ইউরোপ ডেস্কঃ আগামীকাল বৃহস্পতিবার ১ লা এপ্রিল থেকে অস্ট্রিয়ার ৩ টি রাজ্য ভিয়েনা,লোয়ার অস্ট্রিয়া এবং বুর্গেনল্যান্ডে একযোগে নতুন করে লকডাউন শুরু হচ্ছে। প্রথমে তিনটি রাজ্যের গভর্নর ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী রুডল্ফ আনস্কোবারের সাথে বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত হয় যে, ইস্টারের ছুটির সময় ১লা এপ্রিল থেকে ৬ই এপ্রিল পর্যন্ত ২৪ ঘন্টার কারফিউ সহ সম্পূর্ণ লকডাউন থাকবে।পরবর্তীতে ভিয়েনার মেয়র ও রাজ্য গভর্নর মিখাইল লুডভিগ গত রবিবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন,ভিয়েনায় করোনার সংক্রমণের অব্যাহত বৃদ্ধির জন্য ভিয়েনার লকডাউনটি ১১ই এপ্রিল পর্যন্ত বর্ধিতের ঘোষণা দেন। অবশ্য অন্য ২ রাজ্যের গভর্নর ৬ই পর্যন্তই লকডাউন রাখার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন।
এদিকে গতকাল অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী রুডল্ফ আনস্কোবার এক টুইট বার্তায় জানান,বর্তমানে অস্ট্রিয়ার পূর্বাঞ্চলের এই তিন রাজ্য ছাড়াও অন্যান্য রাজ্যেও করোনার সংক্রমণের বিস্তার অব্যাহত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই সরকারের নীতিনির্ধারকরা পূর্বাঞ্চলের এই লকডাউনের সাথে সমগ্র দেশে পুনরায় আরও একবার লকডাউন দিয়ে করোনার এই তৃতীয় প্রাদুর্ভাব রোধের চেষ্টার কথা জানান। স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও জানান,সে অনুসারে আগামী সোমবার ৫ই এপ্রিল সরকার পুনরায় দেশের সংক্রমণ রোগ বিশেষজ্ঞ,দেশের ৯ টি রাজ্যের গভর্নর এবং জাতীয় সংসদের বিরোধীদলের প্রধানের সাথে দেশের করোনা পরিস্থিতির সার্বিক অবস্থার পর্যালোচনা ও পরবর্তী করণীয় সিদ্ধান্ত নিবেন।
পূর্বাঞ্চলের এই সম্পূর্ণ লকডাউন সফল করতে প্রতিটি রাজ্যের স্থানীয় প্রশাসন ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন।।এই লকডাউনের সময়ের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি,চুল কাটার সেলুনের মতো দেহ-আলিঙ্গন পরিষেবা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানও ১ লা এপ্রিল বৃহস্পতিবার থেকে ১১ ই পর্যন্ত সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে।
লকডাউন চলাকালীন সময়ে এই তিন রাজ্যে আগামীকাল থেকে শুধুমাত্র একজন মানুষ সাথে আরেকজন মানুষের সাক্ষাৎ বা মিলিত হওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাকে হোম অফিস যতটুকু পারা যায় বাড়াতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এফএফপি২ মাস্ক পরিধানের বাধ্যবাধকতা বাড়ানো হয়েছে। এখন থেকে এই ৩ রাজ্যে বন্ধ কক্ষগুলিতে একাধিক মানুষ থাকলে অবশ্যই সকলকে বাধ্যতামূলক মাস্ক পড়তে হবে। এই সময়ের মধ্যে এই তিন রাজ্যের চিড়িয়াখানা,যাদুঘর এবং প্রদর্শনী হলগুলিও বন্ধ থাকবে।
পূর্ব অস্ট্রিয়ার এই তিন রাজ্যে বাহির থেকে প্রবেশেও কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। অস্ট্রিয়ার প্রতিবেশী হাঙ্গেরি,চেক প্রজাতন্ত্র,স্লোভাকিয়া ও স্লোভেনিয়া থেকেও প্রতিদিন প্রচুর মানুষ এই তিন রাজ্যে আসেন কাজ করতে। বাহির থেকে এখন যারা আসবেন এই রাজ্যে তাদের সপ্তাহে দুইবার করোনা পরীক্ষার নেগেটিভ সার্টিফিকেট প্রদর্শন করতে হবে।
তাছাড়াও বিশেষত চেক প্রজাতন্ত্র, স্লোভাকিয়া এবং হাঙ্গেরির সীমান্তগুলিতে আরও কঠোর নিয়ন্ত্রণ পরিচালিত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।করোনা মহামারী শুরুর পর থেকে ভিয়েনা, লোয়ার অস্ট্রিয়া এবং বুর্গেনল্যান্ডের ৪,৫৬,০০০ জন শিক্ষার্থীর জন্য এখন এক বছরের মধ্যে চতুর্থবারের মত Distance Learning বা দূরবর্তী শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইস্টারের ছুটির পর এই তিন রাজ্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পুনরায় Distance Learning এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারপরে ছাত্র শিক্ষকদের বড় আকারের পিসিআর পরীক্ষার সম্পন্নের পর পুনরায় ক্লাস শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী হাইঞ্জ ফ্যাসমান।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী রুডল্ফ আনস্কোবার এর সাথে ভিয়েনা,লোয়ার অস্ট্রিয়া (NÖ) এবং বুর্গেনল্যান্ডের গভর্নররা ইস্টারের ছুটির দিনে কঠোর করোনার বিধিনিষেধ উপস্থাপন করেন।
করোনার তৃতীয় প্রাদুর্ভাবে ভিয়েনা, লোয়ার অস্ট্রিয়া এবং বুর্গেনল্যান্ডের হাসপাতালগুলি এবং বিশেষত নিবিড় যত্নশীল ইউনিটগুলির (আইসিইউ) এর উপর ক্রমবর্ধমান চাপের প্রেক্ষিতে করোনার বিধিনিষেধগুলি আরও কঠোর করা হয়েছে। ভিয়েনা, লোয়ার অস্ট্রিয়া এবং বুর্গেনল্যান্ডে আগামীকাল ১ লা এপ্রিল থেকে শুরু এই সম্পূর্ণ লকডাউনে পূর্বাঞ্চলের এই তিন রাজ্যে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দোকান, বাজার ও সুপারমার্কেট ব্যতীত অন্যান্য সকল দোকানপাট ওব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ থাকবে।
লকডাউনের সময়ের মধ্যে পূর্বাঞ্চলের এই ৩ রাজ্যে কারফিউ বা প্রস্তান নিষেধাজ্ঞা থাকবে ২৪ ঘন্টা অর্থাৎ যথারীতি পূর্বের মত ৪ টি বিশেষ কারণ ব্যতীত ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না। যে ৪ টি কারনে কারফিউ চলাকালীন সময়ে ঘর থেকে বের হওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে,সেগুলি হল : পেশাদারী কাজের জন্য ঘর থেকে বের হওয়া যাবে,অন্যকে সাহায্যের জন্যে,নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার জন্য সুপারমার্কেট বা বাজারে যাওয়া এবং মুক্ত বাতাসের জন্য ঘর থেকে বের হওয়া যাবে। অন্যথায়,ঘর থেকে বের হলে এবং পুলিশ কন্ট্রোলে পড়লে অর্থ জরিমানার সম্মুখীন হতে হবে।
অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনা রাজ্যকে চতুর্দিক থেকে পরিবষ্টিত রাজ্য Niederösterreich (NÖ) রাজ্য এবং তৎসংলগ্ন রাজ্য Burgenland এর সাথে ভিয়েনার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এই দুই রাজ্য থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩ লক্ষাধিক মানুষ ভিয়েনায় আসা যাওয়া করে থাকেন।ফলে এই তিনটি রাজ্যের সংক্রমণের বিস্তার কমাতে হলে তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার বিকল্প নাই।
দীর্ঘ আলাপ আলোচনার পর গত সপ্তাহে বুধবার সন্ধ্যায় এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিন গভর্নর ভিয়েনার মিখাইল লুডভিগ(SPÖ), NÖ রাজ্যের জোহানা মিকল-লাইটনার (ÖVP) এবং বুর্গেনল্যান্ডের হান্স পিটার ডসকোজিল (SPÖ) এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী রুডল্ফ আনস্কোবার (Greens) এই লকডাউন ও করোনার নতুন বিধিনিষেধের ঘোষণা দেন।
কবির আহমেদ /ইবি টাইমস