ইউরোপ ডেস্কঃ আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছেন, ডেনমার্ক সরকার সুইডিশ-ব্রিটিশ ওষুধ প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনার প্রতিষেধক ভ্যাকসিন মানুষের শরীরে প্রদান সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছেন।
দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভ্যাকসিন প্রদানের পর অনেক মানুষের শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনা সনাক্ত হওয়ার পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ডেনমার্ক আপাতত তাদের কাছে সঞ্চিত এই সুইডিশ- বৃটিশ প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন আর প্রদান করবে না বলে জানিয়েছেন।
এদিকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন গ্রহণের সাথে অস্ট্রিয়ায় নার্সের মৃত্যুর কোন সম্পর্কের কোন প্রমাণ পাওয়া যায় নি বলে জানিয়েছেন ইউরোপীয় মেডিসিন এজেন্সি EMA. বুধবার সন্ধ্যায়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের মেডিসিনস এজেন্সি (ইএমএ) ঘোষণা করেছে, এই পর্যন্ত তারা কোনও প্রমাণ পাননি যে,অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের গ্রহণের সাথে নার্সের মৃত্যুর কোন সম্পর্ক আছে।
অবশ্য অস্ট্রিয়ার NÖ রাজ্যের Zettel জেলার এক নার্স গত সপ্তাহে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন গ্রহণের ১০ দিন পর ভিয়েনার জেনারেল হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর কারণ হিসাবে রক্ত জমাট বাঁধা জনিত রোগের কথাই বলা হয়েছে।
এদিকে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহাগেন থেকে জানিয়েছেন, ডেনমার্ক কর্তৃপক্ষ আজ বৃহস্পতিবার সংবাদ মাধ্যমকে জানান,ডেনমার্কে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন প্রদানের পর দেহে রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনা সনাক্ত হওয়ার পর কর্তৃপক্ষ ডেনমার্কে অস্ট্রাজেনেকা অক্সফোর্ডের কোভিড -১৯ ভ্যাকসিন প্রদান সাময়িকভাবে স্থগিত ঘোষণা করেছেন।
রয়টার্স আরও জানান,ডেনমার্কে মোট কতজনের শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনা ঘটেছে সে সম্পর্কে সঠিক কিছু জানায়নি কর্তৃপক্ষ। তবে অস্ট্রিয়ায় অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন গ্রহণের পর একজন নার্সের রক্ত জমাট বাঁধার কারনে মৃত্যুবরণ এবং আরেক জনের ফুসফুসের প্রদাহ পালমোনারি এম্বোলোজমে আক্রান্ত হওয়ার পর অস্ট্রিয়ান কর্তৃপক্ষও যে হাসপাতালে এই ঘটনা ঘটেছিল, সেখানে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন প্রদানও সাময়িক স্থগিত রেখেছেন।
তাছাড়াও অস্ট্রিয়ান সংবাদ সংস্থার এপিএ জানিয়েছেন,নার্সের মৃত্যুর ঘটনার পর গত সপ্তাহে ভিয়েনায় ১,০০০ হাজার মানুষ ভ্যাকসিন গ্রহণের জন্য নাম নিবন্ধন করেও ভ্যাকসিন গ্রহণ করেন নি। রয়টার্স আরও জানান, এই পর্যন্ত ইউরোপের একাধিক দেশে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন প্রদানের পর সমস্যার কথা জানিয়েছেন।
“ডেনমার্ক স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের পরিচালক সোরেনে ব্রস্ট্রোম এক বিবৃতিতে বলেছেন,”আমরা এবং ডেনিশ মেডিসিন এজেন্সি উভয়েই ডেনমার্ক এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ থেকে সম্ভাব্য গুরুতর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার রিপোর্টের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কেও খোঁজখবর রাখছি।” স্বাস্থ্য সংস্থা আর জানিয়েছেন যে,এই ভ্যাকসিনটি ডেনমার্কে আগামী ১৪ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। তবে ডেনমার্কে কতজনের রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনা ঘটেছে সে সম্পর্কে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ তেমন কিছু বলেনি।
তবে বিশ্লেষকগণ বলছেন একাধিক ঘটনা ঘটার ফলেই দেশের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শেই এই স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে অ্যাস্ট্রাজেনেকা বলেছেন যে, তাদের ভ্যাকসিন কঠোর এবং কঠোর মান নিয়ন্ত্রণের সাপেক্ষে এবং “ভ্যাকসিনের সাথে কোনও গুরুতর বিরূপ ঘটনা জড়িত হয়নি”। অ্যাস্ট্রাজেনেকা কর্তৃপক্ষ আরও বলেছেন তারা অস্ট্রিয়ান কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেছেন এবং তাদের তদন্তকে পুরোপুরি সমর্থন করবেন।
অবশ্য ইউরোপীয় মেডিসিন এজেন্সি (ইএমএ) বুধবার জানিয়েছে, অস্ট্রিয়াতে দুটি মামলার সাথে অ্যাস্ট্রাজেনেকাকে এখন পর্যন্ত যুক্ত করার কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ইএমএ বলেন,যে রক্ত জমাট বাঁধার গঠনের দ্বারা চিহ্নিত থ্রোমোম্বোলোলিক ইভেন্টগুলির সংখ্যা – সাধারণ মানুষে এস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন প্রাপ্ত লোকের চেয়ে বেশী নয়,এই পর্যন্ত বিশ্বে ৩ মিলিয়ন লোকের মধ্যে ২২ টি ঘটনার ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে ৯ই মার্চ পর্যন্ত।
ডেনিশ মেডিসিন এজেন্সি বলেছে যে অন্যান্য ইইউ-দেশসমূহের সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও ইএমএর সাথে তারাও এই ভ্যাকসিনটির প্রদানের পর রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। বাংলাদেশে বর্তমান ভারতে প্রস্তুত অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন পুরোদমে প্রদান চলছে। তবে তেমন বড় ধরনের কোন সমস্যার কথা না জানা গেলেও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ভ্যাকসিন বা টিকা গ্রহণের পরও করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কথা বলা হয়েছে।
বাংলাদেশের কিশোরগজ্ঞ জেলার ভৈরব উপজেলার একটি স্থানীয় সংবাদ পত্র জানিয়েছেন যে,ভ্যাকসিন গ্রহণের পরও এই উপজেলায় একাধিক ব্যক্তি করোনায় আক্রান্তের ঘটনা ঘটেছে।
সংক্রমণ রোগ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন কোন ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী তাদের আবিষ্কৃত ভ্যাকসিনের ১০০%(শতভাগ) নিশ্চিয়তা দেয় নি। মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষের মধ্যে এই রকম কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটতেই পারে। তবে বিশেষজ্ঞরা আরও জানিয়েছেন, ভ্যাকসিন গ্রহণের পরও গ্রহণকারীর করোনার সাধারণ বিধিনিষেধ যেমন মাস্ক ও সামাজিক দূরত্ব ইত্যাদি যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে।
কবির আহমেদ /ইবি টাইমস