ভোলা প্রতিনিধি: ভোলার মিষ্টিতে মাত্রাতিরিক্ত কলিফার্ম ব্যাকটেরিয়ার দেখা মিলেছে। ভোলার ছানার মিষ্টির দীর্ঘদিনের গৌরব রয়েছে। জেলার চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন জেলায়ও এ মিষ্টি বিক্রি হচ্ছে। তবে সম্প্রতি একটি চক্র যশোর, সাতক্ষীরা ও বেনাপোল থেকে নিয়ে আসছে ভেজাল ছানা। খাঁটি বলে বাজারে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে এসব ছানা। মিষ্টি জাতীয় খাদ্য উৎপাদনকারীরাও বেশি লাভের আশায় অল্প দামে কিনে নিচ্ছে ভেজাল ছানা। সাম্প্রতিক সময়ে স্থানীয় প্রশাসন বেশ কয়েকজন ভেজাল ছানা বিক্রেতাকে আটক করে। তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ ভেজাল ছানাও জব্দ করা হয়।
এসব ছানার নমুনা পাঠানো হয় জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের ল্যাব টেস্টে। টেস্টের রিপোর্টে উঠে এসেছে ভয়ানক তথ্য। রিপোর্ট বলছে, মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া কলিফার্ম। প্রতি গ্রাম ছানায় এ ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি ১০ ইউনিটের নিচে থাকার কথা থাকলেও ভেজাল ছানায় এর পরিমাণ ছিল ১১০ ইউনিট, যা স্বাভাবিকের তুলনায় ১১ গুণ বেশি। এছাড়া প্রতি গ্রামে জীবাণু ও ছত্রাকের (ইস্ট অ্যান্ড মোল্ড) উপস্থিত ১০ ইউনিটের নিচে থাকার কথা থাকলেও রয়েছে ৬৭৫০ ইউনিট, যা স্বাভাবিকের তুলনায় ৬৭৫ গুণ বেশি। এসব ছানায় ফ্যাটের পরিমাণ ছিল নির্ধারিত মাত্রার অর্ধেকেরও কম। অন্যদিকে ভেজাল ছানায় মিলেছে অতিরিক্ত মাত্রার প্রিজারভেটিভের উপস্থিতিও, যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব ভেজাল ছানা একদিকে যেমন মিষ্টির মান কমিয়ে দিচ্ছে, অন্যদিকে এটি ভোক্তাদের বড় ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করছে।
ভোলা শহরের ঘোষপট্টি এলাকার খাঁটি দধি ভাণ্ডারের মালিক বাসুদেব ঘোষ। দীর্ঘদিন ধরে তিনি বিভিন্ন ধরনের খাবারের প্যাকেট, দধি, ঘি ও খোলা পাউডার দুধ বিক্রির আড়ালে যশোর সাতক্ষীরা থেকে নিম্নমানের ছানা নিয়ে এসে জেলার বিভিন্ন মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে সরবরাহ করছেন। বেশ কয়েকবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে ভেজাল ছানা জব্দ করা হয়। ভোলার ভেদুরিয়া লঞ্চঘাটে প্রায় ৪০০ কেজি ছানা আটক করে স্থানীয়রা প্রশাসনের হাতে তুলে দেয়। এরপর সেগুলোর নমুনা পরীক্ষার জন্য জেলার প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে পাঠানো হয়। এসব ছানায়ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর উপাদানের উপস্থিতি অতিমাত্রায় মিলেছে। তবে স্থানীয়রা বলছেন, বিভিন্ন সময় অভিযান চালালেও বাজারে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে ভেজাল ছানা। প্রশাসন অভিযানের পাশাপাশি স্থায়ীভাবে এসব ছানা বিক্রি বন্ধে উদ্যোগ না নিলে বাজারে খাঁটি ছানা মিলবেই না। এ ব্যাপারে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ইন্দ্রজিৎ কুমার মন্ডল বলেন, যশোর ও সাতক্ষীরা থেকে আমদানীকৃত ছানার নমুনা পরীক্ষায় প্রাথমিকভাবে যে তথ্য পাওয়া গেছে তাতে বোঝা যায় এ ছানাগুলো মানবদেহের জন্য এক কথায় হুমকিস্বরূপ।
শহরের ঘোষপট্টি এলাকার মিষ্টি ব্যবসায়ী মুসলিম মিষ্টি ঘরের আবুল কাসেম বলেন, আমার মতো অনেক ব্যবসায়ী রয়েছেন, যারা বিভিন্ন খামারিদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ করে সে দুধ থেকে ছানা বের করে তা দিয়ে মিষ্টি তৈরি করেন। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীরা কম দামে ভেজাল ছানা কিনে তা দিয়ে মিষ্টি তৈরি করছে। সেসব মিষ্টি বিক্রি করছে অত্যন্ত কম দামে। ফলে আমরা লোকসানে পড়ে যাচ্ছি।
ওয়েলকাম মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের মালিক বিশুদেব বলেন, আমরা খামারিদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ করে তা থেকে যে ছানা বের করি, তাতে এক কেজি ছানার দাম পড়ে ২৫০-৩০০ টাকা। অথচ যশোর ও সাতক্ষীরা থেকে যেসব ছানা আসে তা ভোলার বাজারে কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৫০ টাকা। জেলার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুজিত হাওলাদার বলেন, জব্দকৃত ভেজাল ছানার নমুনার প্রাথমিক রিপোর্টে ক্ষতিকর যেসব দিক পাওয়া গেছে, তা মানবদেহে কী পরিমাণ ক্ষতির কারণ হতে পারে পরবর্তী রিপোর্টে সে তথ্য জানা যাবে। সে আলোকেই অসাধু ছানা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সাব্বির আলম বাবু/ইবি টাইমস