রাজধানী ভিয়েনা বর্তমানে অস্ট্রিয়ার করোনার হটস্পট
ইউরোপ ডেস্কঃ অস্ট্রিয়ার করোনা কমিশন তাদের নিয়মিত সাপ্তাহিক বৈঠকে অস্ট্রিয়ার ৯ টি রাজ্যকেই অব্যাহত করোনার ভাইরাসের সংক্রমণের অতি ঝুঁকিপূর্ণ লাল জোনেই রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অস্ট্রিয়ার ৯ টি রাজ্যের মধ্যে পূর্বাঞ্চলের ৩ টি রাজ্যে বর্তমানে ১৮ ই এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন চলছে। বাকী ৬ টি রাজ্যে লকডাউন মুক্ত হলেও তাদের কোন কোন জেলা বা অঞ্চলকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।
রাজধানী ভিয়েনায় ইস্টারের ছুটির সময় দৈনিক সংক্রমণ হাজার থেকে অর্ধেক নেমে আসলেও গত দুইদিন যাবৎ পুনরায় পূর্বের অবস্থায় ফিরে এসেছে অর্থাৎ করোনার দৈনিক সংক্রমণ হাজারের উপরে। ভিয়েনায় বর্তমানে প্রতি ১,০০,০০০(এক লাখ) জনপদে করোনার সংক্রমণ ৩১০.৬ জন। অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে ভিয়েনার করোনায় আক্রান্তদের শতকরা ৫০% শতাংশই উপসর্গবিহীন করোনা ভাইরাসের দ্বারা সংক্রমিত।
এদিকে আজ ভিয়েনা স্বাস্থ্য প্রশাসনের সূত্র থেকে সংবাদ সংস্থা এপিএ জানিয়েছেন যে,ভিয়েনায় এই সপ্তাহে করোনার ভ্যাকসিন রেজিস্ট্রেশন প্রায় ১,০৫,০০০(এক লাখ পাচঁ হাজার) খালি আছে।
তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে,যারা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ রোগী,৬৫ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তি,গর্ভবতী মহিলাদের জন্য যোগাযোগের ব্যক্তি,এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা তাদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করতে পারেন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে।
আজ বৃহস্পতিবার ভিয়েনা সিটি কাউন্সিলর ফর হেলথ পিটার হ্যাকারের মুখপাত্র একথা জানান। তিনি আরও বলেন, প্রাক-নিবন্ধিত ব্যক্তিদের ইমেল বা এসএমএসের মাধ্যমে নতুন টিকা বা ভ্যাকসিন দেওয়ার কোটা সম্পর্কে অবহিত করতে হবে। এখন নিবন্ধন করলে তা আগামী সোমবার ১২ ই এপ্রিল থেকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেওয়া হবে।
সম্পূর্ণ লকডাউনের মধ্যেও গতকাল এবং আজ রাজধানী ভিয়েনার করোনার দৈনিক সংক্রমণ হাজারের উপরে উঠায় অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন।তাহলে লকডাউন কি অকার্যকর হয়েছে।
ভিয়েনায় গত ১লা এপ্রিল থেকে লকডাউন কার্যকর রয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দোকান ব্যতীত বাকী সব কিছুই বন্ধ রয়েছে। তারপরও এতো বেশী সংক্রমণ সনাক্ত হওয়ায় চিন্তিত হয়ে পড়েছেন নীতিনির্ধারকরা।
রাজধানী ভিয়েনায় এই পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত সনাক্ত হয়েছেন প্রায় ১ লক্ষ ২২ হাজার মানুষ এবং মৃত্যুবরণ করেছেন প্রায় ২ হাজার মানুষ।
অস্ট্রিয়ার পূর্বাঞ্চলের তিনটি রাজ্যে লকডাউনের মধ্যেও প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিন রাজ্য প্রশাসন। তবে শুধুমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীর ক্লাশ আগামী সোমবার ১২ই এপ্রিল থেকে একবেলা অর্থাৎ সকাল ৮ টা থেকে দুপুর ১২:৫৫ মিনিট পর্যন্ত চলবে। ১ম থেকে ৩য় শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাশ লকডাউন পর্যন্ত অব্যাহত চলবে। অর্থাৎ স্কুল অব্যাহত বন্ধ থাকবে। তবে যে সমস্ত অভিভাবক দুইজনই কর্মজীবি তাদের সন্তানদের ( প্রথম,দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণী) সোমবার ১২ ই এপ্রিল থেকে স্কুলে দিতে পারবেন। তবে অবশ্যই আগামীকাল শুক্রবার ৯ ই এপ্রিল স্কুল কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে স্কুলের নির্ধারিত ফরম পূরণ করে।অস্ট্রিয়ার প্রাথমিক বিদ্যালয় ৪র্থ শ্রেণী পর্যন্ত। তাই জুলাই -আগস্টের গ্রীষ্মের ছুটির পূর্বে তাদের শেষ বাকী ক্লাশের পাঠদান সম্পন্ন করার জন্যই এই রকম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
আজ অস্ট্রিয়ায় নতুন করে করোনায় সংক্রমিত সনাক্ত হয়েছেন ২,৯০৬ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৪০ জন।
রাজধানী ভিয়েনায় আজ নতুন কর করোনায় সংক্রমিত সনাক্ত হয়েছেন ১,০২৩ জন। অন্যান্য রাজ্যের মধ্যে OÖ রাজ্যে ৫০৪ জন,NÖ রাজ্যে ৩৬৫ জন,Steiermark রাজ্যে ৩৪১ জন,Tirol রাজ্যে ১৯৭ জন,Kärnten রাজ্যে ১৬৪ জন,Salzburg রাজ্যে ১২১ জন,Vorarlberg রাজ্যে ৯৮ জন এবং Burgenland রাজ্যে ৯৩ জন নতুন করে সংক্রমিত সনাক্ত হয়েছেন।
অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে,আজ অস্ট্রিয়ায় করোনার ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়েছে ৫৮ হাজার ৬৬৪ ডোজ এবং এই পর্যন্ত করোনার মোট ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়েছে ১৮ লক্ষ ৭২ হাজার ৫৩১ ডোজ।
অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫,৬৮,৯১৪ জন এবং এই পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছেন মোট ৯,৫৮৬ জন। করোনার থেকে এই পর্যন্ত আরোগ্য লাভ করেছেন মোট ৫,২৫,৬৮২ জন। বর্তমানে করোনার সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৩৩,৬৪৬ জন। এর মধ্যে আইসিইউতে আছেন ৫৭৮ জন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ২,৪১৬ জন। বাকীরা নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন।
কবির আহমেদ/ ইবি টাইমস