পাওনা টাকা চাওয়ায় প্রবাসীর স্ত্রীর মামলা,বৃদ্ধ জেল কারাগারে

হবিগঞ্জে প্রতিনিধিঃ হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার দৌলতখান আবাদ গ্রামে পাওনা টাকা চাওয়ায় প্রবাসীর স্ত্রীর মামলায় বৃদ্ধ মোঃ আতর আলী (৬৫) জেলে রয়েছেন। সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা জানালো আতর আলীর পরিবারের লোকেরা।

তারা জানায়,একই এলাকার মৃত আব্দুর রউফের ছেলে সারাজ মিয়াকে (৩৫) আত্মীয়ের সুবাদে স্বাবলম্বী করার জন্য বিদেশ পাঠানোর প্রস্তুতি নেন আতর আলী। এর আগে সারাজকে তিনি বিয়েও করান। বিদেশ যাওয়ার আগে সারাজ তাদের বাড়িতেই বেশিরভাগ সময় অবস্থান করতো। এদিকে বিয়ের পর সারাজ রোজগারের জন্য বিদেশ যেতে ব্যাকুল হয়ে উঠে। তাছাড়া আতর আলীর ছেলে শাহীন মিয়াও (৩৪) মালদ্বীপে অবস্থান করছে। অবশেষে সারাজকে মালদ্বীপ পাঠানোর জন্য ছেলে শাহীনকে ভিসা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন পিতা আতর আলী। ভিসা প্রস্তুত হয়। কিন্তু টাকা জোগাড় হচ্ছিল না। কোন উপায়ে ৭০ হাজার টাকা জোগাড় করে সারাজ। বাকী টাকা কর্জ দিতে সারাজ আতর আলীকে অনুরোধ করে। তিনি এক লাখ টাকা সুদের মাধ্যমে আনেন। এর মধ্যেও আরো কিছু টাকা বাকী থাকে। কথা হয় এ টাকা বিদেশ গিয়ে শাহীনের কাছে পরিশোধ করার। আর রোজগারের মাধ্যমে সুদে আনা ১ লাখ টাকা দ্রুত ফেরত দেওয়ার।

সব ঠিকঠাক করে ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ সারাজ মিয়া মালদ্বীপ চলে যায়। প্রবাসে কিছু দিন রোজগার করার পর শাহীন মিয়া পাওনা টাকা চায় সারাজের কাছে। কিন্তু সে টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। বিষয়টি পিতা আতর আলীকে জানায় পুত্র শাহীন। একই সাথে সুদের টাকার জন্য আতর আলীকে চাপ দেয় পাওনাদার। মোবাইলে সারাজের কাছে সুদের মাধ্যমে  আনা টাকাগুলো দেওয়ার অনুরোধ করেন আতর আলী। কিন্তু এ অবস্থায় সারাজ নাটক তৈরী করে আত্মগোপনে চলে যায়। এরপর থেকে দেশে সারাজের স্ত্রী প্রচার করতে থাকে তার স্বামীকে বিদেশে পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া ইতালি নেয়ার জন্য আতর আলীর পরিবারকে মোটা অংকের টাকা দিয়েছেন।

পরে তিনি হবিগঞ্জ কোর্টে মামলা করেন। এ মামলায় ২৪ ফেব্রুয়ারি চুনারুঘাট থানা পুলিশ আতর আলীকে গ্রেফতার করে। বৃদ্ধ বয়সে অসুস্থ অবস্থায় জেলে থাকায় তার পরিবারের মাঝে অস্বস্তির ছায়া নেমেছে। এ খবর পেয়ে আতর আলীর ছেলে প্রবাসী কল্যাণ সংস্থার সহায়তা নিয়ে সারাজকে সেখানকার একটি কারখানা থেকে বের করে ভিডিও করেছে।

এ সময় সারাজ স্বীকার করে পাওনা টাকা পরিশোধ না করার জন্য সে নাটক সাজিয়েছে। সে মিমাংসা চায়। কিন্তু দেশে এ ব্যাপারে সারাজের পরিবারের সাথে কথা বললেও এপর্যন্ত কোন প্রকারের সুরাহা হয়নি। মেয়ে নাছিমা আক্তার মানবিক দিক বিবেচনায় এনে তার পিতা আতর আলীকে মুক্তি দেয়ার জন্য আইনের কাছে জোরালো দাবী জানিয়েছে।

সরেজমিন গেলে এলাকাবাসী জানান,আতর আলী সহজ সরল লোক। সাজানো মামলায় বৃদ্ধ বয়সে অসুস্থ অবস্থায় আতর আলী জেলবাস করছেন। এটা খুবই বেদনাদায়ক। দেশে থাকা অবস্থায় নিজে না খেয়ে সারাজকে তিনি খেতে দিতেন। বিদেশ গিয়ে সে এমনটা করবে, তারা ভাবতে পারেননি।

এ প্রসঙ্গে সারাজের স্ত্রী মোছাঃ আনোয়ারা খাতুন বলেন, আতর আলীর ছেলে শাহীন তার স্বামীকে বিদেশ নিয়ে কোন কাজ দিতে পারেনি। তার কোন খোঁজ খবর তিনি পাচ্ছেন না। এর আগে স্বামীকে ইতালি নেয়ার চুক্তিতে চার লাখ টাকা দিয়েছেন। কিন্তু শাহীন শর্ত রক্ষা করতে পারেনি।

মোতবিবর হোসেন কাজল /ইবি টাইমস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »