গরমে শান্তির পরশ দেয়া “তালপাখা” ক্রমশই হারিয়ে যাচ্ছে

সাব্বির আলম বাবু,ভোলা : প্রচন্ড গরমে দেহে-মনে শান্তির পরশ বোলানো বাংলার ঐতিহ্যবাহী তালপাখা আধুনিক প্রযুক্তির প্রভাবে এখন ভোলা সহ উপকূলীয় এলাকা তথা সারাদেশ থেকে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। প্রায়ই তালগাছের পাতায় তৈরী পাখায় সযত্নে লেখা “তালের পাখা প্রানের সখা শীতকালে হয় না দেখা গরমকালে হয় যে দেখা।”

আবহমান কালের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যময় ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে তালের পাখা। চৈত্র-বৈশাখ মাসে তীব্র তাপদাহ শুরু হলেই স্বরন পরতো তালের পাখার। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে গরমকাল আসা মানেই হাতপাখার কদর বেড়ে যাওয়া। এটা যেন তাদের পরম বন্ধু।

 

বাংলাদেশের শ্রমিক শিল্পী আকবরের গাওয়া সেই বিখ্যাত রোমান্টিক গান- “তোমার হাত পাখার বাতাসে প্রান জুড়িয়ে আসে আরো কিছু সময় তুমি থাকো আমার পাশে” গান পাগল শ্রোতারা আজো ভূলে যাননি। তবে ইদানিং প্লাষ্টিক ও বৈদ্যুতিক পাখা, এয়ার কন্ডিশনার ইত্যাদি আধুনিক সামগ্রীর বাজারে একচ্ছত্র আধিপত্যে তালপাখা ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। তবে যতই আধুনিক সাগ্রী সহজলভ্য হোক না কেনো তালপাখার শীতল পরশ আর কিছুতে পাওয়া যায় না।

তবে কাঁচামাল সংকট ও মুনাফা কম হওয়ায় এই পেশাও পাল্টে ফেলছেন তালপাখার কারগরেরা। যারা এখনও এ পেশায় আছেন তাদের অবস্থা ভালো নয়। কোনো রকমে টিকে থাকার জন্য প্রতিনিয়তই সংগ্রাম করছেন তারা। আবার কেউ কেউ বাংলার বিভিন্ন উৎসবে হাজার বছরের ঐতিহ্যকে সম্বল করে তৈরী করছেন তালের পাখা।

চরফ্যাশনের তালপাখা কারিগর বিনোদিনী রানী জানান, একটি তালের পাতায় দুইটি পাখা তৈরী হয়। পুরো একটি পাখা বানাতে ব্যয় হয় ১২/১৫ টাকা। সেগুলো বাজারে ফেরী করে বিক্রি করলে ১৮/২০ টাকা দাম পাওয়া যায়।

লালমোহনের আরেক হাতপাখা শিল্পী রাশিদা বেগম জানান, প্রথমে তালপাতা গাছ থেকে সংগ্রহ করে রোদ্রে শুকাতে হয়। এরপর পাতাকে পাখার মতো আকার দেয়া হয়। পরে তা সুতার সাহায্যে বাধাঁই করা হয়। এরপর হাতল ও পাখার বাড়তি অংশ কেটে ফেলে রং করলেই তা বিক্রির উপযুক্ত হয়।

জানা যায়, পাখা সেলাই করা থেকে যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করে গ্রামের গৃহবধুরা আর তা বাজারজাত করে পুরুষেরা । একজন কারিগর সারাদিন কাজ করে ৫০/৫৫টি পাখা তেরী করতে পারে। কিন্তু নানান প্রতিবন্ধকতায় অনেকে এ পেশা বদল করলেও বেশির ভাগ কারিগরদের দাবী বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী প্রশিক্ষন ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে টিকে থাকবে বাঙ্গালীর হাজার বছরের ঐতিহ্যময় তালের পাখা তীব্র গরমে শান্তির শীতল পরশ বুলাতে।

 সাব্বির আলম বাবু,ফিচার লেখক ও সাংবাদিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »