অস্ট্রিয়ার সীমান্তে পুনরায় কঠোর নিয়ন্ত্রণ শুরু

ইউরোপ ডেস্কঃ অস্ট্রিয়ায় করোনার নতুন সংক্রমণ পুনরায় বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং পূর্বাঞ্চলের ৩ টি রাজ্যে ১ লা এপ্রিল থেকে ৬ ই এপ্রিল পর্যন্ত সম্পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা করায় অস্ট্রিয়া তার পূর্বাঞ্চলের সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে।

ইস্টারের ছুটির শুরুতেই,অস্ট্রিয়া তার দেশে করোনার সংক্রমণ বিস্তার রোধে কঠোর নিয়ন্ত্রণের কথা জানিয়েছেন। পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তার জন্য অতিরিক্ত সেনা মোতায়েনও করা হয়েছে।এর ফলে কেহ এখন অস্ট্রিয়ায় প্রবেশ করলে কাস্টমস, সশস্ত্র বাহিনী এবং পুলিশের কঠোর চেকের সম্মুখীন হতে হবে।

অস্ট্রিয়ায় সাধারণত প্রতিবেশী দেশ হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া,চেক প্রজাতন্ত্র,স্লোভেনিয়া এবং সার্বিয়া সহ সমগ্র বলকান রাস্ট্রের প্রচুর শ্রমিক কাজ করে থাকেন। ক্রিসমাসের পর এই ইস্টারের ছুটিতেও হাজার হাজার মানুষ এক সপ্তাহের জন্য নিজ দেশে ছুটি কাটাতে যায়। বর্তমানে যেহেতু অস্ট্রিয়ায় করোনার তৃতীয় প্রাদুর্ভাব চলছে এবং সংক্রমণ বিস্তার কমাতে সরকার আপ্রাণ চেষ্টা করছে।

বর্তমানে অস্ট্রিয়ার পশ্চিমাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের রাজ্য সমূহে করোনার সংক্রমণের বিস্তার কিছুটা হ্রাস পেলেও অস্ট্রিয়ার পূর্বাঞ্চলের ৩ টি রাজ্য ভিয়েনা,লোয়ার অস্ট্রিয়া (NÖ) এবং বুর্গেনল্যান্ডে সংক্রমণের বিস্তার ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়েছে। এই তিন রাজ্যের গভর্নর এবং অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সাথে যৌথ বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে যে, ইস্টারের ছুটির সময় ১লা এপ্রিল থেকে ৬ ই এপ্রিল পর্যন্ত এই তিন রাজ্যে সম্পূর্ণ লকডাউন থাকবে। এই তিন রাজ্যে লকডাউন চলাকালীন সময়ে শুধুমাত্র নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের দোকান ব্যতীত অন্য সকল প্রকার দোকানপাট ও ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ থাকবে।

লকডাউন চলাকালীন এই সময়ের মধ্যে ২৪ ঘন্টার কারফিউ বা ঘর থেকে বের হওয়ার নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে। শুধুমাত্র ৪ টি কারন ব্যতীত ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না। যেমন,পেশাধারী কাজের জন্য, অন্যকে সাহায্য করার জন্য, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার জন্য এবং মুক্ত বাতাসের জন্য স্বল্প পরিসরে ঘর থেকে বের হওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে। উপরোক্ত ৪ টি কারন ছাড়া পুলিশ কাউকে বাহিরে পেলে জরিমানা করতে পারে। তাছাড়াও এই তিন রাজ্যে এখন থেকে বন্ধ অফিস রুমে বা প্রতিষ্ঠানে একের অধিক ব্যক্তি থাকলে এফএফপি২ মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

এদিকে জার্মানি প্রায় ৪ সপ্তাহ পর অস্ট্রিয়ার Tirol রাজ্যের সাথে তার সীমান্ত পুনরায় খুলে দিয়েছে।

উল্লেখ্য যে,অস্ট্রিয়ার জার্মানির সীমান্তবর্তী রাজ্য Tirol এ দক্ষিণ আফ্রিকার মিউটেশন ভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে জার্মানি এই রাজ্যের সাথে তার সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছিল।অস্ট্রিয়ার জার্মানির সাথে ব্যবসা- বাণিজ্যের জন্য এই সীমান্তটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

গত সপ্তাহে অস্ট্রিয়ার সরকার প্রধান চ্যান্সেলর (প্রধানমন্ত্রী) সেবাস্তিয়ান কুর্জ এই সীমান্তটি দ্রুত খুলে দেওয়ার জন্য  জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে আলোচনার জন্য কয়েকঘন্টার জন্য বার্লিন সফরে গিয়েছিলেন।

অস্ট্রিয়ান সংবাদ সংস্থা এপিএ জানিয়েছেন অস্ট্রিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের নতুন জারিকৃত এক ডিক্রি অনুসারে, স্কি পর্যটক যারা অস্ট্রিয়া যাচ্ছেন তাদের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয়েছে, যার অর্থ হোটেল, স্কি এবং পর্যটন অঞ্চল এবং সীমান্তের চৌকোণে ইতিমধ্যে চেক চলছে, যেমন নিকেলসডর্ফ (বুর্গেনল্যান্ড) এবং স্পিলফিল্ড (Steiermark) এবং কারিন্থিয়ায় (Kärnten) এর সীমান্ত অতিরিক্ত চেক পয়েন্ট স্থাপন করা হয়েছে।

Steiermark রাজ্য পুলিশের একজন মুখপাত্র অস্ট্রিয়ার জাতীয় সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন,সীমান্তে ইস্টারের ছুটিকারীদের “ভিড় এখনও সীমিত”। তবে সীমান্তে অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছুটা ট্র্যাফিক জ্যামের সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি যারা অস্ট্রিয়ায় প্রবেশ করছেন,তাদের উদ্দেশ্যে বলেন,আপনারা অস্ট্রিয়ায় প্রবেশের পূর্বে অনুগ্রহ পূর্বক অনলাইনে নিজেদের ডাটা নিবন্ধন করুন। অনলাইনে ডাটা নিবন্ধন করলে এটি আমাদের উভয়ের প্রচুর পরিমাণে সময় সাশ্রয় করতে পারে।

এদিকে Kärnten রাজ্যের একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন যে,”অনেকে স্লোভেনিয়া যান বেড়াতে এবং অস্ট্রিয়ায় প্রবেশ করে যখন কোয়ারেন্টাইনের কথা শুনতে পান তখন অবাক হয়ে যান। কাজেই বর্তমানে করোনার এই তৃতীয় প্রাদুর্ভাবের সময় অস্ট্রিয়া থেকে যারা বাহিরে যাবেন বা প্রবেশ করবেন তাদের যথাযথ নিয়ম কানুন জেনে নেওয়া অবশ্যই কর্তব্য।

কবির আহমেদ /ইবি টাইমস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »