক বন্ধের ঘোষণা দিলেও পরে তা আবার খোলার সিদ্ধান্ত হয়। আর শিল্পকারখানাগুলো নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু আছে।
সর্বাত্মক লকডাউনের প্রথম দিন ৯৬ জনের রেকর্ড মৃত্যুর খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর পর থেকে এ সংখ্যা লাফিয়ে বাড়তে থাকে। গত টানা দিন ধরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী প্রতিদিন শতাধিক মানুষের মৃত্যুর খবর জানা গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী আজ দেশে করোনায় নতুন করে সংক্রমিত সনাক্ত হয়েছেন ৪,৫৫৯ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৯১ জন। এই পর্যন্ত দেশে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৭,২৭,৭৮০ জন এবং এই পর্যন্ত মোট মৃত্যুবরণ করেছেন ১০,৫৮৮ জন। করোনার থেকে এই পর্যন্ত আরোগ্য লাভ করেছেন ৬,২৮,১১১ জন। দেশে বর্তমানে করোনার সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৮৯,০৮১ জন।
কবির আহমেদ /ইবি টাইমস