যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে একই পরিবারের ৬ জন বাংলাদেশীর মরদেহ উদ্ধার

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বাংলা অনলাইন পোর্টাল জানিয়েছেন যে,টেক্সাসে একই পরিবারের ৬ বাংলাদেশীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া সুইসাইড নোট থেকে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, কিশোর বয়সী পরিবারের দুই ভাই পরিবারের চার সদস্যকে হত্যার পর নিজেরাও আত্মহত্যা করেছে।

বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার ৬ই এপ্রিল রাত ১২টার দিকে সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েট প্রেসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয় ।

মঙ্গলবার মধ্যরাতের দিকে টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের শহরতলি ডালাস এলাকার এক বাড়ি থেকে এসব মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জানায়, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে দুই ভাই পরিবারের চার সদস্যকে হত্যা করেছে। পরে নিজেরাও আত্মহত্যা করে।

পুলিশ এখনও মৃতদের পরিচয় প্রকাশ করেনি। তবে তারা জানায়, মৃতব্যক্তিরা হলো কিশোর বয়সী দুই ভাই, এক বোন, বাবা, মা এবং দাদি। সবচেয়ে কম বয়সী নিহতের বয়স ১৯। পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণ করছে, সাপ্তাহিক ছুটির দিন রবিবারে এ হত্যাকাণ্ড ও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।

জানা গেছে, নিহতরা হলেন বাংলাদেশের বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেল ২৪ এর চিফ ক্যামেরাপারসন হাসান হাফিজুর রহমান রিপনের মা, বোন, বোনের স্বামী, দুই ভাগনে ও এক ভাগনি। রিপনের বোন জামাইয়ের নাম তাওহীদ। কী কারণে তাওহীদের দুই সন্তান আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সে বিষয়ে কোনো তথ্য জানা যায়নি। রিপনের মায়ের বাড়ি পাবনা শহরে। রিপনের মা, বোন আর বোন জামাই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পেয়েছেন। অন্যরা জন্মসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।

এদিকে স্থানীয় বাংলাদেশী কমিউনিটির লোকজন নিহতের নাম ও বয়স বিভিন্ন বাংলা অনলাইন পোর্টালে প্রকাশ করেছেন। নিহতরা হলেন, বাবা: তৌহিদুল ইসলাম(৫৪): মা: আইরিন ইসলাম(৫৬): দাদী: আলতাফুন্নেছা (৭৭): ভাই: তানভির তৌহিদ(২১) আর জমজ ভাই-বোন(১৯) ফারবিন তৌহিদ ও ফারহান তৌহিদ।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন টেলিভিশন নেটওয়ার্ক জানিয়েছেন যে,পুলিশ অফিসাররা সোমবার সকালে বাড়ি থেকে ৬ জনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে। পুলিশ সুইসাইড নোট থেকে প্রাথমিক তদন্তে এটি হতাশা থেকে পরিবারের দুই কিশোর ভাইয়ের অন্য সদস্যদের হত্যা করে নিজেদের আত্মহত্যার ঘটনা বলে জানিয়েছেন।

ডালাস পুলিশের মুখপাত্র সার্জেন্ট জন ফেলটি সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন যে,তার পুলিশ জীবনে এতবড় পারিবারিক ট্র্যাজেডী তিনি কখনোই আর দেখেন নি। তিনি জানান মাস্টার মাইন্ড কিশোর ফারহান তৌহিদ তার ইনস্টাগ্রাম-এ একটি দীর্ঘ সুইসাইড নোট লিখে গেছে। তাতে সে লিখেছে,”হ্যালো সবাই,আমি নিজেকে এবং আমার পরিবারকে হত্যা করেছি”। সে কিভাবে নবম শ্রেণী থেকে হতাশার বিরুদ্ধে লড়াই করছে, সে সম্পর্কে সে কথা বলতে চায়।

সুইসাইড নোটে ফারহান তৌহিদ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারীতে তার বড় ভাই – যে নিজেও হতাশার বিরুদ্ধেও লড়াই করছিল -সে তাকে একটি প্রস্তাব দিয়েছিল। সে লিখেছে যে, তার ভাই বলেছিল, “আমরা যদি এক বছরে সবকিছু ঠিকঠাক করতে না পারি তবে আমরা নিজেরা এবং পরিবারকে হত্যা করব।”

চিঠিতে দুই ভাইয়ের হত্যা ও আত্মহত্যার পরিকল্পনার বিশদ বর্ণনা রয়েছে। সে লিখেছে,“পরিকল্পনাটি সহজ ছিল।  আমরা দুইটি বন্দুক সংগ্রহ করি। আমি একটি বন্দুক দিয়ে  আমার বোন এবং দাদীকে গুলি করে হত্যা করি,আর অন্যদিকে আমার ভাই আমাদের পিতামাতাকে অন্য বন্দুক দিয়ে হত্যা করে। তাদেরকে হত্যার পর আমরা বাড়ির বাহিরে যাই”। পুলিশ ধারণা করছে পরে তারা তাদের বন্দুক দিয়ে নিজেরাই আত্মহত্যা করে।

ফারহান তৌহিদ কেন পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বলে অভিযোগ করা হয়েছে, তার হতাশা বাদে আর কোনও ব্যাখ্যা উল্লেখ করে নি সে তার সুইসাইড নোটে। সে আরও লিখেছে, “আমি যদি কেবল নিজেকে হত্যা করি তবে তারা হতভাগা হবে।” “আমি আমার পরিবারকে ভালবাসি. আমি সত্যিই করি এবং ঠিক এই কারণেই আমি তাদের হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” ডালাসের অ্যালেন পুলিশ বলেছে,যে পরিবারের কোন সদস্য তাদের পরিকল্পনার কোনও ইঙ্গিত পাননি বলে মনে করা হচ্ছে।

ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর বন্ধু বান্ধব শুভাকান্খী বাংলাদেশীরা ছুটে এসে বিভিন্ন টেলিভিশন নেটওয়ার্কের সাথে সাক্ষাতকারে ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেন। অনেক প্রতিবেশীও কোন গুলির আওয়াজ শুনতে পান নি বলে পুলিশকে জানিয়েছেন। এখানে প্রতিটি বাড়ি থেকে অন্যটি বেশ কিছুটা দূরে অবস্থিত।

কবির আহমেদ /ইবি টাইমস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »