অন লাইন ডেস্কঃ ঢাকাই চলচ্চিত্রের সোনালি দিনের চিত্রনায়ক ওয়াসিম আর নেই। শনিবার ১৭ ই এপ্রিল রাত ১২ টা ৩০ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বৎসর।
বরেণ্য এই অভিনেতার মৃতুর খবরটি জাতীয় সংবাদ মাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান। তিনি বলেন, ‘শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গতকাল রাজধানীর শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার দিবাগত রাতে ওয়াসিমের মৃত্যু হয়।
অ্যাকশন, বিশেষ করে ফোক-ফ্যান্টাসি ঘরনার সিনেমার এক নম্বর এই নায়ক গত কয়েকদিন ধরে বাসায় শয্যাশয়ী ছিলেন। পরিবার থেকে জানানো হয়েছিল তার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। কিন্তু করোনা প্রকোপের কারণে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ, উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নিয়ে যেতে পারছিলেন না। ব্রেন, নার্ভ ও হার্টের সমস্যায় ভুগছিলেন বরেণ্য অভিনেতা ওয়াসিম। অসুস্থ হওয়ার পর তাকে রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে বাসায় নিয়ে যেতে বলেন। কারণ, দেশে করোনার যে পরিস্থিতি তাতে হাসপাতালে রাখা নিরাপদ নয়।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান সংবাদ মাধ্যমকে আরও জানান যে,ওয়াসিম ভাইকে রাতেই গোসল করানো হয়েছে। গোসলের পর তার মরদেহ ফ্রিজিং গাড়িতে রাখা হয়েছে। রবিবার ১৮ ই এপ্রিল জোহর নামাজের পরে গুলশান আজাদ মসজিদে তার প্রথম নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর বনানী কবরস্থানে দ্বিতীয় জানাযা শেষে সেখানেই দাফন করা হবে।
কালজয়ী এই অভিনেতা ১৯৫০ সালের ২৩ মার্চ চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলার আমিরাবাদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পারিবারিক নাম মেজবাহ উদ্দীন আহমেদ। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা ইতিহাস বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। মূলত ওয়াসিমের নেশা ছিল বডি বিল্ডিংয়ে। ১৯৬৪ সালে তিনি বিল্ডিংয়ের জন্য ‘মিস্টার ইস্ট পাকিস্তান’ খেতাব অর্জন করেছিলেন।
১৯৭২ সালে ‘ছন্দ হারিয়ে গেল’ সিনেমায় সহকারী পরিচালক হিসেবে ঢাকাই চলচ্চিত্রে ওয়াসিমের অভিষেক হয়। নায়ক হিসেবে তার যাত্রা শুরু মহসিন পরিচালিত ‘রাতের পর দিন’ সিনেমার মাধ্যমে। দিন যতই যেতে থাকে ওয়াসিমের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী হয়। বাণিজ্যিক ঘরনার সিনেমার অপরিহার্য নায়ক হয়ে ওঠেন তিনি। শাবানা, ববিতা, কবরী, অলিভিয়া, সুচরিতা, অঞ্জু ঘোষ, অঞ্জনা, নূতন-ঐ সময়ের এসব অভিনেত্রীর সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেন তিনি।
ওয়াসিম অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমা হলো—‘রাতের পর দিন’, ‘দোস্ত দুশমন’, ‘দি রেইন’, ‘রাজদুলালী’, ‘বাহাদুর, ‘মানসী’, ‘সওদাগর’, ‘নরম গরম’, ‘বেদ্বীন’, ‘ঈমান’, ‘লাল মেম সাহেব’ প্রভৃতি। ‘বেদ্বীন’, ‘ঈমান’, ‘মানসী’ সিনেমায় অভিনয় করে ব্যাপক প্রশংসিত হন তিনি। তিনি সর্বমোট ১৫২ টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন বলে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন বোর্ডের একটি সূত্র থেকে জানা গেছে।
ব্যক্তিগত জীবনে নায়ক ওয়াসিম গত দুই দশকে বেশ শোকের মধ্যেই ছিলেন। ২০০৩ সালে ওয়াসিমের স্ত্রী মৃত্যুবরণ করেন। স্ত্রীর মৃত্যুর ৩ বৎসর পর ২০০৬ সালে তার মেয়ে বুশরা আহমেদ এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। ওয়াসিমের একমাত্র ছেলে দেওয়ান ফারদুন গ্রেট ইন এর সম্মানিত সোসাইটির ব্যারিস্টার সদস্য এবং ২০১৩ সালে বার অফ ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে তাকে ডাকা হয়েছিল। বর্তমানে তিনি বৃটেনে আইনী পেশায় অনুশীলনে রয়েছেন।
কবির আহমেদ /ইবি টাইমস