ভোলায় বাল্যবিয়ে বাড়ছে আশংকাজনক হারে

ভোলা প্রতিনিধিঃ ভোলায় ঠেকানো যাচ্ছে না বাল্যবিয়ে। দিন দিন আশংকা জনক হারে তা বাড়ছে। স্থানীয় একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার এক গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমানে ভোলায় এই হার ৬০ শতাংশের বেশি। এ জন্য সচেতনতার অভাব, নারীর নিরাপত্তার অভাব এবং অভিভাবকের অর্থিক অস্বচ্ছলতার পাশাপাশি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক ভুয়া জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রদানকে বিশেষভাবে দায়ী করা হয়েছে।

উন্নয়ন সংস্থা কোস্ট ফাউন্ডেশন আয়োজিত “শিশুর বিয়ে প্রতিরোধে করণীয়” শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সেমিনারে গবেষণা পত্রটি উপস্থাপন করেন কোস্ট ফাউন্ডেশনের যুগ্ম পরিচালক ইকবাল উদ্দিন। সেমিনারের প্রধান অতিথি ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে নারী শিক্ষার প্রতি অধিক জোর দিয়ে বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অপুষ্ট ও প্রতিবন্ধী শিশুর জন্ম, অধিকার বঞ্চিত করাসহ নানা ধরণের ক্ষতির সম্মুখিন হতে হয় একজন বাল্যবিয়ের শিকার মেয়েটিকে। অন্যদিকে একজন শিক্ষিত মা কখনোই তার সন্তানকে অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে দিবেন না। সেজন্য নারী শিক্ষার হার বৃদ্ধি, বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে অভিভাবকদের সচেতন করার কোন বিকল্প নেই। তাছাড়া উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বারদের সক্রিয় ভূমিকা রাখা, স্থানীয় প্রশাসনকে কঠোর হওয়া, ভূয়া জন্ম নিবন্ধন বন্ধ করা, স্কুলগুলোর ভূমিকা রাখা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটিগুলোকে সক্রিয় করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

কোস্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন লালমোহন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ গিয়াস উদ্দিন, তজুমদ্দিন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন, তজুমুদ্দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পল্লব কুমার হাজরা, লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল নোমান, লালমোহন উপজেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: রাসেলুর রহমান, ইউনিসেফ বরিশাল বিভাগের ফিল্ড অফিস প্রধান এ এইচ তৌফিক আহমেদ, লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম মিয়া, ফরাসগঞ্জের চেয়ারম্যান মো. মুরাদ হোসেন, রমাগঞ্জের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব গোলাম মোস্তফা, শম্ভুপুরের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান প্রমূখ।

সেমিনারে বক্তারা বাল্যবিয়ের অন্যান্য কারণগুলোর মধ্যে কন্যা সন্তানকে কম গুরুত্ব দেয়া, শিশু সুরক্ষা হটলাইনের ব্যবহার না করা, আইন শৃংখলা বাহিনী ও স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের সক্রিয় ভূমিকা না থাকার কথা উল্লেখ করেন। এছাড়া চলমান মহামারী কভিড ১৯ এর কারণে স্কুল থেকে ঝরে পড়াটাও বাল্যবিয়ের হারকে বাড়িয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এদিকে গবেষণাপত্রে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সুপারিশ মালায় স্থানীয় প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদকে সক্রিয় করা, গ্রাম পর্যায়ে কমিটি গঠন, নারীর নিরাপত্তা বৃদ্ধি, নারী শিশুকে উপবৃত্তির আওতায় আনা, ভূয়া জন্ম নিবন্ধন বন্ধ করা, রেজিস্টার্ড কাজী ছাড়া বিয়ে পড়ানো বেআইনী মর্মে প্রচারণা চালানোর উপর জোর দেয়া হয়েছে।

সাব্বির আলম বাবু/ইবি টাইমস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »