ভোলা প্রতিনিধি: নাম তার আলম মোর্শেদের । আছে একটি এক টাকার চায়ের দোকান। বর্তমানে নিত্য পন্যেরর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক এলাকায় এক কাপ চা বিক্রি হচ্ছে পাঁচ টাকারও বেশি। তবে ভোলার দৌলতখান উপজেলার চরপাতা ইউনিয়নের ‘মুজিব নগরে’ এক চা দোকানির চিত্রটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। আলম মোর্শেদ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ভালোবেসে ২০ বছর ধরে এক কাপ চা বিক্রি করছেন মাত্র এক টাকায়।
দৌলতখান উপজেলার চরপাতা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত মুজিবুল হক ফরাজীর ছেলে তিনি। এত কম দামে চা বিক্রির কারণে তাদের গ্রামটিও নতুন পরিচিতি পেয়েছে ‘মুজিবনগর’ নামে। আলম মোর্শেদ জানান, ব্যবসায় মুনাফা করা তার একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। তিনি শেখ মুজিবুর রহমানকে ভালোবেসে এক টাকায় চা বিক্রি করেন। তার চাওয়া গ্রামের খেটে খাওয়া স্বল্প আয়ের মানুষ সকাল-বিকেল একসঙ্গে বসে চা খেতে খেতে পরস্পরের খোঁজ খবর নেবেন এবং বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে আলাপ আলোচনা করবেন। এতে বঙ্গবন্ধুর প্রতি মানুষের সম্প্রীতি বাড়বে। আর এ কারণেই তার দোকানে সকাল-বিকেল শত শত লোক চা খেতে আসেন।
মুজিবনগরে এক টাকার চায়ের দোকানে গিয়ে দেখা যায়, পাকা রাস্তার এক পাশে ছোট দোকান। সামনে ছড়ানো-ছিঁটানো কয়েকটি বেঞ্চ। দোকানে কয়েকটি চায়ের ফ্লাস্ক ও মুদিপণ্য সাজানো। বেশ কয়েকজন লোক চা পান করছেন। সেখানে মো. আবুল কালাম আজাদ ও মো. নাইম নামে দুই তরুণ জানান, তাদের বাড়ি অন্য এলাকায় মুজিবনগরে এক টাকায় চা পাওয়া যায়, এ কথা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না । তাই স্বচক্ষে দেখতে এসেছেন।
দোকানে চা পান করছিলেন মুজিব নগরের স্থানীয় বাসিন্দা মো. হাছনাইন। তিনি বলেন, ‘২০ বছর ধরে আলম মোর্শেদের চা খাচ্ছি। বর্তমানে আলম মোর্শেদের দোকানে দৈনিক ৫০০ কাপ চা বিক্রি হয়।’ তিনি জানান, আলম মোর্শেদ সবাইকে কম দামে ভালো চা খাওয়ান। তার অছিলায় এখন সবাই আমাদের গ্রামকে “মুজিবনগর” নামে চেনে। এতে তারা খুশি।
আলম মোর্শেদ জানান, ২০ বছর ধরে তিনি বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে এ দোকানে ১ টাকায় চা বিক্রি করে আসছেন। তিনি বর্তমানে অনেক ধার-দেনা হয়ে নিজের চিকিৎসাও করাতে পারছেন না। তার এই ৬৭ বছর বয়সে বয়স্ক ভাতাও মেলেনি। এত কম দামে চা বিক্রি করে সংসার চলে কীভাবে, জানতে চাইলে আলম মোর্শেদ বলেন, ২০ বছর আগে ২০০০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে জাঁকজমক করে ব্যবসা শুরু করেছিলেন। তখন চিনির কেজি ছিল কম। ১ টাকায় চা বিক্রি করে প্রতি কাপে ভালো লাভ হতো। এখন চিনির ধাম বেড়ে গেছে চা পাতার দামও অনেক বেশি। এতে দিন দিন লোকসান গুণতে হয়। তাতেও তিনি এক টাকায় চা বিক্রি করবেন। স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারের কাছে তার একটাই দাবি, ওই এলাকার নাম যেন ‘মুজিব নগর’নামে লিখিতভাবে তাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
তার স্ত্রী, ৫ ছেলে ও ২ মেয়ে রয়েছে। এর মধ্যে দুই ছেলে শ্রমিকের কাজ করেন। বাকিরা পড়াশোনা করেন। তার স্ত্রী বলেন, ‘আমি স্বামীকে নিয়ে গর্ববোধ করি। তিনি পড়ালেখা করতে পারেননি, তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন। এতে তার দুঃখ নেই। কম লাভে চা বিক্রি করে স্বামী সৎভাবে ও সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করছেন। তাতে আমিও খুশি।’
চরপাতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হেলাল বলেন, ‘আলম মোর্শেদের মত লোক এ ইউনিয়নে বসবাস করছেন। এমনটা জেনে আমি গর্ববোধ করছি। নাম মাত্র চা বিক্রি করার মাধ্যমে গ্রামের মানুষকে একত্র করে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ রেখেছেন।’ তিনি জানান, আমাদের ভোলা-২ আসনের সাংসদ আলী আজম মুকুল তাকে ১ টাকা চা বিক্রি করায় নগদ অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন।
সাব্বির আলম বাবু /ইবি টাইমস