পটুয়াখালীতে কৃষকের বাড়ি যখন আদর্শ খামার

জেলা প্রতিনিধি,পটুয়াখালীঃ পটুয়াখালী জেলার দুমকি উপজেলা জামলা গ্রামের আনোয়ার মৃধা এবং রাজিয়া আক্তার দম্পতির বসতবাড়ি। বাড়ির উঠানে নানান পদের শাক সবজীর সমাহার। পাতার আড়াল থেকে উকি মারছে কাঁচা-পাকা লাল সবুজ টমেটো। পাশেই আছে বড় বড় সাইজের বেগুন। বাঁধা কপি এবং ফুল কপি’র ফলন উঠলেও বাড়ির উঠানে পাশের মাচায় আছে লাউ।

শাক সবজীর পাশপাশি বাড়ির উঠানের একপাশে লাগানো হয়েছে দুটি ড্রাগন, একটি মালটা একটি থাই পেয়ারা এবং বেশ কয়েকটি উন্নত জাতের আম গাছ। এখানেই শেষ নয়, আধুনিক পদ্বতি ব্যবহার করে বাড়ির পুকুরে চাষ হচ্ছে পাবদা,শিং,কই এর মত দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছ। আগে জাত চিহ্নিত না করে হাঁস মুরগী পালন করলেও এখন উন্নত জাতের হাসঁ মুরগী পালন করছেন তারা। এমনকি ঘরের বারান্দার বাইরে ছোট ছোট খুপরি ঘর তৈরী করে সেখানেই বিভিন্ন জাতের কবুতর পালন করা হচ্ছে।

এই গ্রামের অন্যসব পরিবারের থেকে আনোয়ার-রাজিয়া দম্পতির আয়ের উৎস গুলো একেবারেই ভিন্ন। নিজেদের সম্পদ গুলোকেই তারা সর্বোত্তম ব্যবহার করছেন। আর তাদের এই কাজে সহযোগীতা করছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনিস্টিটিউট এর সরেজমিন গবেষনা বিভাগ। সরকারের এই সংস্থাটি কৃষকদের আধুনিক চাষাবাদের প্রযুক্তি এবং বিভিন্ন উপাদান দিয়ে সহযোগীতা করছে। ফলে আনোয়ার- রাজিয়া দম্পতির মতো স্থানীয় বেশ কিছু পরিবার এখন নিজেরাই তাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় শাক,সবজী থেকে শুরু করে মাছ,মাংসের চাহিদা মিটিয়ে তা আবার স্থানীয় বাজারে বিক্রিও করছেন। এ কারনে আধুনিক কৃষি,মৎস্য,পশু-পাখি পালন সহ আধুনিক বাজার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে কৃষকদের ধারনা থাকায় প্রতিটি কৃষকের বাড়ি এখন এক একটি আদর্শ খামারে পরিনত হয়েছে।

কৃষি গবেষনা ইনিস্টিটিউট এর সরেজমিন গবেষনা বিভাগ এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ সহিদুল ইসলাম জানান, এই প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা কাউন্সিল এর আওতাধীন যতগুলো গবেষনা ইনিস্টিটিউট রয়েছে তাদের সকলের সর্বশেষ উদ্ভাবিত প্রযুক্তিটি কৃষকদের কাছে পৌছে দেয়া হচ্ছে। যেমন মৎস্য গবেষনা ইনিস্ট্রিটিউট উদ্ভাবিত মাছ এবং এর চাষাবাদ পদ্বতি, প্রাণী সম্পদ গবেষনা ইনিস্ট্রিটিউট থেকে হাসঁ, মুরগী, গরু-ছাগল পালন সম্পর্কে আধুনিক চাষাবাদ এবং উন্নত জাত সরবরাহ করা হচ্ছে। এর সাথে কৃষি গবেষণা ইনিস্ট্রিটিউট এর উদ্ভাবিত শাক সবজী থেকে শুরু করে বিভিন্ন ফলমূল চাষাবাদেও তাদের সহযোগীতা করা হচ্ছে।

এছাড়া কোন সময়ে কোন ফসলটি উৎপাদন করলে কৃষক বেশি লাভবান হবেন সে জন্য বাজার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কেও কৃষকদের প্রশিক্ষন দেয়া হয় বলে জানান এই কৃষি বিজ্ঞানী। প্রাথমিক ভাবে পটুয়াখালী জেলায় ১২ টি পরিবারকে বাছাই করে সমন্বিত বসতবাড়ির এই প্রযুক্তির সহায়তা দেয়া হচ্ছে। তবে পুরো জেলায় এই প্রযুক্তি সহায়তা পৌছে দিতে পারলে উপকূলের মানুষ উপকৃত হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ঠরা।

আব্দুস সালাম আরিফ/ইবি টাইমস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »